
সংবাদদাতা-বাপ্পা মণ্ডল ছবি-বাপন ঘোষ
Published on: আগ ১১, ২০১৮ @ ২৩:০৫
এসপিটি নিউজ, কেশপুর, ১১ আগস্টঃ দেরীতে হলেও ঘুম ভাঙল প্রশাসনের। ১১১বছর পর শহীদ ক্ষুদিরাম বসুর জন্মস্থান কেশপুরের মোহবনীতে তাঁর ব্যবহৃত সামগ্রী ও তাঁকে নিয়ে গবেষণামূলক তথ্য সহযোগে একটি সংগ্রহশালা ও তাঁর নামাঙ্কিত একটি ব্যায়ামাগার গড়ে তোলার কথা জানাল মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন।শনিবার এখানে শহীদ ক্ষুদিরাম বসু স্মৃতি রক্ষা কমিটির উদ্যোগে পালিত হল আত্মবলিদান দিবস।
এদিন সকালে সমিতির সভাপতি চিত্তরঞ্জন গরাই ও সম্পাদক রামচন্দ্র সানির নেতৃত্বে সহস্রাধিক ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষিকা, সদস্য-সদস্যা ও গ্রামবাসীদের উপস্থিতিতে একটি বর্ণাঢ্য প্রভাতফেরী এলাকা পরিক্রমা করে। প্রভাত ফেরী শেষে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন সমিতির সম্পাদক রামচন্দ্র সানি।এরপর সমিতির সভাপতি চিত্তরঞ্জন গরাইয়ের সভাপতিত্বে মূল অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।
ক্ষুদিরাম বসুর মর্মর মূর্তিতে মাল্যদান করেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক পি মোহন গান্ধী, পুলিশ সুপার আলোক রাজোরিয়া, মেদিনীপুর সদরের মহকুমা শাসক দীননারায়ণ ঘোষ, কেশপুরের বিডিও সৌরভ মজুমদার, বিধায়ক শিউলি সাহা, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শুভ্রা দে সেনগুপ্ত, সমাজসেবী সঞ্জয় পান সহ অন্যান্য বিশিষ্ট জনেরা। স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের সহ-সভাপতি অজিত মাইতি, জেলা পরিষদ সদস্য রমাপ্রসাদ গিরি, অধ্যাপক জাহির চৌধুরী, প্রধান শিক্ষক নারায়ণ প্রসাদ চৌধুরী প্রমুখ।এদিনের অনুষ্ঠানে বাচিক শিল্পী অর্ণব বেরা ও সঙ্গীত শিল্পী উদয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা অনুষ্ঠানে ভিন্নমাত্রা যোগ করে।
জেলাশাসক পি মোহন গান্ধী ঘোষণা করেন- মোহবনীতে শহীদ ক্ষুদিরাম বসুর ব্যবহৃত সামগ্রী ও তাঁকে নিয়ে গবেষণামূলক নানা তথ্য সহযোগে একটি ক্ষুদিরাম বিষয়ক সংগ্রহশালা গড়ে তোলা হবে। জেলার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া মোহবনীতে “অনুশীলন”নামে একটি ব্যায়ামাগার গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন। জেলা শাসক ও পুলিশ সুপারের ঘোষণাকে প্রবল হর্ষধ্বনি ও বিপুল করতালিতে স্বাগত জানায় উপস্থিত জনতা।সমিতির সম্পাদক রামচন্দ্র সানি জানান, তাঁরা চান সবার সহযোগিতায় মোহবনির আমূল সংস্কার হোক এবং গোটা দেশের সামনে মোহবনীকে একটি শহীদ পীঠস্থান হিসেবে গড়ে তোলা হোক।
তিন কন্যার পর ক্ষুদিরাম ছিলেন মা লক্ষ্মীপ্রিয়াদেবীর চতুর্থ সন্তান।তার আগেই দুই পুত্রের মৃত্যু হয়েছিল। অপর পুত্র ক্ষুদিরামের মৃত্যুর আশঙ্কায় তখনকার সমাজের নিয়ম অনুযায়ী তিন মুঠি খুদের বিনিময়ে ছেলেকে বড় বোনের কাছে বিক্রি করে দেন মা। খুদের বিনিময়ে কেনা হয়েছিল বলে তাঁর নাম রাখা হয়েছিল ক্ষুদিরাম। ১৯০২-০৩ সালে মেদিনীপুরে ঋষি অরবিন্দ ও সিস্টার নিবেদিতা এলে তাদের বক্তৃতায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন ক্ষুদিরাম। শিক্ষক সত্যেন্দ্রনাথ বসুর কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়ার পাশাপাশি শ্রীমদ্ভাগবদগীতা পাঠ করে ব্রিটিশ উপনিবেশের বিরুদ্ধে বিপ্লব আন্দোলনে যোগ দিতে অনুপ্রাণিত হন।
১৯০৮ সালের ৩০শে এপ্রিল মজফরপুরে ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনে রাত সাড়ে আটটায় বোমা ছুড়ে তিনজনকে হত্যা করেন। এরপর ২১শে মে যা আলিপুর বোমা মামলা নামে পরিচিতি লাভ করে। শুরু হয় বিচার। বিচারক ছিলেন ব্রিটিশ কর্নডফ এবং দুই ভারতীয় লাথুনিপ্রসাদ ও জানকিপ্রসাদ। রায় শোনার পর ক্ষুদিরামের মুখে হাসি দেখা গিয়েছিল। বিচারক কর্নডফ তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন-মরতে হবে সেটা সে বুঝতে পেরেছে? ফের হাসেন ক্ষুদিরাম। তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় ভোর ছ’টায়। ক্ষুদিরামকে নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম কবিতার পাশাপাশি অনেক গানও লিখেছিলেন। তার মধ্যে একটি গান তো জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছে-একবার বিদায় দে মা…।
Published on: আগ ১১, ২০১৮ @ ২৩:০৫