সংবাদদাতাঃ রোকসানা ইয়াসমিন
Published on: আগ ২৫, ২০১৮ @ ২০:২৭
এসপিটি নিউজ, ঢাকা, ২৫ আগস্ট : মোবাইল ফোন যেমন কাজে গতি এনেছে ঠিক তেমনই এই ফোন শিশুদের শৈশব ছিনিয়ে নিয়েছে। আজকের শিশুরা খোলা আকাশের নীচে খেলাধুলোর চেয়ে ঘরের ভিতরে মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে গেম খেলতে বেশি পছন্দ করে।যার ফলে তাদের একদিকে যেমন চোখের ক্ষতি হচ্ছে ঠিক তেমনই ব্রেনের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে শারীরিক ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। এর কু-প্রভাবে প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। যেমনটা হয়েছে পুরনো ঢাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলামের পাঁচ বছরের শিশু কন্যা জারার জীবনে। আজ তার চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে এসেছে।চিকিৎসক তাকে সারাক্ষণ চোখে চশমা পড়ে থাকতে বলেছেন।
উদ্বিগ্ন জারার মা ঝর্না বেগম মেয়ের কথা বলতে গিয়ে কেঁদেই ফেলেন। বলেন,”দুই-আড়াই বছর বয়স থেকেই জারা মোবাইল ফোনে গেম খেলে। গত কয়েকদিন আগে মেয়ে আমাকে জানায় যে, সে ঠিকমত টিভি দেখতে পারে না, অস্পষ্ট দেখে। সেই সময় ওর চোখের নীচে কালো দাগও আমরা লক্ষ্য করি।”চোখের ডাক্তারকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, মোবাইলের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের কারণেই ওর চোখের এই অবস্থা হয়েছে।চিকিৎসক তো সাফ জানিয়েই দিয়েছেন, “নিয়মিত চশমা ব্যবহার না করলে জারার চোখের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।”
সম্প্রতি ভারতের চার্টার বিশ্ববিদ্যালয় তাদের একটি গবেষণায় দেখিয়েছে, স্মার্ট ফোনের অধিক ব্যবহার চোখের রেটিনা,কর্নিয়া এবং অন্যান্য অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
১৬ বছর বয়সী মেহেদি প্রাঞ্জলের বাবা আব্দুল বারাকের প্রায় একই সমস্যা।তিনিও ভুক্তভোগী ছেলেকে নিয়ে। তাঁর কথায়, ”সম্প্রতি আমি লক্ষ্য করলাম, আমার ছেলে আমার মানি ব্যাগ থেকে টাকা চুরি করা শুরু করেছে। কারণ, এবার এসএসসি ফেল করার কারণে আমি ওকে হাত খরচ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।” এরপরই তাঁর স্বীকারোক্তি, “সব আমার দোষ, আমি কেন যে ওকে ফোন কিনে দিলাম,” হাহাকার করে ওঠেন বারাক।তিনি জানান, মেহেদি যখন অস্টম শ্রেণিতে পড়ে, তখন তিনি ওকে ফোন কিনে দেন।ছেলে সারাক্ষণ ফোন নিয়ে থাকতেই পছন্দ করে। কারও সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলে না। ফোন কেড়ে নিলে প্রচন্ড ক্ষেপে যায়।
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, ফোন আমাদের জন্য অনেক কিছু সহজ করে দিয়েছে। এনেছে কাযে গতিও। পাশাপাশি এই মোবাইল ফোনের কারণে আবার একাধিক সমস্যাো তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে ১৩ কোটি মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। কারণ, বতর্মান সরকার দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
লিটেল জুয়েল স্কুলের শিক্ষিকা সাইদা ইয়াসমিন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, “মাঝে মাঝে কিছু শিশু স্কুলে ফোন নিয়ে আসে। এমনকি শিক্ষকদের উপস্থিতিতে তারা ক্লাসে ফোন ব্যবহার করে।ক্লাসে তাদের মন বসেনা, বাড়ির কাজ করে না যার প্রভাব পড়ে তাদের পরীক্ষার রেজাল্টের ওপর।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক উম্মে কাওসার বলেন, “সবচেয়ে খারাপ দিক হল তারা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। তারা ফোনে মেসেজ, নোটিফিকেশন চেক করতেই ব্যস্ত থাকে। ফোন তাদের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিলে তারা ক্ষেপে যায়।”
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ এ এসএম মাহমুদুজ্জান বলেন, “আজকের শিশুরা রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি ঘেরা এক পরিবেশের মধ্যে বড় হচ্ছে, ফোন থেকে যে রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি নির্গত হয় তা তাদের জন্য ভয়ংকর পরিণতি নিয়ে আসতে পারে।
যে সমস্ত শিশুরা ফোন ব্যবহার করে তারা অপেক্ষাকৃত অনিদ্রা এবং অস্থিরতায় ভুগে থাকে।তবে তিনি কিছু পরামর্শ দিয়েছেন, যার মাধ্যমে শিশুদের উপর ফোনের কু-প্রভাব কমে যাবে। সেগুলি হল, কথা বলার সময় এয়ারফোন ব্যবহার করা, শিশুদের স্কুলে ফোন নিয়ে যাওয়ার অনুমতি না দেওয়া, শোয়ার ঘরে ফোন নিতে না দেওয়া এবং শিশুদের সাথে মোবাইলের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে কাউন্সেলিং করা।অবশ্যই বাবা-মা-কে তাঁর শিশুর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা ভেবে মোবাইল ফোন থেকে দূরে রাখা। তবেই হতে পারে এর সমাধান।
Published on: আগ ২৫, ২০১৮ @ ২০:২৭
হতে পারে এর সমাধান।