মহাবলীপুরমঃ প্রধানমন্ত্রী মোদির পর্যটন ভাবনাকে কুর্নিশ টাফির-ভারতের পর্যটন আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছতে চলেছে

Main অর্থ ও বাণিজ্য এসপিটি এক্সক্লুসিভ দেশ ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

  • তিন মাস আগে জুলাই মাসে মহাবলীপুরমে সংগঠনের বৈঠক সেরেছিল টাফি-ও।
  • বিদেশে যে পর্যটনের কাজটা হয় তাতে জিডিপি-র বেশিরভাগটাই আসে পর্যটন ব্যবসা থেকে ন্যূনতম ১০-১৫ শতাংশ।  
  • “আমাদের দেশে মহাবলীপুরমের মতো ১০০টা স্পট আছে। যেগুলো এখনও সামনে আসেনি।”

 Published on: অক্টো ১৩, ২০১৯ @ ২৩:১০

Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ১৩ অক্টোবর:  আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতকে শীর্ষে তুলে ধরতে একের পর এক প্রয়াস নিয়ে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দেশের ৭০ বছরের স্বাধীনতার ইতিহাসে যা বিরল ঘটনা আর ইতিহাস হয়ে চলেছে। এর আগে যা কোনও প্রধানমন্ত্রী করে দেখাতে পারেনি সেটাই করে চলেছেন তিনি। কখনও আরব আমিরশাহী কখনও আমেরিকা আবার কখনওবা চিন। সকলের কাছেই ভারতকে একটা জায়গায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। সম্প্রতি তিনি দেশের পর্যটনের প্রসারে বলা যেতে পারে ভারতের পর্যটনকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে এক নজিরবিহীন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তামিলনাড়ুর প্রত্যন্ত এক ঐতিহাসিক প্রাচীন পুরাতাত্বিক স্থান মহাবলীপুরমকে বিশ্ব পর্যটনের সামনে তুলে ধরতে সেখানেই আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন চিনে রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংকে। দেশের সবচেয়ে বড় ভ্রমণ প্রতিনিধিদের সংগঠন ট্রাভেল এজেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া বা টাফি প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে। ভারতের পর্যটন এখন আন্তর্জাতিক স্তরে উন্নীত হতে চলেছে।এমনটাই জানিয়েছেন টাফির অন্যতম কর্তা পূর্বাঞ্চলের চেয়ারম্যান অনিল পাঞ্জাবি।

টাফি-ও মহাবলীপুরমকে তুলে ধরতে চেয়েছে

এখন মহাবলীপুরমকে বিশ্ব পর্যটন মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার যে উদ্যোগ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি নিলেন যেভাবে তিনি চিনের রাষ্ট্রপতির শি জিনপিঙের সঙ্গে এখানে বৈঠকের আয়োজন করলেন তা নিয়ে দেশের সকল স্তরে তো বটেই বিদেশেও চর্চা শুরু হয়ে গেছে। ভারতের এক একটি রাজ্যে যেরকম সৌন্দর্য রয়েছে তা এতদিন চাপা পড়েছিল। প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন যে দেশের প্রতিটি রাজ্যের প্রতিটি জেলাতেই আন্তর্জাতিক স্তরের বৈঠক হওয়ার ব্যবস্থা আছে। এতদিন না হলেও এখন থেকে সেটা হবে। শুধু রাজধানী দিল্লি নয় অন্যান্য রাজ্যেও এ ধরনের বৈঠক সম্ভব। আর প্রধানমন্ত্রীর এমন চিন্তাভাবনাকে টাফি সাধুবাদ জানিয়েছে। মাস তিনেক আগে জুলাই মাসে তারাও এই মহাবলীপুরমে তাদের সর্বভারতীয় সংগঠনের বৈঠক সেরেছেন। যেখানে হাজির ছিলেন টাফির পূর্বাঞ্চলের চেয়ারম্যান অনিল পাঞ্জাবিও। তিনি এ বিষয়ে টাফির মতামত ব্যক্ত করেছেন।

এমন সুন্দর স্থান দেখে অবাক হয়ে গেছিলেন সেদিন

  • তিনি বলেন- “এ বছর জুলাই মাসে ট্রাভেল এজেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া (টাফি) আমাদের যে সর্বভারতীয় সংগঠন আছে তাদের প্রতি বছরে দু’মাস অন্তর একটি করে মিটিং হয়। অনেক জায়গাতেই হয়। আন্তর্জাতিক, দেশীয় স্তরে। এবার আমাদের একজন প্রতিনিধি চেন্নাইয়ের কমিটির সদস্য বলেছিলেন যে এবার মহাবলীপুরমে মিটিং হোক। কারণ, পর্যটনের জন্য জায়গাটি খুব ভালো। এটা প্রমোট করা যাবে। ওখানে হোটেল থেকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে আমাদের- যে এখানে এসে মিটিং করুন। আমি যখন নাম শুনলাম, তখন ভাবলাম- এমন নাম তো কোনোদিন শুনিনি দেখিনি। আর আমারা তো মূলত আন্তর্জাতিক স্তরে ভ্রমণ নিয়েই ব্যস্ত থাকি। তা ভাবলাম একবার যাই- দেখে আসি জায়গাটি। তা সেই মতো আমি উড়ানে কলকাতা থেকে সোজা চেন্নাই উড়ে যাই। সেখান থেকে সড়ক পথে সোজা মহাবলীপুরম।”
  • “ওখানে গিয়ে দেখে তো অবাক হয়ে গেছি। বুঝতেই পারিনি যে আমি ভারতবর্ষে আছি। এত সুন্দর, এত ভালো জায়গা। আমি এই ব্যবসায় বিগত ৩০ বছর ধরে যুক্ত আছি। ভারতে এত সুন্দর জায়গা হতে পারে অবাক হয়ে গেছি। এককথায় খুব ভালো জায়গা। স্বচ্ছ সৈকত। রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। খাবার কত সস্তা।পুষ্টিকর। মানুষ কত হাসিখুশি। অসাধারণ জায়গা। ওখানে সৈকতে একটা হোটেল আছে। বিয়ে হচ্ছে, কনফারেন্স হচ্ছে। পর্যটক আসছে।” এক নিঃশ্বাসে বলে চলেন টাফির কর্তা অনিল পাঞ্জাবি।

কেন যাবে মহাবলীপুরম বেড়াতে

“খরচা অনেক কম। মানুষ বিদেশে যায় কত টাকা খরচ করে। সেখানে কত কম টাকায় এত সুন্দর জায়গা- না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। অসাধারণ জায়গা। পর্যটনের জন্য একেবারে আদর্শ স্থান। হোটেলের ঘরগুলো কত ভালো। একেবারে আন্তর্জাতিক মানের। আমাদের সংগঠনের সভাপতি, সম্পাদক সকলেই ছিলেন। গোটা ভারত থেকে সব কটি চ্যাপ্টার থেকেই এসেছিল। সব মিলিয়ে আমাদের ২০-২২জন ছিল। ওখানে ভিস্তারা বিমান সংস্থা গেছিল। আমাদের একটা প্রেজেন্টেশন দিয়েছিল।ওখানের একটি বড় হোটেলের জিএম সৈকতে আমাদের নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন। কি অসাধারণ সৈকত।”

সৈকতে যোগার ক্লাসে যোগ দিলাম

“সকালে আমি উঠেছি। সৈকতে গেলাম। দেখলাম, সেখানে যোগা হচ্ছে। আমি হোটেলে বললাম যে আমি যোগা করতে চাই। আমাকে বলা হল- আপনি ওদের সঙ্গে যোগ দিন। করুন যোগা। সমুদ্র সৈকতে যোগা চলছে। সুন্দর সৈকত। শুদ্ধ বাতাস বইছে। অসাধারণ আবহাওয়া। পরিবেশকে যেন আরও মনোরম করে তুলেছে। আমি তো বললাম যে আমি এসে তো ঠিক করলাম, আমি এটা বিক্রি করব। ওখানে একটা অসাধারণ পাথর আছে। যা পর্যটকদের দেখার মতো। অর্ধেক দিন তো আমি সাইট সিন করেই কাটিয়েছি। আমি তো দেখেছি। মানুষ যাচ্ছে। আমাদের যে পেশা তাতে খুব খারাপ লাগছে যে আমি আন্তর্জাতিক পর্যটন ব্যবসা করছি।আমার দেশে এত ভালো ভালো জায়গা আছে, কেন প্রমোট করা হচ্ছে না।” আফশোসের সুর অনিল পাঞ্জাবির গলায় ধরা পড়ল।

বিদেশে যেভাবে পর্যটন ব্যবসা এগিয়েছে

কিভাবে বিদেশে পর্যটন ব্যবসা এগিয়ে চলেছে তা তুলে ধরে টাফির কর্তা অনিল পাঞ্জাবি বলেন-“বাইরে যে পর্যটনের কাজটা হয় তাতে জিডিপি-র বেশিরভাগটাই আসে পর্যটন ব্যবসা থেকে ন্যূনতম ১০-১৫ শতাংশ। বড় শিল্প ওখানে। কারণ, ওখানে এই ব্যবসা বাড়ছে। কি না, পিপিটি মডেল চলছে। আমি একবার ভুটান গেছি, দেখছি সরকার এবং প্রাইভেট সংস্থা একটা স্টেজ ডায়াসে বসে আমাদের এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলছে- কি চাই। সবটাই খোলাখুলি হচ্ছে। ও জানে এটা আমার ব্যবসা। সরকার আছে কিন্তু পুরোটাই করছে প্রাইভেট সংস্থাগুলি।সরকার নিজে কাজ করতে পারবে না। তাদের কাজ করতে দিতে হবে। কি সাপোর্ট চাই- আমি আছি, আপনার সঙ্গে। আমাদের বাংলার সরকার পুরো সাপোর্ট করছে। কিন্তু নিজে হাতে সব নিয়ে রেখে দিয়েছে।”

“রেলও এখন কিন্তু বেসরকারিকরণের পথে যেতে বসেছে। আপনি দেখবেন যে মুহূর্তে বেসরকারি হাতে যাবে সেই মুহূর্ত থেকে তার সমস্ত কিছু অনেকটাই বেড়ে যাবে। ভালো হবে। পরিষেবা থেকে সব কিছু আরও উন্নত হবে। কত চাকরি পাবে, শিল্প-ব্যবসার প্রসার ঘটবে। কত লোক কাজ পাবে।”

এরকম স্পটকে সামনে আনতে পারলে পর্যটনের প্রসার হবে

“আমাদের দেশে মহাবলীপুরমের মতো ১০০টা স্পট আছে। যেগুলো এখনও সামনে আসেনি। যে সরকার সক্রিয় আছে তারা এটা করছে। আমি নিশ্চিত যে আমাদের লাভ হবে, অর্থনীতি বাড়বে, পর্যটক আসবে। ব্যবসা বাড়বে। একটা জিনিস কত গুলি রাস্তা বেরোবে। এটা একদম ঠিক পথে এগোচ্ছে। যে সেক্টরটা ভারতীয় পর্যটনের স্তরে আছে আমি দেখতে পাচ্ছে সেটা এবার আন্তর্জাতিক স্তরে উন্নীত হতে চলেছে।” বলেন অনিল পাঞ্জাবি।

“আমাদের যে পর্যটনের দরকার আছে সুরক্ষা, নিরাপত্তা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং পর্যটকদের জন্য সততা। একজন অতিথি আমাদের দেশে আসছে সুতরাং তার সমস্ত দায়িত্ব আমার। এর সঙ্গে দেশের সম্মান জড়িয়ে আছে।”

বাংলাকে যেটা করতে হবে

“তামিলনাড়ু ভারতের মধ্যে খুব শৃঙ্খলাপরায়ণ রাজ্য হয়ে আছে। বাংলাও খুব ভালো। আমাদের এখানকার মানুষজনও কত উদার। কত বন্ধুত্বপরায়ন আছে। শুধু লেগে থাকা দরকার। সরকার তো সব করতে পারবে না। আমাদের পরিকাঠামোকে আরও বাড়াতে হবে। আমাদের বাসের সংখ্যা করতে হবে। আমাদের পারিবারিক দিকটাকে বাড়াতে হবে। আমি চাইছি বাইরের থেকে কলকাতাকে এগিয়ে নিয়ে যাব। দেখিয়ে দি। প্রত্যেক রাজ্য, প্রত্যেক দেশে গিয়ে দেখে আসুক। আমি তো দেখে আসি। এটা তো ব্যবসা।এসে তোমাকে দেখতে হবে যে বাংলায় কি আছে। এসে আমার সঙ্গে একটা মৌ সাক্ষর করতে হবে।এর একটা ব্যবসা শুরু করতে হবে। আমার তো চাই নেটওয়ার্ক।”

পিপিটি মডেল কার্যকর হলেই বাড়বে পর্যটনের প্রসার

  • বাংলা এখন আগের চেয়ে অনেক চেয়ে অনেক এগিয়েছে, তবে সবচেয়ে জরুরী হল এখানে পিপিটি মডেল কার্যকর করা। আমরা পিছনে আছি। আপনার কি দরকার। আপনি ঘুরে এসছেন বাইরে একটু আইডিয়া নিয়ে আসুন।আর সেটাকে কার্যকর করুন।দশটা কাজ করলে পাঁচ-ছটা ঠিক যাবে। ট্যুরিজম নিয়ে আসো, এজেন্ট নিয়ে আসো। দেখিয়ে আসো। আমার বেঙ্গল লজে থাকো। প্রাইভেট দিয়ে বিজনেস করবে। আর দেখাতে হবে লোকের সামনে। গিয়ে নিজের স্টেজে বিক্রি করতে হবে।”
  • “গুজরাটে স্ট্যাচু অব ইউনিটি উদ্বোধনের সময় এখান থেকে কত ট্রাভেল এজেন্টকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। প্লেনে করে নিয়ে যাওয়া এবং তাদের পৌঁছে দেওয়া। সেখানে উন্নত্মানের হোটেলে রেখে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা। সবটাই গুজরাট পর্যটন দফতর করেছিল। কারণ তারা জানে যে এর একটা রিটার্ন আমি পাব। ঠিক তেমনই আমাদের এখানেও এমনটা করতে হবে। আমি নভেম্বর ডিসেম্ব মাসে কাশ্মীর যাব এখান থেকে একটা ডেলিগেট টিম নিয়ে। সেখানে গিয়ে কথা বলব কাশ্মীরের ট্রাভেল এজেন্টদের সঙ্গে। তাদেরও এখানে ডাকব। আমন্ত্রণ জানাব। একটা সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। তবেই তো শুরু হবে ব্যবসা।”
  • “আমি এই ট্র্যাকেই যাচ্ছি। সরকার ভালো আছে। মানুষজন ভালো। এখানে জীবনযাপন কম-বেশি সকলেরই নাগালের মধ্যে। খাবার ভালো। সুরক্ষিত আছে। আপনি ভাবতে পারবেন না গোটা ভারতে কলকাতা সবচেয়ে কম দামে হোটেল পাওয়া যায়।”বলেন অনিল পাঞ্জাবি।

Published on: অক্টো ১৩, ২০১৯ @ ২৩:১০

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 6 = 2