‘বিরল গ্রাম’ লালবাজার: যেখানে শিশু্রাই রোজগার করে চালায় সংসার

Main এসপিটি এক্সক্লুসিভ দেশ ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

  • পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়গ্রাম জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম লালবাজার।
  • শবর পরিবারের 18 জন শিশু তুলে নিয়েছে সংসারের দায়িত্ব।
  • ঘরে বসেই কাঠের গুঁড়ি দিয়ে শিশুরা তৈরি করছে অসাধারণ সব মূর্তি।
  • শিশুরা পড়াশুনো করছে আবার রোজগারও করছে।
 Published on: সেপ্টে ২২, ২০২০ @ ১৬:২৫
Reporter: Biswajit Pande

এসপিটি নিউজ, ঝাড়গ্রাম, ২২ সেপ্টেম্বর:   আমাদের চারপাশে কত কিছুই না ঘটে চলেছে।তার কতটুকি বা আমরা খোঁজ রাখি বলতে পারেন? কত বিরল ঘটনা ঘটে চলেছে। কত অসম্ভবকেই সম্ভব করে চলেছে মানুষ, তা সত্যিই অবাক করে দেওয়ার মতো। এই যেমন পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়গ্রাম জেলার প্রত্যন্ত একটি গ্রাম লালবাজার। কলকাতার লালবাজারের সঙ্গে মিল আছে নামের। কিন্তু সেখানে পুলিশের কার্যালয়। আর এই লালবাজার কিন্তু অত্যন্ত শান্ত-নিরিবিলি-প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যময় এক স্থান। যেখানে শিশুরাই হল প্রধান চরিত্র। তারাই সব। তাদের চিন্তাধারা তাদের চেষ্টা তাদের পরিশ্রম আজ গোটা গ্রামকে দিয়েছে এক বিশেষ পরিচয়। যেখানে এই শিশুদের রোজগারের টাকাতেই চলে গ্রামের পরিবারগুলির সংসার। পর্যটকরাও বিরল এই গ্রামের আতিথেয়তায় মুগ্ধ।

আসুন জেনে নি, কথায় অবস্থিত এই বিরল গ্রামটি। শিশুরা কিভাবেই বা রোজগার করে চালাচ্ছে সংসার। এর পিছনে কি কারণ রয়েছে। এসব কিছুই জেনে নেওয়া যাক।

আর কাঠ কুড়োতে হয় না, শিশুরাই তুলে নিয়েছে সংসারের দায়িত্ব

পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়গ্রাম জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম লালবাজার। গ্রামে মূলত লোধা-শবর পরিবারের বাস।এক সময় যারা জঙ্গলে কাঠ কুড়িয়ে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাতেন। তাদের এখন আর জঙ্গলে যেতে হয় না। কারণ, তাদের পরিবারের 18 জন শিশু তুলে নিয়েছে সংসারের দায়িত্ব। বেছে নিয়েছে রোজগারের অভিনব পথ। সেই পথই আজ গ্রামের 14টি লোধা-শবর পরিবারকে দেখিয়েছে নতুন করে ভালোভাবে বাঁচার আলো।

কিভাবে রোজগার করছে এইসব শিশুরা

গ্রামের ছোট-ছোট ছেলেরা ঘরে বসেই কাঠের গুঁড়ি ও গাছের গুড়ি দিয়ে তৈরি করছে অসাধারণ সব মূর্তি। সেইসব মনীষী যাঁরা সকলেই আমাদের সকলের কাছে আজও প্রণম্য- যাঁদের মধ্যে আছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্যাসাগর, কাজী নজরুল ইসলাম, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধী সহ আরও অনেকে। গ্রামের শিশুরা আজ সেই সব মনীষীদের মূর্তি কাঠের গুঁড়ির উপর অসামায় শিল্পকলার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলছে। এরপর সেই সব মূর্তি ঝাড়গ্রাম সহ বিভিন্ন এলাকার বাজারে বিক্রি হচ্ছে। আর এভাবেই শিশুরা করছে রোজগার। আজ আর তাই পরিবারের বড়দের জঙ্গলে কাঠ কাটতে যেতে হয় না। শিশুরা পড়াশুনো করছে আবার রোজগারও করছে। সেই সঙ্গে চালাচ্ছে সংসারও।

গ্রামকে সুন্দর রাখতে শিশুরা হাতে তুলে নিয়েছে রং-তুলি

তবে শুধু মূর্তি বানিয়েই থেমে থাকেনি লোধা-শরিবারের শিশুরা। গ্রামকে পরিচ্ছন্ন রাখতে সুন্দর করে তুলতে দৃষ্টিনন্দন করে তুলতেও প্রয়াসী হয়েছে তারা। আর তাই তারা হাতে তুলে নিয়েছে রং-তুলিও।গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে সুন্দর করে নকশা করে তারা নানা ধরনের ছবি এঁকেছে। যা দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে।গোটা গ্রামের শোভাই আজ বদলে গিয়েছে শিশুদের হাতের ছোঁয়ায়। শিশুরা সংবাদ প্রভাকর টাইমস-কে জানিয়েছে- “কাজ করতে আমাদের খুব ভালো লাগছে আমরা এভাবেই হাতের কাজ করছি।”

শিশুদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষন দিয়েছেন এক শিক্ষক

তাদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য একজন শিক্ষক রয়েছেন। তিনি সর্বদা এই শিশুদের পাশে রয়েছেন।তিনি হাতে-কলমে কাজ করার সমস্ত কিছু পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছেন। তবে শিখিয়ে দিয়েই দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলেননি। এখনও ওই শিক্ষক প্রতি সপ্তাহে চার দিন গ্রামে গিয়ে তাদের পাশে থেকে কিভাবে তারা কাজ করছে তা খতিয়ে দেখছেন। পর্যবেক্ষন করছেন।

পর্যটকরাও অভিভূত বিরল এই গ্রামের শিশুদের এমন ভূমিকা দেখে

শবর পরিবারগুলির শিশুদের হাতের কাজ দেখি খুশি ওই গ্রামে বেড়াতে যাওয়া প্রতিটি মানুষ।শবর সম্প্রদায়ের বাস এই লালবাজার গ্রামে। সেই গ্রাম আজ শিশুরা এত সুন্দরভাবে সাজিয়ে তুলেছে যা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছেন পর্যটকরা।লালবাজার গ্রামের নাম এখন ঝাড়গ্রাম ছাড়িয়ে কলকাতা পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছ, আজ বহু মানুষ এই গ্রাম দেখতে আসছে, যারা গ্রামের পরিবারগুলির আতিথেয়তায় মুগ্ধ।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

32 − = 30