ইবতিসাম রহমান
Published on: আগ ১৫, ২০১৮ @ ১৭:০৪
এসপিটি নিউজ, ঢাকা, ১৫ আগস্ট: স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বুধবার ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সামনে শোকার্ত মানুষের ঢল নামে।
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভোর থেকেই আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক,সামাজিক,সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এবং সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনের রাস্তায় জমায়েত হতে থাকে।
সকালে ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি।জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে বুধবার সকাল সাড়ে ৬টায় ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পরে সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। দলের সভাপতি হিসেবেও শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এ সময় মন্ত্রিসভার সদস্যসহ ১৪ দলের অন্যান্য নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শিলল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, এডভোকেট সাহারা খাতুন, ড. আব্দুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, একেএম এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ প্রমুখ।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত বাড়ির ভিতরে যান। সেখানে ঘুরে ঘুরে তাঁর পিতার স্মৃতিচিহ্ন পরিদর্শন করেন এবং সেখানে প্রায় আধা ঘণ্টা সময় কাটান তিনি। এরপর তিনি বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রওনা হন।
সকাল ৬টার মধ্যেই অগণিত মানুষের পদচারণায় ভরে ওঠে ৩২ নম্বর সড়ক। হাতে কালো ব্যানার ও বুকে কালোব্যাজ পরিধান করে নারী-পুরুষ, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, শিশু-কিশোরসহ সর্বস্তরের মানুষ। সকলেই পরম শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে জাতির জনককে স্মরণ করেন। সকাল সাতটা থেকে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানো শুরু করেন। শোকাবহ ভাবগাম্ভীর্যের মাঝেও জোরালো কন্ঠে উচ্চারিত হয় ‘বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করা হোক।’
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য স্থানটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
এ সময় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ কৃষক লীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের কালরাতে যে সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুর মরদেহ পড়েছিল, সেখানে গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন। পরে ওই ভবনের একটি কক্ষে বসে কিছু সময় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন শেখ হাসিনা। এ সময়ে প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা তাঁর সঙ্গে ছিলেন।
সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে প্রধানমন্ত্রী তাঁর মা, তিন ভাই, ভাইয়ের স্ত্রীসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। তাঁদের কবরে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন তিনি। এরপর পবিত্র ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে মন্ত্রিসভার সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়াও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নেতৃত্বে সংস্থার সাংবাদিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এ ছাড়াও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রলায় এবং তথ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় প্রেসক্লাব, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবার, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সহ একাধিক সংগঠন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার ৪৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। সমাধিসৌধে পুষ্পার্ঘ অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার এই মহান স্থপতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
সশস্ত্রবাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল জাতির জনককে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায় এবং সে সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। তিনবাহিনীর প্রধানগণও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিবারের অধিকাংশ সদস্য সহ ১৯৭৫’র ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী কিছু বিপথগামী সেনা সদস্যের নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে সমাধি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত বিশেষ মোনাজাতে অংশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবসহ ১৫ আগস্টের সকল শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করেন। মোনাজাতে দেশ ও জাতির অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতিও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়।
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, গৃৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, মুহম্মদ ফারুক খান, আব্দুল মতিন, এবং প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মীর্জা আজম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে জাতির জনকের সমাধিতে দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকেও নেতা-কর্মীরা জাতির জনকের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান।
সকালে প্রধানমন্ত্রী বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার যোগে জাতির জনকের পৈত্রিক নিবাস টুঙ্গীপাড়ায় পৌঁছেন এবং এরআগে তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বনানী কবরস্থানেও যান। সেখানে শায়িত ১৫ আগস্টের শহীদদের জন্য ফাতেহা পাঠ করেন এবং বিশেষ দোয়ায় অংশগ্রহণ করেন। তিনি নিহতদের কবরে ফুলের পাঁপড়িও ছড়িয়ে দেন।
রাষ্ট্রপতি এম আব্দুল হামিদ জাতীয় শোক দিবস ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আজ বাদ জোহর বঙ্গভবনে দরবার হলে দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল ঘাতকের বুলেটে নির্মমভাবে নিহত বঙ্গবন্ধু তাঁর পরিবারের সদস্য ও ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকারী শহীদ এবং বিভিন্ন সময় গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
এর আগে বঙ্গভবনে দরবার হলে চলচ্চিত্র প্রকাশনা অধিদফতরের পরিচালনায় বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
Published on: আগ ১৫, ২০১৮ @ ১৭:০৪