
- মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কালীঘাটের বাড়িতে ্দলের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক জরুরি বৈঠক ডেকেছেন।
- জরুরী তলব- মমতার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেছেন শুভেন্দু।
- শুভেন্দু কী করবে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার- জানিয়ে দিলেন শিশির অধিকারী।
- পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বেশ কয়েকজন বিধায়ক শুভেন্দুর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন।
Published on: নভে ২৭, ২০২০ @ ২০:৫৯
Reporter: Biswajit Pandey
এসপিটি নিউজ, পূর্ব মেদিনীপুর, ২৭ নভেম্বর: মন্ত্রী থেকে শুরু করে সমস্ত সরকারি পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। এবার তিনি কি করবেন? শুভেন্দু কি তাহলে এবার বিজেপি-তে যোগ দেবেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সংবাদ মাধ্যমে একাধিক খবর প্রচারিত হচ্ছে।তবে সমস্ত জল্পনাকে উসকে দিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ এক তৃণমূল নেতার বক্তব্য। ওই নেতা জানিয়েছেন- আগামী রবিবার জেলায় স্বাধীনতা সংগ্রামী রঞ্জিত বয়াল এর স্মরণসভায় যোগ দেবেন শুভেন্দু অধিকারী। সেখানেই তিনি ‘তাম্রলিপ্ত কংগ্রেস’ নামে নতুন দলের কথা ঘোষণা করতে পারেন। ওই নেতার এমন বিবৃতি রাজনৈতিক জল্পনাকে আরও উসকে দিয়েছে নিঃসন্দেহে। সত্যিই কি শুভেন্দু নতুন দল গঠন করতে চলেছেন নাকি তিনি বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন- উত্তর জানতে রবিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে। তবে রাতেই মমতার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেছেন শুভেন্দু।
শুভেন্দুর বিজেপিতে যোগদান নিয়ে জোর জল্পনা
শুভেন্দু অধিকারী বৃহস্পতিবার একটি সরকারি পদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তিনি সরকারের দেওয়া সমস্ত নিরাপত্তা প্রত্যাহার করেন। শুক্রবার ইমেলের মাধ্যমে রাজ্যের পরিবহণ ও সেচ দফতরের মন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তার পদত্যাগপত্র মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর এর কাছে তিনি পাঠিয়ে দিয়েছেন। এরপর তিনি হলদিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর জল্পনা শুরু হয়। তিনি নাকি দমদম বিমানবন্দরের কাছে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের সাথে গোপন বৈঠক করছেন।এরপর খবর আসে তিনি দিল্লি যাচ্ছেন।শনিবার সেখানে গিয়ে বিজেপি নেতাদের সাথে কথা বলবেন এবং তিনি জেপি নাড্ডা ও অমিত শাহ এর হাত থেকে বিজেপির পতাকা নিয়ে বিজেপিতে যোগদান করবেন।সেই সঙ্গে একাধিক তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করবেন।ইতিমধ্যে আজই দিল্লিতে কোচবিহারের তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক মিহির গোস্বামী বিজেপিতে যোগদান করেছেন।
শুভেন্দুর হাত ধরে রাজ্যে কি তবে আরও একটি নয়া দল হতে চলেছে
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পদ তা অস্বীকার করা যায় না। এক সময় তিনি জঙ্গলমহলের মানুষের কাছে মুক্তি সূর্য হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সেই শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে নানা মুনির নানা মত এখন রাজনীতিতে তোলপাড় করে তুলেছে। তবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের এক নেতা বলেন- “আগামী রবিবার স্বাধীনতা সংগ্রামী রঞ্জিত বয়াল-এর স্মরণসভায় তিনি যোগদান করবেন এবং সেখানেই তিনি তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবেন।” ওই নেতা আরও বলেন- “শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেবেন না। তিনি একটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারেন।যে রাজনৈতিক দলের নাম হবে তাম্রলিপ্ত কংগ্রেস। যে তাম্রলিপ্ত শহরে এক সময় ব্রিটিশের বিরুদ্ধে জাতীয় সরকার গঠন করেছিল সতীশ সামন্ত, সুশীল ধারা। তৎকালীন জাতীয়তাবাদী নেতা সেই সতীশ সামন্ত ও সুশীল ধারাকে তিনি আজও শ্রদ্ধা করেন। শ্রদ্ধা করেন মাতঙ্গিনী হাজরাকে। শ্রদ্ধা করেন বীরেন্দ্রনাথ শাসমলকে।” তাই শুভেন্দু অধিকারী আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তাম্রলিপ্ত কংগ্রেস গঠন করে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামতে পারেন।দাবি ওই নেতার। এখন যে যার মতো মন্তব্য করছেন শুভেন্দুবাবুকে নিয়ে। কিন্তু একবারের জন্য শুভেন্দুবাবু নিজে মুখ খোলেননি।
এখনো আশা ছাড়েনি তৃণমূল কংগ্রেস
এখনো আশা ছেড়ে দেননি তৃণমূল কংগ্রেস এর রাজ্য নেতৃত্ব,কারণ তিনি এখনও দলের সদস্য ও বিধায়ক রয়েছেন। তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কালীঘাটের বাড়িতে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। সেই বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত হয় সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে রাজ্যের রাজনৈতিক মহল। আবার শুভেন্দু অধিকারীকে নাকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ফোন করেছিলেন বলে এমন কথাও প্রচার হচ্ছে। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারীর কোনও বক্তব্য এখনো জানা যায়নি। কখনো কোন টিভি চ্যানেলে দেখানো হচ্ছে যে আজই তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করতে পারেন কলকাতায় অথবা মেদিনীপুরে।কিন্তু শুভেন্দুর সাংবাদিক সম্মেলনের কথা কারো জানা নেই।
বাবা শিশির অধিকারী ও ভাই দিব্যন্দু জানালেন প্রতিক্রিয়া
এদিকে শুভেন্দুবাবুর বাবা তথা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বর্তমান কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী বলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে ছিলাম আছি আগামীতেও থাকবো। আমি তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে অন্য কোথাও যাবো না। শুভেন্দু কী করবে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। শুভেন্দু সম্পর্কে আমি কোনো মন্তব্য করব না। শুভেন্দুর ভাই তথা তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারি বলেন দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে বিধায়ক থেকে সাংসদ করেছেন তাই আমি দিদির পাশে ছিলাম আছি আগামীতেও থাকবো। দাদা শুভেন্দু অধিকারী কী করবে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাই দাদার বিষয় নিয়ে আমি কোন মন্তব্য করব না। কিন্তু শুভেন্দু অনুগামীরা অনেকেই বলছেন দাদাকে আমরা ভালোবাসি ।
দাদার অনুগামীদের প্রতিক্রিয়া
“আমরা দাদার অনুগামী, কিন্তু যাদের হাত গুজরাটের রক্তে রক্তাক্ত হয়েছে সেই সাম্প্রদায়িক শক্তি বিজেপিতে যোগ দিলে আমরা দাদার সাথে নেই। আমরা তৃনমূল কংগ্রেসের সাথে ছিলাম থাকবো।” বলেন কয়েকজন শুভেন্দু সমর্থক। শুভেন্দু অনুগামী পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কয়েক জন বিধায়ক বলেন তৃণমূল কংগ্রেসে ছিলাম আছি আগামীতেও থাকবো এবং দল ও দল নেত্রী যা নির্দেশ দেবেন সেই নির্দেশ মেনে জেলায় কাজ করব। তবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বেশ কয়েকজন বিধায়ক শুভেন্দুর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন। শুভেন্দু অধিকারী যা সিদ্ধান্ত নেবেন তা তারা মাথা পেতে মেনে নেবেন বলে জানান। তার মধ্যে অন্যতম ময়নার বিধায়ক সংগ্রাম দোলই এবং কাঁথি উত্তরের বিধায়ক বনশ্রী মাইতি ও খেজুরির বিধায়ক রঞ্জিত মন্ডল।শুভেন্দু অধিকারী একের পর এক সরকারি পদ ও মন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর রাজ্য রাজনীতি এখন উত্তাল হয়ে উঠেছে। তাই শুভেন্দু অধিকারী কে নিয়ে নানা প্রশ্ন নানা জায়গায় শোনা যাচ্ছে। তবে শুভেন্দু অধিকারীর কোন বক্তব্য জানা যায়নি।
তাই শুভেন্দু অধিকারী কি করবে সেই দিকে তাকিয়ে রয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুর ,পূর্ব মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় তার অনুগামীরা ।তাই আপাতত রাজ্য রাজনীতিতে এখন একটাই আলোচ্য বিষয় শুভেন্দু অধিকারী কি করবেন। যদি শেষ পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেস থেকে শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যায় তাহলে বিজেপির লাভ হবে,ক্ষতির মুখে পড়বে তৃণমূল কংগ্রেস।আবার যদি তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে শুভেন্দু নতুন দল করে তাতেও তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা জেলা থেকে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলের।
Published on: নভে ২৭, ২০২০ @ ২০:৫৯