
সংবাদদাতা-বাপ্পা মণ্ডল ছবি-রামপ্রসাদ সাউ
Published on: জানু ১৭, ২০১৮ @ ২০:৩১
এসপিটি নিউজ, মেদেনীপুর, ১৭ জানুয়ারিঃ এক মর্মার্ন্তিক দুর্ঘটনায় ত্রাহি ত্রাহি রব উঠল মেদিনীপুর হাসপাতালে। সবং যাওয়ার পথে যাত্রী বোঝাই “দয়াময়ী” নামের বাসটি নয়ানজুলিতে উল্টে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যায় চারজন। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার পর মারা যায় আরও তিনজন। আহতের সংখ্যা ২৩।হাসপাতালে এখন ত্রাহি ত্রাহি রব। সেখানে এখন আহতদের মধ্যে বাঁচার তীব্র আকুতি। হাসপাতালের চিকিৎসক থেকে শুরু করে নার্স অচিকিৎসক কর্মী সকলেই আহতদের সেবায় প্রাণপাত করে চলেছেন।ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই হাসপাতালে চলে এসেছেন জেলাসভাধিপতি উত্তরা সিংহ হাজরা, সহ-সভাধিপতি অজিত মাইতি সহ আরও অনেকে। সকলেই উপস্থিত থেকে আহতদের চিকিৎসার তদারকি করছেন।
জানা গেছে, “দয়াময়ী” নামের বাসটি গোয়ালতোড় থানার আমলাশুলি থেকে সবং থানার মোহাড় যাচ্ছিল। বুধবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড থেকে সবং-এর মোহাড়ের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় বাসটি। প্রত্যক্ষ্যদর্শী শেখ রহমান আলি জানান, একটি মোটর বাইক আরোহীকে বাঁচাতে গিয়ে বাসের চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। খড়্গপুর লোকাল থানার সতকুই এলাকায় ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে এক নয়ানজুলিতে উল্টে যায়। বাসের ভিতর থাকা যাত্রীরা তখন বাঁচার জন্য চিৎকার করতে থাকে। এলাকার মানুষ ছুটে গিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। কিন্তু তার মধ্যেই চারজন মারা যায়। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে আসার পর মারা যায় আরও তিনজন। মোট সাতজনের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত ২৩ জনকে মেদিনীপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
মৃতদের মধ্যে একজন শিশুর পরিচয় জানা গেছে।নাম সুরজিৎ প্রতিহার। বয়স ১১ বছর। বাড়ি হুগলি জেলার গোঘাট থানার তিড়ালী গ্রামে। এদিন সুরজিৎ ও তার দাদা জিৎ প্রতিহার (১৪)-কে নিয়ে তাদের মা মৌসুমী প্রতিহার ও জেঠিমা অর্চনা প্রতিহার গড়বেতায় ওই বাসে চেপে সবং-এর বাসুদেবপুরে সুব্রত ভুঁইয়ার বাড়ি যাচ্ছিল। মৌসুমী প্রতিহারের কোলে ছিল তার ছোট ছেলে সুরজিৎ প্রতিহার। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় নিয়ে আসা হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। হাসপাতালে নিয়ে আসার পরই মারা যায় ছোট্ট সুরজিৎ। ছোট্ট ছেলের এমন মর্মান্তিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছিলেন না মৌমুমী।তিনিও আহত অবস্থাতেই কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, তারা ভাগ্নি জামাইয়ের বাড়ি যাচ্ছিলেন। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল। তার জা অর্চনা প্রতিহার, বড় ছেলে জিৎ সহ তিনজনকেই ভর্তি করা হয় মেদিনীপুর হাসপাতালে।বর্তমানে নবম শ্রেণীর ছাত্র জিতের অবস্থাও সঙ্কটজনক।
জানা গেছে আরও একজনের পরিচয়। মৃতের নাম শেখ মসিউর রহমান(৫২)। বাড়ি সবং থানার হারনান গ্রামে। তার ছেলে শেখ লুৎফর রহমান বলছিলেন, তার বাবা মেদিনীপুর বাজারের সিপাহী বাজারে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান সেরে ঐ বাসে চেপেই বাড়ি ফিরছিলেন। কিন্তু বাড়ি আর বাবার আসা হল না। সব শেষ হয়ে গেল। তবে বাকি পাঁচ জনের পরিচয় জানা গেছে।
এদিন মেদিনীপুর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল এল মর্মান্তিক চেহারা। বাঁচার জন্য সবাই চিৎকার করে চলেছে। চাইছে এক ফোটা জল। আহতদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে মেদিনীপুর সদর ব্লকের মণিদহ অঞ্চলের উপপ্রধান অঞ্জন বেরা, সভাধিপতি উত্তরা সিংহ হাজরা, সহ-সভাধিপতি অজিত মাইতি, কর্মাধ্যক্ষ শ্যাম পাত্র, সূর্য অট্ট, মেদিনীপুরের মহকুমা শাসক দীননারায়ন ঘোষ সহ আরও অনেকে।
খড়্গপুরের লোকাল থানার পুলিশ বাসটিকে আটক করেছে। চালক ও খালাসি পলাতক। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
মৃতদের তালিকা
১) শেখ মসিউর রহমান (৫২), বাড়ি-সবং, পশ্চিম মেদিনীপুর
২) সুরজিৎ প্রতিহার (১২), বাড়ি-গোঘাট, হুগলি
৩) রবীন্দ্রনাথ চন্দ (৬৫), বাড়ি-দাঁতন, পশ্চিম মেদিনীপুর
৪) পিন্টু ওরফে সন্দীপ পুস্তি (৪১), বাড়ি-কেশিয়াড়ি, পশ্চিম মেদিনীপুর
৫) অঞ্জলি গায়েন (৪০), বাড়ি-কাপাসদা, সবং, পশ্চিম মেদিনীপুর
৬) সন্ধ্যারানি দাস (৫৬), পিংলা, পশ্চিম মেদিনীপুর
বাকি একজনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
Published on: জানু ১৭, ২০১৮ @ ২০:৩১