
সংবাদদাতা-ডা. সৌমিত্র পন্ডিত
Published on: ডিসে ৬, ২০১৮ @ ১৭:৪৩
এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ৬ ডিসেম্বরঃ সমস্যা ছিল আছে এবং তা আগামিদিনেও থাকবে। এখন সেই সমস্যার কিভাবে সমাধান করা যায় তা নিয়ে সকলকে ভাবতে হবে। তবেই বেরিয়ে আসবে সমাধানের পথ।সারা দেশে এখন কৃষকদের নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। কিভাবে তাদের আয় বাড়ানো যায় কিভাবে তাদের জীবনের মানোন্নয়ন ঘটানো যায় এমন আরও কত কী! গতকাল বুধবার থেকে পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাগৃহে শুরু হয়েছে এমনই এক জাতীয় আলোচনাসভা। যেখানে প্রথমদিন বক্তাদের মধ্যে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার। ছিলেন রাজ্যের প্রাণীসম্পদমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক পূর্ণেন্দু বিশ্বাস।
“কৃষকের আয় ও জাতীয় নিরাপত্তা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা”-শীর্ষক আলোচনায় রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার কৃষকের আয় বাড়ানোর প্রশ্নে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। আর এজন্য তিনি পরোক্ষে গবেষকদের প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলেন- গবেষকরা কি শুধু গবেষণার জন্যই গবেষণা করছেন। কৃষকের কিভাবে উন্নয়ন হবে সেটা নিয়ে কি তারা ভেবেছেন? কৃষি উপদেষ্টার এই উদ্বেগকে গুরুত্ব দিয়ে প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক পূর্ণেন্দু বিশ্বাস আশা প্রকাশ করে জানান, সকলে মিলে একত্রিত হয়ে কাজ করতে পারলে কৃষকের মানোন্নয়ন হবেই।
কৃষি উপদেষ্টার প্রশ্নের মুখে কৃষি বিজ্ঞানীরা
কৃষকদের উন্নয়ন কতটা হচ্ছে, তাদের কথা আদৌ ভাবা হচ্ছে কতটা এসব নিয়ে এদিনের জাতীয় আলোচনাসভায় নিজের উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি কৃষি বিজ্ঞানীদের প্রশ্নবানে জর্জরিত করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি বিষয়ক উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার।কৃষি বিজ্ঞানীদের উদেশ্য করে তিনি রাখলেন এই প্রশ্নগুলি-
- সত্যি কি আমরা মানুষের কাছে পৌঁছতে পেরেছি?
- কৃষকের অসুবিধাগুলো কি সমাধান করার চেষ্টা সঠিকভাবে করা হচ্ছে?
- না কি শুধু গবেষণার জন্য গবেষণা হচ্ছে?
- যেখানে ভারতে ধান-গম উৎপাদন এত বেশি তবুও এখনও এত মানুষ “ভুখা” থাকে কি করে?
শুধু উৎপাদন বাড়ানো উদ্দেশ্য না করে আয় বা লাভজনক উৎপাদনের কথা ভাবার সময় এসেছে। তা না হলে কৃষি বিমুখ হবেন চাষিরা, উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রদীপবাবু।
এরপর তিনি সোজাসাপটা ভাষায় বলতে থাকেন- “৪০ বছর ধরে ভারতবর্ষে খাদ্যশস্যর অভাব দূর করতেও সমর্থ হয়েছে কৃষিবিজ্ঞানীরা কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্র যেখানে ক্ষরাপ্রবণ বা বর্ষাপ্রবণ এলাকাতে এখনও শস্যের উৎপাদন সঠিকভাবে হচ্ছে না।” তাই তিনি কিছু প্রশ্ন রেখে যান-আমরা সত্যি চিন্তিত কৃষকদের নিয়ে। উদাহরণ স্বরূপ তিনি জানান- ভারতবর্ষের অতিরিক্ত খাদ্যশস্যের উৎপাদন চিনের কাছে আশীর্বাদ কারণ তারা কম দামে পাবে।আর আমাদের দেশের চাষিরা অনাহারে থাকবে।এরপর তাঁর প্রশ্ন-
- কে এরজন্য দায়ী হবে?
- কে ভাববে?
- সত্যিকারের শিক্ষার বা গবেষণার ফল কি সম্প্রসারণ করা হচ্ছে?
তিনি দুঃখের সঙ্গে বলেন-মনে হয় কোথাও খামতি থেকে যাচ্ছে। মনে হয় আত্মসমালোচনার সময় এসেছে। তাই আমরা আগামিদিনে খাদ্য-সুরক্ষার সাথে সাথে আয়ের পরিমানও বাড়াতে পারব। যা আগামিদিনে তথা ২০২২ সালের মধ্যে আয়-দ্বিগুন করার যে প্রচেষ্টা তা সফল করা সম্ভব হবে।
বাড়বে কৃষকের মানোন্নয়ন-আশাবাদী উপাচার্য
এই অনুষ্ঠানের সভাপতি তথা পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য অধ্যাপক পূর্ণেন্দু বিশ্বাস এরপর বক্তব্য রাখতে উঠে কৃষি উপদেষ্টার বক্তব্যকে গুরুত্ব দিয়ে বলেন- বর্তমানে যে সকল প্রযুক্তির উদ্ভাবন হচ্ছে তা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হলে “সম্প্রসারণ”-এর খুবই প্রয়োজন তবেই কৃষির উন্নতি সম্ভব। সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা খুবই প্রয়োজন তবেই কৃষির উন্নতির সাথে সাথে কৃষকের আয় তৎসঙ্গে খাদ্যসুরক্ষা সঙ্গে জাতীয় সুরক্ষা সুনিশ্চিত হবে। তবেই মানুষের “জীবন ও জীবিকার” মান সুনিশ্চিত হবে।তবে কৃষকের মানোন্নয়নের বিষয়ে এখনই আশাহত তিনি যে হতে পারছেন না সেটা তাঁর ইতিবাচক চিন্তাধারামূলক দৃষ্টিভঙ্গী আর জোরালো বক্তব্যে ধরা পড়েছে।
তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন- আগামিদিন সমন্বিত কৃষি অর্থাৎ কৃষি-মাছ-প্রাণী-ডিম-দুধ একত্রিত উৎপাদন এবং বিপনন সমস্ত দিকগুলো যদি সঠিকভাবে রূপায়িত করা যায় তাহলে উন্নয়নের জোয়ার আসবেই-আর বাড়বে কৃষকের জীবন-জীবিকার মানোন্নয়ন।
একই সঙ্গে উপাচার্য বলেন- ব্যায়ের চেয়ে আয় বাড়াতে হবে- “খাদ্যসুরক্ষা” কেবল খাদ্যশস্য উৎপাদন করলে আসবে না “পুষ্টির”- সুরক্ষার দিকটাও ভাবতে হবে। প্রোটিনের চাহিদা পূরণের দিকটাও ভাবতে হবে। সকলকে একত্রে কাজ করতে হবে, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় সকলের একত্রিত প্রচেষ্টায় অবশ্যই সাফল্য আসবে- “কৃষি আয়” ও “খাদ্য সুরক্ষায়”। তবেই আয়ের সাথে সাথে খাদ্যসুরক্ষা রক্ষা হবে।
ঘাটতি মেটাতে কৃষির সাথে প্রাণীপালনে জোর দেওয়ার পরামর্শ মন্ত্রীর
রাজ্যের প্রাণীসম্পদ দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন- পশ্চিমবঙ্গের ১ কোটির বেশি মানুষের মধ্যে ৭০ শতাংশ কৃষক তার মধ্যে ৬৫ শতাংশেরও বেশি মানুষ ক্ষুদ্র-প্রান্তিক চাষি। যারা মূলত কৃষি-মৎস্য-প্রাণীপালন করে থাকে। ফলে সারা দেশের মধ্যে এরাই আজ খাদ্য ও পুষ্টির সুরক্ষার জন্য অনেকখানি এগিয়ে নিয়ে চলেছে দেশকে।
তিনি এদিন প্রাণী সম্পদের যে উন্নয়ন তার খতিয়ান তুলে ধরেন, বলেন-গরু, ছাগল, মুরগি, ডিম, মাংস উৎপাদন বহুলাংশে বেড়েছে। কিন্তু এখনও চাহিদা ঘাটতি অনেক তাই আরও বেশি করে কৃষির সাথে সাথে প্রাণীপালনের উপর জোর দিতে আহ্বান জানান তিনি। শুধু উৎপাদন নয়-এর সাথে বিপণনের সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা জানান মন্ত্রী। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের প্রাণীসম্পদ দফতর এ বিষয়ে নানান কর্মসূচি নিচ্ছে যাতে ডিম-দুধ-মাছ-মাংস সুলভে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়।
তিনি এই সম্মেলনের যোগদান এবং সাফল্য কামনা করেন। বলেন- আগামিদিনে আরও বেশি করে এই বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের এই দফতর প্রাণী চিকিৎসার সাথে সাথে টীকাকরণ কর্মসূচি কৃত্রিম প্রজনন এবং উৎকৃষ্ট মানের বীজ সংরক্ষনের মাধ্যমে প্রাণী সম্পদের উন্নয়নে সদা সচেষ্ট।বলেন মন্ত্রী স্বপনবাবু।
আলোচনা শুরুর আগে স্বাগত ভাষনে কমিটির আহ্বায়ক সম্পাদক অধ্যাপক শ্যামসুন্দর দানা বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সকলকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন। দেশের নানা প্রান্তের বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন উপাচার্যদের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠানের গাম্ভীর্য্য আরও বাড়ানোয় সম্পাদক তাদের ধন্যবাদ জানান।
এই সম্মেলনের সভাপতি ডা. বলদেও সিং কৃষিতে মানুষের অনীহা বাড়ছে- কিভাবে তা কাটিয়ে সঠিক সময়ে সঠিক ভাবে কৃষিকাজ এবং আয়ের সঙ্গে খাদ্য সুরক্ষা কিভাবে সুনিশ্চিত করা যায় তার উপর জোর দেওয়ার কথা জানান।
এদিনের গোটা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. দেবাশীষ গঙ্গোপাধ্যায় এবং ডা. লোপামুদ্রা হালদার।
Published on: ডিসে ৬, ২০১৮ @ ১৭:৪৩