এও এক ফা্নি গেম

উত্তর সম্পাদকীয় খেলা বিদেশ
শেয়ার করুন

অরুণাভ গুপ্ত

Published on: আগ ১, ২০১৮ @ ১৭:২৮

ক্যাপ্টেন ইমরান খান এবার ক্যাপ্টেন পাকিস্তানের হয়ে আর এক ইনিংস খেলবেন। লেশমাত্র আগ্রহ নেই ওঁর নয়া অধ্যায় নিয়ে ওসব কচকচানি থাকুক রাজনীতিবিদদের জন্য।কোনও এক মাহেন্দ্রক্ষণে সংবাদপত্রের দৌলতে খুব কাছাকাছি যাওয়া ও ক্রিকেট নিয়ে কথা বলা কপালে জুটেছিল। আমি সেই চৌকশ ক্রিকেটার ইমরান খানকে ফিরে দেখব আতস কাঁচের নিচে ফেলে।সব মিলিয়ে কলম ধরলে একটা ঢাউস সিরিয়াল হয়ে যাবে।ইমরান ক্রিকেট কাব্য ভান্ডারে অভিনব বৈশিষ্ট্যগুলি টুকটুক করে সাজাব, তাও সব হবে না, সেও কম না, ওখান থেকেই একটা স্পষ্ট ধারণা রূপ নেবে এবং বোঝা যাবে ইমরান কেমিস্ট্রি, অফকোর্স তথ্য বা ঘটনা শুধু ক্রিকেট।বাড়তি ল্যাজা-মুড়ো মুড়িয়ে বাদ।

ইমরানের মায়ের ফ্যামিলিতে উঠতে-বসতে ক্রিকেট। কম সে কম আটজন ঐ ফ্যামিলির প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলতেন। এঁদের মধ্যে দু’জন তো পাকিস্তানের ক্যাপ্টেন ছিলেন। ইমরানের মাও তাঁর দু’বোনের মিলেঝুলে তিন ছেলে মজিদ খান, জাভেদ বার্কি এবং ইমরান খান পাকিস্তানের ক্যাপ্টেন হয়েছেন। অথচ মাইন্ড ইট কৈশোরে এবং তারপরেও বেশ খানিকটা সময় ইমরান ওরফে ইম্মির মধ্যে ক্রিকেট ট্যালেন্টের নামগন্ধ ছিল না। তবু মায়ের চেষ্টায় খামতি ছিল না।ছেলের যখন সাত বছর বয়স তখন প্রায় জোর করে টানতে-টানতে মা পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট খেলা দেখাতে স্টেডিয়ামে নিয়ে যান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দৈত্যকায় হাড় হিম করা ফাস্টবোলার ওয়েলেসলি হলের বলে ওপনিং ব্যাটসম্যান ইজাজ বাটের নাক ফেটে চৌচির। দুধ সাদা শার্ট রক্তে লাল। মাঠভর্তি দর্শক উত্তেজনায়-ক্ষোভে ফুঁসছে, মায়ের মুখ থমথমে ইম্মির কোন হেলদোল নেই উল্টে যা ঘটছে ঘটুক আমার ভারি বয়ে গেছে মুখ করে গোটা দিন কাটিয়ে দিল।কপাল চাপড়েছেন তাঁর এক কালের আশা শেষমেষ ভষ্মে ঘি ঢালা হল।

লাহোরের বিখ্যাত জিমখানা ক্লাবের কেষ্টবিষ্টুরা সব মায়ের আত্মীয় এবং যে ক্লাবের সদস্যপদ পেতে গেলে অর্থ-প্রভাব দুই চাই। কতজন ক্লাবের দোরগোড়া পর্যন্ত এগোতে পারেনি শুধু এই দুইয়ের অভাবে। সেখানে ইমরান জাভেদ বার্কি ও মজিদ খানের হাত ধরে ড্যাংড্যাং করে ঢুকে পড়ল। আবার সাড়ে ষোলোতে পৌঁছে ইমরান প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ম্যাচে লাহোরের হয়ে সারগোদার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম খেলতে নামে। ইমরান পরিণত বয়সে স্মৃতিচারণ করার সময় এতটুকু লুকোছাপা না করে সাফ বলেছেন, আমার এই সুযোগ পাওয়ার পিছনে নেপোটিজম কাজ করেছে যেহেতু নির্বাচকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে ক্যাপ্টেন পর্যন্ত আমার নিকট আত্মীয়। প্র্যাক্টিক্যালি পারিবারিক দল। পাঠক মাথায় রাখবেন ইমরানের এই নির্ভেজাল স্বীকারোক্তি।

১৯৭১ পাকিস্তানের ইংল্যান্ড সফরে ইমরান খান জাভেদ বার্কির সৌজন্যে টিমে ঢুকলেন। আর একটা কারণ ছিল টিমে ফাস্ট বোলিং-এর অভাব। আকাশ-কুসুম স্বপ্নে বিভোর ইমরান। সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি করবে, প্রতি ইনিংসে পাঁচটা করে উইকেট নেবে উফ কি আনন্দ! ইমরানের ফাস্ট বোলিং-এর নমুনা পেশ করা যাক। নেট প্র্যাকটিস, পাটভাঙা পোশাক নতুন জুতো পায়ে গলিয়ে নতুন বলে নেট করা স্টার্ট। ইমরান বল করল, বল হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সাঁ করে ছুটলো পাশের নেটে যেখানে অনুশীলনরত আফতাব গুল, বল তাঁর প্রায় নাক ছুঁয়ে বেরিয়ে গেল, আফতাব হতচকিত নাকে হাত বুলিয়ে কাঁচা কাঁচা গালাগালের তুবড়ি ছোটাল। অজস্রবার ক্ষমা চেয়ে ইমরান রেহাই পেল। পরের বলের জন্য ফের লম্বা দৌড়। বল ব্যাটসম্যানের কাছে পৌঁছল না সরাসরি গিয়ে আঘাত করল এক দর্শকের মাথায়। বেচারা মন নিয়ে প্র্যাকটিস দেখছিল কল্পনাও করতে পারেনি বল তাঁকে ধাওয়া করবে।টিমের বাকি ক্রিকেটারদের সেবা-যত্নে অবস্থায় প্রলেপ পড়ে। ইমরান ফটাফট বল করছে যত পারছে জোরে হঠাৎ খেয়াল পড়ল কোনও নেটেই কোন ব্যাটসম্যানের পাত্তা নেই, সবাই চাচা আপন প্রাণ বাঁচা বলে যে যার মতোন শেল্টার নিয়েছে। বোলিং নমুনা দেখে সরাসরি দুটো ম্যাচে ছাঁটা। ইমরান বুঝল কপাল পুড়েছে। কিন্তু ম্যান প্রপোজেস গড ডিসপোজেস। আঘাত হেতু সরফরাজ নওয়াজ ও সেলিম আলতাফ খেলতে না পারায় ইমরান টিমে ঢুকলো। এজবাস্টন টেস্টের প্রথম ওভার ইমরানের ব্যাটসম্যান কলিন কাউড্রে। ইমরানের জন্মের আগের ব্যাটসম্যান। প্রথম চারটে বল গোলার মতোন ফুলটস একটাও ব্যাটে-বলে হয়নি সবকটা বাইরে ছিল। ক্যাপ্টেন ইন্তিখাব এগিয়ে এসে উৎসাহ দিয়ে বললেন, ইনসুইং তান্ডবে অফস্ট্যাম্পের বাইরে থেকে কোনমতেই লেগস্ট্যাম্পের বাইরে নয়। উপদেশবানী কানে নিয়ে ইমরান চলল আক্রমণ শানাতে। উপদেশের ফল হাতেনাতে ফললো বল প্রচন্ড গতিতে লেগস্লিপে দাঁড়ানো আসিফ মামুদের হাতে সোজা গিয়ে ল্যান্ড করল। কপাল জোরে শেষ মুহূর্তে আন্দাজ করার দরুন পৈতৃক প্রাণটা বেঁচেছে নয়তো সামান্য এদিক-ওদিক হলে হাসপাতাল ও শ্মশানযাত্রা নিশ্চিত ছিল। ইন্তিখাব আলম আর উপদেশ দিতে সাহস পাননি তবে বলও করতে দেননি। প্রতিটি খেলোয়াড় ডেকে হেঁকে বলেছে, এটার দ্বারা কিসসু হবে না। ট্যালেন্ট দূরের কথা ক্রিকেটের মিনিমাম যোগ্যতা নেই। ইমরানের কান্না পেলেও শপথ করেছে এদের জবাব দেবই দেব।…… এরপর ধাপে ধাপে উত্তরণের ইতিহাস। পাঠক এবার ক্রিকেটের মাপকাঠির খানিকটা আন্দাজ করা যেতেই পারে ইমরানের দর্শন। পাক ক্রিকেট টিম গড়েছেন নিজস্ব স্টাইলে এবং সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্বকাপ জয় করেছেন। সবটাই ক্রিকেট ভালবাসা ও দেশের সম্মান।

রাজনীতির নেট প্র্যাকটিসেও নির্ঘাত এই নেটের বল ওই নেটে আছড়ে পড়বে, প্রতিপক্ষ রাজনীতিবিদ ইমরানের বলের নাগাল পেতে হিমশিম খাবেন, এমনও হতে পারে বলের আঘাতে কুপোকাত। তবে সবুরে মেওয়া ফলবে, অলরাউন্ডার ইম্মি ঠিক রাজনীতির অঙ্গনেও মাপা লেংথে বল করবেন নিজের ঘরানা ও জাত প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। ইমরান জানেন এই নয়া ইনিংস বড় পিচ্ছিল, তাঁকে প্রতিটি বল শুঁকে খেলতে হবে যেহেতু মাইলস টু গো। খারাপ-ভাল মানুষের বিচারে থাক। ইম্মির সেরা পারফিউম স্পোর্টসম্যান স্পিরিট।

Published on: আগ ১, ২০১৮ @ ১৭:২৮


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 + 3 =