Published on: অক্টো ২৩, ২০২৩ at ১৯:৩৫
এসপিটি নিউজ ব্যুরো: ভারতের কিংবদন্তি ক্রিকেটার প্রাক্তন টেস্ট অধিনায়ক বিষেন সিং বেদী আজ প্রয়াত হয়েছেন।বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।গোটা দেশজুড়ে বহু মানুষ তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।বিসিসিআই ভারতের প্রাক্তন টেস্ট অধিনায়ক এবং কিংবদন্তি স্পিনার বিষান সিং বেদির দুঃখজনক মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে।তারা বলেছে যে আমাদের চিন্তাভাবনা এবং প্রার্থনা এই কঠিন সময়ে তার পরিবার এবং ভক্তদের সাথে রয়েছে।
ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক মহম্মদ আজহারউদ্দিন বলেছেন– বিষেন সিং বেদী স্যারের প্রয়াণের খবর শুনে আমি দুঃখিত। তার পরিবারের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
ভারতের আর এক প্রাক্তন ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীর শোক জ্ঞাপন করে বলেছেন- বিষেন সিং বেদী জির প্রয়াণে অত্যন্ত শোকাহত। ক্রিকেটে তার অসামান্য অবদান চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ঈশ্বর তার পরিবার এবং প্রিয়জনদের শক্তি দিন!
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন- কিংবদন্তি স্পিনার এবং ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক বিষেন সিং বেদী জির মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত। বেদী জি আমাদের স্মৃতিতে বেঁচে থাকবেন শুধু ক্রিকেট বিশ্বে তার অবদানের মাধ্যমেই নয়, কৌশলী বোলিংয়ের মাস্টার হিসেবেও যিনি পিচে জাদু বুনতে পারতেন। শোকের এই মুহূর্তে তার পরিবারের সদস্যদের এবং তার ভক্তদের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা।
ভারতের ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর বলেছেন- প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার বিষেন সিং বেদির মৃত্যুতে, কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর বলেছেন “ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক, বিশান সিং বেদী আর আমাদের মধ্যে নেই। এটা খুবই দুঃখজনক খবর। আমরা তার পরিবারের সাথে দাঁড়িয়েছি। আমি যখন পাঞ্জাবের হয়ে খেলতাম, তিনি আমাদের রঞ্জি ট্রফি দলের কোচ ছিলেন। এটা ক্রিকেট বিশ্বের জন্য বড় ক্ষতি…”
ভারতীয় ক্রিকেটার দীনেশ কার্তিক বলেছেন- একজন কিংবদন্তি এবং খেলাধুলার একজন সত্যিকারের দূত বিষেন সিং বেদী স্যারের প্রয়াণের কথা শুনে গভীরভাবে দুঃখিত। ভারতীয় ক্রিকেটে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।তার পরিবারের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা।
বলিউড অভিনেতা সুনীল শেঠি লিখেছেন- স্পিন কিংবদন্তি বিষান সিং বেদীর প্রয়াণের কথা শুনে গভীরভাবে দুঃখিত। একজন মানুষ যিনি কেবল তার ক্রিকেটীয় দক্ষতার জন্যই নয়, তার হৃদয়ে সততা এবং সততার জন্যও প্রশংসিত ছিলেন। তিনি গেমের একজন সত্যিকারের উস্তাদ ছিলেন এবং অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা ছিলেন।তার উত্তরাধিকার প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে রাখুক। শান্তিতে থাকুন, বেদি স্যার।
বিষেন সিং বেদীর সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জী
বিষেন সিং বেদী ১৯৪৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। অমৃতসরে জন্মগ্রহণকারী ভারতের প্রাক্তন ও প্রথিতযশা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন তিনি।ভারতীয় ক্রিকেট দলে তিনি মূলতঃ স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করতেন। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৯ সময়কালে ভারতের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও তিনি জাতীয় দলকে ২২টি টেস্টে নেতৃত্ব দেন। তার সময়কালেই ভারতে স্পিন জনপ্রিয়তা অর্জন করতে শুরু করে। বিশ্বের অন্যতম সেরা লেগ স্পিনার হিসেবে ১৯৬০ ও ৭০-এর দশকে ই.এ.এস প্রসন্ন, ভাগবত চন্দ্রশেখর ও শ্রীনিবাসন ভেঙ্কটরাঘবনকে নিয়ে ভারতীয় স্পিন জগতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন।
পনের বছর বয়সে উত্তর পাঞ্জাবের পক্ষে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন। এর মাত্র দুই বছর পূর্ব থেকে ক্রিকেটে হাতে খড়ি হয়।পরবর্তীতে ১৯৬৮-৬৯ মরশুম থেকে রঞ্জি ট্রফিতে দিল্লির পক্ষে খেলতে থাকেন। তারমধ্যে ১৯৭৪-৭৫ মরশুমে রেকর্ডসংখ্যক ৬৪ উইকেট লাভ করেন। এছাড়াও ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটে বেশ কয়েক বছর নর্দাম্পটনশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেন। প্রথম-শ্রেণির ক্রিকেটে ১৫৬০ উইকেট নিয়ে খেলোয়াড়ি জীবন সমাপ্ত করেন যা যে-কোন ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ।
১৯৬৯-৭০ মরশুমে কলকাতায় অনুষ্ঠিত সফরকারি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনি তার সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ৭/৯৮ লাভ করেন। ১৯৭৮-৭৯ মৌসুমে পার্থে একই দলের বিরুদ্ধে টেস্টের সেরা ১০/১৯৪ করে। ১৯৭৬ সালে কানপুরে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত টেস্টে একমাত্র অর্ধ-শতক ও অপরাজিত ৫০ রান করেন। একই মরশুমে মনসুর আলি খান পতৌদির পরিবর্তে দলের অধিনায়ক মনোনীত হয়। অধিনায়ক হিসেবে ১৯৭৬ সালে পোর্ট-অব-স্পেনে অনুষ্ঠিত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তৃতীয় টেস্টে প্রথম জয় পান। ঐ খেলায় ভারত তৎকালীন ৪র্থ ইনিংসে রেকর্ড ৪০৬ রান সংগ্রহ করে ভারত স্মরণীয় জয় পায়। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজ দেশে ২-০ সিরিজে জয় পায়।ল্যান্স গিবসের প্রতিটেস্টে ১৬.৬২ ওভার মেইডেন ওভার লাভের পর তিনি ১৬.৩৫ ওভার মেইডেন নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন। এছাড়াও প্রতি উইকেট প্রাপ্তিতে ৪.২ মেইডেন ওভার দেওয়ার কৃতিত্ব তার দখলে আছে।
ইনিংসে আট উইকেট লাভবিহীন অবস্থায় ১৫৬০ উইকেট নিয়ে সবার আগে আছেন তিনি। ১৫৩৬ উইকেট নিয়ে নিকটতম স্থানে অবস্থান করছেন কেন হিগস। ২০০৮ সালে উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাক ঘোষণা করে যে, বেদী ক্রিকেটের ইতিহাসে সেরা পাঁচ ক্রিকেটারের একজন, যিনি বর্ষসেরা ক্রিকেটারের খেতাব লাভে সক্ষম হননি।তিনি নিজেই পোশাক-আশাক পরিষ্কার করতে, যা নিয়ে তাঁর সরল স্বীকারোক্তি ছিল- যাকে তিনি তার ভাষায় কাঁধ ও আঙ্গুলের সেরা ব্যায়াম হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
Published on: অক্টো ২৩, ২০২৩ at ১৯:৩৫