Published on: জুলা ২৯, ২০২৪ at ২১:৪৬
আজ আমরা টাইগার পপুলেশনের মধ্যে ‘ওয়ার্ল্ড লিডার’ হয়ে গেছি-মনোজ কুমার আগরওয়াল
Reporter: Aniruddha Pal
এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ২৯ জুলাই: আজ ২৯ জুলাই আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস। প্রতি বছর এই দিনটি উদাযপিত হয় সারা বিশ্বে। বিশেষ করে ভারতে। কারণ, বিশ্বের মোট বাঘের সত্তর ভাগ রয়েছে এই দেশেই। আজ আলিপুর চিড়িয়াখানায় দিইনটি খুব সুন্দরভাবেই উদযাপিত হয়েছে। আলিপুর চিড়িয়াখানার ডিরেক্টর এবং চিফ কনজার্ভেটর অফ ফরেস্ট শুভঙ্গকর সেনগুপ্ত জানিয়েছেন যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বন দফতর এবং আলিপুর চিড়িয়াখানার যৌথ উদ্যোগে দিনটি উদযাপিত হয়েছে এবং অনুষ্ঠানের আয়োজন করা ঘয়েছে। এদিন এই উপলক্ষ্যে আলিপুর চিড়িয়াখানায় স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে বসে আঁকো প্রতযোগিতার আয়োজন করা হয়। এছাড়াও কলেরজের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে পোস্তার প্রতিযোগিতা এবং কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত বন কর্তাদেরদে সকলেই ভারতের টাইগার পপুলেশন নিয়ে আশা প্রকাশ করেন।
এদিনের অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এসিএস ফরেস্ট, মনোজ কুমার আগরওয়াল। নীরজ সিংঘল, PCCF (HoFF), দেবল রায়, PCCF WL & CWLW, সন্দীপ সুন্দরিয়াল, PCCF, জেনারেল, ডাঃ কনা তালুকদার, PCCF RM&D, ডক্টর V. K.Sood, PCCF & MD, WBFDC, সৌরভ চৌধুরী এবং Adl PCCF সদস্য সচিব, পশ্চিমবঙ্গ চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। এছাড়াও অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট বাঘ বিশেষজ্ঞ এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অবসরপ্রাপ্ত PCCF এবং CWLW এবং ভিজিল্যান্স কমিশনার, ড. প্রদীপ ব্যাস।
দুটো পর্যায়ে আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস উদযাপিত আলিপুর চিড়িয়াখানায়- শুভঙ্কর সেন গুপ্ত
আলিপুর চিড়িয়াখানার ডাইরেক্টর শুভঙ্কর সেন গুপ্ত জানান, এদিন দুটো পর্যায়ে আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস উদযাপিত হয়েছে। আলিপুর চিড়িয়াখানা এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বনবিভাগের যৌথ উদ্যোগে এদিন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বসে আঁকো প্রতযোগিতায় ২০টি স্কুলের ১১৫জন ছাত্র-ছাত্রী অংশ নিয়েছে। এছাড়াও টাইগার বিষয়ে এক পোস্টার প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা। হয়েছে কুইজ প্রতিযোগিতাও। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ কলকাতার, তারা তাদের মাল্টিমিডিয়া ডিপার্ট্মেন্ট থেকে ্টাইগার কনজার্ভেশনের উপর দুটো ছোট শর্ট ফিল্ম প্রদর্শন করে। এছাড়া ঠাকুরপুকুর বিবেকানন্দ কলেজ তারা এখানে টাইগার সম্পর্কে বক্তব্য রাখে।
আমরা টাইগার পপুলেশনের মধ্যে ‘ওয়ার্ল্ড লিডার’ হয়ে গেছি-মনোজ কুমার আগরওয়াল
রাজ্যের বন দফতরের অ্যাডিশানাল চিফ সেক্রেটারি মনোজ কুমার আগরওয়াল টাইগার পপুলেশন নিয়ে আশা প্রকাশ করে বলেন- “অনেক বছর আগে ভারত সরকার ১৯৭২ সালে প্রজেক্ট টাইগার শুরু করেছিল। সেটা ১৯৭৩ সালে রূপায়িত হয়েছে। ন’টা টাইগার কনজার্ভেশন সেন্টার হয়েছে যার মধ্যে একটা পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে। এখন গোটা দেশে ৫৫টি টাইগার রিজার্ভ রয়েছে যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেও রয়েছে দুটি- একটা সুন্দরবন এবং অপরটি বক্সা। আজ আমরা টাইগার পপুলেশনের মধ্যে ‘ওয়ার্ল্ড লিডার’ হয়ে গেছি। আশা করছি , আমাদের গ্রোথ যেটা ৬.১ শতাংশ থেকে বাড়াতে পারব। আমাদের তিনটি রাজ্য আছে যেখানে গ্রোথ রেট রাশিয়ার চেয়ে বেশি আছে। আমাদের চেষ্টা করতে হবে পশ্চিমবঙ্গে টাইগার পপুলেশন বাড়াতে পারি।“
দারুন উদ্যোগ, দুটো ফরেস্ট ভিলেজকে উন্নত করা- নীরজ সিংঘল
নীরজ সিংঘল, PCCF (HoFF) বলেন, “এখন ওয়ার্ল্ড পপুলেশন হচ্ছে ৫২০০। ২০১০ সালে ওয়ার্ল্ড টাইগার পপুলেশনের ৫০ শতাংশ ভারতে ছিল যা আজকের দিনে ৭০ শতাংশে পৌঁছতে পেরেছি। এর জন্য পুরো কৃতিত্ব বনকর্মী, এনজিও, বন সংরক্ষক, মিডিয়া থেকে আমরা সকলেই। এখন বাঘকে যদি বাঁচাতে হয় তাহলে ওর চারপাশের পরিবেশ এবং তার হ্যাবিটেটকে রক্ষা করতে হবে। এখানে সুন্দরবন ও বক্সা টাইগার রিজার্ভ। বক্সাতে আমরা খুব দারুন উদ্যোগ নিয়েছি। সেখানে আমরা দুটো ফরেস্ট ভিলেজ মংগোটিয়া বস্তি ও ভুটিয়া বস্তি। যেখানে আমরা দুটো ফরেস্ট ভিলেজকে কোর এরিয়া থেকে বাইরে নিয়ে আসতে পেরেছি। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী ‘বনছায়া’ নামে একটা প্রজেক্ট করেছিলেন ২০২৩ সালে। আমাদের লক্ষ্য আরও একটা ফরেস্ট ভিলেজকে নিয়ে আসা। এরজন্য প্রয়াস চলছে।“
‘বাঘের বাঘের সংরক্ষণ একটা সিম্বল, একটা আকুতি, একটা প্রচেষ্টা’- দেবল রায়
চিফ ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন দেবল রায় বলেন- “এটা এমন একটা পশু যেটাকে আমরা ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। এক সময় যাদের মারার জন্য সরকার টাকা দিত এখন তাদের বাঁচানোর জন্য কি আকুল প্রচেষ্টা। কারণ সেই সময় আমরা জানতাম না তাদের বেঁচে থাকার সঙ্গে আমাদের বেঁচে থাকাটাও জড়িয়ে আছে। বাঘের সংরক্ষণ খালি একটা প্রজাতির সংরক্ষণ নয় বাঘের বাঘের সংরক্ষণ একটা সিম্বল, একটা আকুতি, একটা প্রচেষ্টা। মানব জাতির যাতে কিনা বন এবং বনের বাইরে জীব বৈচিত্র্য আছে সেটাকে আমরা বাঁচাতে পারি নিজেদের জন্য। খুব ছোট স্বার্থের জন্য। আমরা যদি বেঁচে থাকতে চাই তাহলে এই জন্তুগুলোকেও বাঁচাতে হবে। এই ইকো সিস্টেমটাকেও বাঁচাতে হবে। তার জন্য এই প্রয়াস। বাঘের সংরক্ষণে ৫০ বছরে শিক্ষা আজ আমরা বুঝতে পেরেছি।“
সুন্দরবনের পাশাপাশি বক্সা নিয়েও আলোকপাত করলেন ড. প্রদীপ ব্যাস
বিশিষ্ট বাঘ বিশেষজ্ঞ ও রাজ্যের প্রাক্তন চিফ ওয়াইল্ডলাইফ ওয়ার্ডেন ড. প্রদীপ ব্যাস সুন্দরবনের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের বক্সা টাইগার রিজার্ভ ফরেস্ট-এ বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়েও আলোকপাত করতে গিয়ে বলেন- টাইগার প্রোটেক্ট করা, টাইগার ইকোলজিকে স্টাডি করা, আর সেই সাথে এমন অবস্থা তৈরি করা যাতে সে প্রাকৃতিকভাবে বাড়তে পারে। সেখানে কো-অপারেশন নেই। কারণ হিউম্যান প্রেশার বেশি হয়েছে ওখানে গত ৫০ বছরে সেজন্য ওখানে টাইগার পপুলেশন নেই। একটা প্রজেক্ট চলছে যে পাহাড় থেকে টাইগার এনে তাকে সার্ভাইভ করা যায় আবারা উরত্তরবঙ্গের মধ্যে টাইগার পপুলেশনকে বৃদ্ধি করা যায় সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। গত ১৫ বছরে জঙ্গল থেকে লোকালয়ে বাঘের আসা অনেক কমেছে। ফলে এখন আর বাঘের আক্রমণে লোকালয়ে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে না।
“বিভিন জু থেকে আমরা বাঘ আলিপুর চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসছি”
সবশেষে Adl PCCF সদস্য সচিব সৌরভ চৌধুরী বলেন- “বিভিন জু থেকে আমরা বাঘ এখানে নিয়ে আসছি যাতে জেনেটিক মেটেরিয়ালের ভ্যারাইটি আলিপুর জু মেইনটেইন করতে পারে। এতে বাঘ এসেছে দক্ষিণ ভারত, ভাইজ্যাগ থেকে এসেছে। চেন্নাই থেকে বাঘ আসার কথা আছে। আমাদের ইচ্ছা আছে নন্দন কানন থেকে নিয়ে আসা। আমরা শিলিগুড়ি বেঙ্গল সাফারি থেকে বাঘ নিয়ে এসেছি। এছাড়াও আমরা কথা বলছি যাতে মহারাষ্ট্র থেকে বাঘ নিয়ে আসা যায়। সাদা বাঘ আনা হবে যাতে আলিপুরের ট্র্যাডিশন বজায় থাকে।“
Published on: জুলা ২৯, ২০২৪ at ২১:৪৬