গোটা ভারতে হোমস্টে ও গ্রামীণ পর্যটনে উত্তরবঙ্গ সবচেয়ে বড় উদাহরণ – বাইচুং ভুটিয়া
Published on: ডিসে ৪, ২০২৪ at ২৩:৪৪
Reporter: Aniruddha Pal
এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ৪ ডিসেম্বর: আপনি কি গ্রামীণ পর্যটন পছন্দ করেন? বিশেষ করে হিমালয়ান রেঞ্জের কোনও গ্রামে গিয়ে ছুটি কাটাতে চান? শীতের মরশুমে পাহাড়ের কোলে বসে কমলালেবুর স্বাদ গ্রহণ করতে আগ্রহী? তাহলে আপনার সেই ইচ্ছা এবার পূরণ হতে চলেছে। কলকাতায় সিটি সেন্টার এক এ এমনই এক ব্যাতিক্রমী হিমালয়ান অরেঞ্জ ট্যুরিজম ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করেছে অ্যাসোসিয়েশোন ফর কনজার্ভেশন এন্ড ট্যুরিজম (ACT)। আগামি ৬ ডিসেম্বর থেকে এই উৎসব শুরু হবে। চলবে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সংস্থার হিমালয়ান রেঞ্জের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ভারতের জাতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক বাইচুং ভুটিয়া জানিয়ে দিলেন , তিনি নিজেও একজন পাহাড়ের মানুষ। তাই পাহাড়ের গ্রামকে তুলে ধরা এবং তার প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যে এই অরেঞ্জ ফেস্টিভ্যাল মানুষের কাছে পর্যটনের বার্তা পৌঁছে দেব।
মংপুতে রবি ঠাকুরের কমলালেবু ভাল লাগার গল্প শোনালেন রাজ বসু
কমলার মাধ্যমে দার্জিলিং পাহাড়ের সাথে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্পর্কের কারণেই এই কমলা উৎসবের সূচনা হয়েছিল। এই প্রসঙ্গ টেনে ACT এর সভাপতি রাজ বসু জানান, রবি ঠাকুর তাঁর জীবনকালে চারবার মংপুতে গিয়েছিলেন। পরের বার ফিরে আসার পর খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েন। শেষ যাত্রার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। এই কথাটি যখন মংপুর মানুষ শোনেন তখন তারা কমলালেবু এক জায়গায় জড়ো করে দুই ঝুড়িতে ভর্তি করে কমলেবু পাঠান। সে্টা দেখে রবি ঠাকুর শুয়ে শুয়ে কেঁদে ফেলেন। বলেন- আমার জীবনের যদি শ্রেষ্ঠ উপহার পেয়ে থাকি তাহলে বোধ হয় সেটা এই মংপুর কমলালেবুগুলি। এখান থেকেই আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল। আমাদের সঙ্গে নেপাল একটা কান্ট্রি পার্টনার হিসাবে থাকে।
ACT-র সূচনা ও হিমালয়ান অরেঞ্জ ট্যুরিজম ফেস্টিভ্যাল
রাজ বসু জানান, গ্রামীণ পর্যটন এবং হোমস্টে আন্দোলন, যা প্রায় তিন দশক আগে বেঙ্গল এবং সিকিম হিমালয় থেকে অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজম (ACT) দ্বারা শুরু হয়েছিল, এবং এখন সামনের আসন নিয়েছে, যা পূর্ব নেপাল, ভুটান, অরুণাচল প্রদেশে আরও প্রভাবিত করেছে। এবং সমস্ত প্রতিবেশী ল্যান্ডস্কেপ। পর্যটন মালিকানার মাধ্যমে কৃষি ও সংশ্লিষ্ট ঐতিহ্যে গ্রামবাসীদের গর্ব ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ACT তাদের এই আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের মূল্য উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছে। শহুরে বাজারের সাথে এই সমস্ত কিছুকে সংযুক্ত করা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি হয়ে উঠেছে এবং কলকাতার চেয়ে ভাল পৃষ্ঠপোষক আর হতে পারে না, এমন একটি শহর যেখানে প্রতিটি আত্মা জন্মগত পর্যটক। হিমালয় অঞ্চলের পর্যটনের জন্য এখানে কলকাতায় একত্র হওয়া সহজ ছিল, যেখানে বাসিন্দাদের মধ্যে এই অঞ্চলের প্রতি অগাধ ভালবাসা রয়েছে এবং তাই 2014 সালে হিমালয়ান অরেঞ্জ ট্যুরিজম ফেস্টিভ্যালের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী উত্সবটি 2016 সালে আয়োজন করা হয়েছিল। 2018, 2021, এবং 2022 সালের উৎসবের দ্বারা। এই বছর আমরা উৎসবের 6 তম সংস্করণ আয়োজন করতে যাচ্ছি কলকাতা।
রাজদার গোটা টিম গ্রামীণ পর্যটনকে প্রমোট করছে-বাইচুং
বাইচুং ভুটিয়া এই হিমালয়ান অরেঞ্জ ট্যুরিজম ফেস্টিভ্যাল নিয়ে বলেন যে এই হিমালয়ান রেঞ্জে অরেঞ্জ একটা জনপ্রিয় ফল। হিমাচল প্রদেশ, দার্লিং, সিকিম, অরিণাচল প্রদেশ, মেঘালয়ে অরেঞ্জের উৎপাদন হয়। এই অরেঞ্জের মাধ্যমে সংযুক্ত হয় গোটা হিমালয়ান রেঞ্জ। সিকিমে আমার নিজের গ্রামেও এই অরেঞ্জ উৎপাদন হয়ে থাকে। অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজার্ভেশন এন্ড ট্যুরিজম এই ফেস্টিভ্যাল করে আসছে। এবার তাদের এই উৎসব ছয় বছরে পড়ছে। এর মাধ্যমে হিমালয়ান রেঞ্জের গ্রামগুলি অনেকগুলি ভাল পরিবর্তন পেয়েছে। এখান থেকে কলকাতা থেকে পশ্চিমবঙ্গের নানা প্রান্ত থেকে বহু মানুষ সেখানে বেড়াতে গিয়ে সেইসব গ্রামের হোমস্টেগুলিতে থেকে নিজেদের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছে। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি দার্জিলিং গিয়েছিলেন। বিধানসভাতেও গ্রামীণ পর্যটন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও বলেছেন যে উত্তরবঙ্গে হোমস্টের মাধ্যমে মানুষের একটা আয় হতে পারে। ২০০১ সালে এই ACT র জন্ম হয়েছে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত রাজদার গোটা টিম গ্রামীণ পর্যটনকে প্রমোট করছে , ইতি মধ্যে উত্তরবঙ্গে তিন হাজার হোমস্টে ACT র সাথে কাজ করছে। হিমালয়ান রেঞ্জে কমপক্ষে ৩০ হাজার হোমস্টে রয়েছে যারা ACT র সাথে কাজ করছে। উত্তরবঙ্গ এই মুহূর্তে গোটা ভারতে বড় উদাহরণ হোমস্টে এবং গ্রামীণ পর্যটনের ক্ষেত্রে। আর এটা সম্ভব হয়েছে ACT র অসাধারণ কাজের জন্য। যেখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও ভারত সরকারের পর্যটন বিভাগের সহায়তা রয়েছে। শুধু উত্তরবঙ্গ নয় সিকিম, নাগাল্যান্ড, অরিণাচল প্রদেশ, নেপাল, ভুটান, হিমাচল প্রদেশ, দেরাদুন, এমনকী বাংলাদেশ।
বাইচুং আগামী ৬ ডিসেম্বর স্লটলেকে সিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত এই অরেঞ্জ ফেস্টিভ্যালে সবাইকে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন যে এখানে অনেক হোমস্টের মালিকরা উপস্থিত থাকবে। তারা তাদের গ্রামের কথা হোমস্টের কথা বলবেন।
কমলালেবু কলকাতায় নিয়ে আসার কাহিনি
পুরনো ইতিহাস তুলে ধরে অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজার্ভেশন এন্ড ট্যুরিজম-এর সভাপতি রাজ বসু বলেন- “ব্রিটিশ পিরিয়ডে দার্জিলিং এর অরেঞ্জ বিখ্যাত ছিল। আমরা জানি যে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া পিরিয়ডে চা-বাগাঙ্গুলিতে যখন খেলা হত তখন কালিম্পং ও দার্জিলিং থেকে ছোট ট্রেনে করে কমলেবু এসে পৌঁছত শিলিগুড়ি। এবং শিলিগিড়ি থেকে বড় ট্রেনে করে কলকাতায় কমলালেবু এসে পৌঁছত। সেখান থেকে তা বিদেশে যেত। এই ছিল কমলেলেবুর ভ্যালু। পাহাড়ের মানুষ এই কমলালেবুর ফলন থেকে যা পায় তা দিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। যে বড় বড় কমলালেবু চাষ হত তা আজ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সেখানে যে লেপচা , ভুটিয়া আছে তারা এর বিকল্প পাচ্ছিল না। কলকাতায় এই যে কমলালেবুর সমস্যা তা হাইলাইট করা উচিত। ২০১৪ সাল থেকে আমরা যখন এটা নিয়ে হাইলাইট করছি পশ্চিমবঙ্গ সরকার থেকে মংপুতে একটি কমলালেবুর রিসার্চ সেন্টার শুরু করেছে। শিলং-এ ছোট করে ফেস্টিভ্যাল হচ্ছে। আমরা ২০১০ আলে যে ফেস্টিভায়লতা শুরু করেছিলাম প্রধাণত সামসিং , জলঢাকা অঞ্চলে সেখান থেকে কিন্তু কলকাতায় আসার ইচ্ছা আমাদের মধ্যে আসে। আমরা সেখান থেকে সকলের নজর টানতে পারি। আমরা চাই ভারত সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার একসাথে মিলে সেখানে একটা সাইট্রাস রিসার্চ ইন্সটিটিউট তৈরি করুন। তাহলে এটার সাথে গ্রামীণ পর্যটনকেও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। আর সেটা আরও বেশি মজবুত হবে।
এবার স্টলের সংখ্যা ৪৫
এসিটি-র সহ-সভাপতি গীতালি লাহিড়ি বলেন- আগে কলকাতায় যখন আমরা এই ফেস্টিভ্যাল শুরু করেছিলাম তখন ২০টা স্টল ছিল। এখন তা দাঁড়িয়েছে ৪৫। সকলেই তাদের সাংস্কৃতিক দল নিয়ে, হেরিটেজ নিয়ে যোগ দিতে চায়। চা, কমলালেবু নিয়ে আসতে আগ্রহী। সেখানে একটা সুন্দর ফ্যাশন শো হয়। সেখানকার গ্রামীন সংস্কৃতি তারা তুলে ধরেন। দুপুর ১২টায় স্টল্গুলির খুলে যাবে।, কিন্তু অনুষ্ঠানের উদ্বোদন হবে দুপুর দুটোয়। এই ফেস্টিভ্যালের উদেশ্য হল সকলকে এক ছাতার তলায় এনে সকললের সঙ্গে মিলন ঘটানো। স্কোয়াশের মোমো পাবেন।
যেসব জায়গা থেকে অংশগ্রহণকারীরা আসছেন
অ্যাসোসিয়েশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মহাশ্বতা রায় জানান, এই ফেস্টিভ্যালে রাজ্য সরকারও সাহায্য করে থাকে। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনকে মাদের দেওয়া হয়, যারা এখানে অংশ নিতে আসে তাদের থাকার জন্য। ভারত সরকারের পর্যটন মন্ত্রক তারাও আর্থইক সাহায্য করে থাকেন। সল্ট লেকের বিবি ব্লক সাহায্য করছে। তারা তারাদের আবাসনে কয়েকটি ঘর পাহাড় থেকে আসা অংশগ্রহণকারী মানুষদের জন্য ছেড়ে দিয়ে সাহায্য করেছেন। নেপাল, ভুটাম মেঘালয়, স্কিম, দার্জিলিং , হি্মাচল প্রদেশ থেকেও অনেকে আসছেন তাদের প্রোডাক্ট নিয়ে।
এই বছর, পশ্চিমবঙ্গ এবং কলকাতার ট্যুর অপারেটর এবং অন্যান্য কৃষি উৎপাদন শিল্পের সদস্যদের জন্য 7 ডিসেম্বর দুপুর 12টা থেকে বিকাল 5টা পর্যন্ত গ্রামীণ পর্যটন স্টেকহোল্ডার এবং কৃষি উদ্যোগের সাথে আরও সংযোগ স্থাপনের জন্য একটা আলোচনা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অংশগ্রহণকারী সংস্থাগুলির গ্রামীণ সাংস্কৃতিক দলগুলিও তাদের সেরা পারফর্ম করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, আশা করি কলকাতার সাথে আরও ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবে।
Published on: ডিসে ৪, ২০২৪ at ২৩:৪৪