চার বছরে দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি বেড়েছে ২৮ লক্ষেরও বেশি

Main দেশ ভ্রমণ
শেয়ার করুন

Published on: আগ ১০, ২০২৩ @ ২১:৪৩

এসপিটি নিউজ, নয়াদিল্লি, ১০ আগস্ট: কয়েক বছর আগেও ছবিটা এমন ছিল না।এখন বদলাতে শুরু করেছে।গত চার বছরে দেশে বৈদ্যুতিক যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে অনেকটা, ২৮ লক্ষেরও বেশি। দেশে আরও বেশি করে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার প্রচারের জন্য কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প এবং কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রনালয় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছে। তার ফল অবশ্য ইতিমধ্যেই মিলতে শুরু করেছে। আর এই প্রচারে সাড়া দিয়ে সবচেয়ে বেশি বৈদ্যুতিক গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে উত্তরপ্রদেশে।আজ বৃহস্পতিবার লোকসভায় এক প্রশ্নের লিখিত জবাবে এই বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিয়ে লিখিত জবাবে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রী নিতিন গড়করি।

বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহার সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ২০২২ সালে

গত ৪ বছরে দেশে বৈদ্যুতিক যানবাহনের বৃদ্ধির হারও জানিয়েছেন মন্ত্রী। সেখানে দেখা গিয়েছে যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ২০২২ সালে-২০৯.১৭%। এই বছর দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি নিবন্ধন হয়েছে ১০ লক্ষ ২৪ হাজার ৮০৮। ২০১৮ সাল থেকে বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে রিপোর্ট অনুযায়ী। সেই বছর দেশে ১ লক্ষ ৩০ হাজার ২৫৪টি বৈদ্যুতিক গাড়ি নিবন্ধন হয়েছিল।পরের বছর ২০১৯ সালে সংখ্যাটা বেড়ে হয় ১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৮২২। ২৮.০৭% বৃদ্ধি পায়। ২০২০ সালে অবশ্য সংখ্যাটা আবার কমে ১ লক্ষ ২৪ হাজার ৬৫৪ হয়ে যাওয়ায় বৃদ্ধির হারও মাইনাস ২৫.২৮% দাঁড়ায়। তবে ২০২১ সাল থেকে বৃদ্ধির হার উর্ধ্বমুখী হয়েছে। ওই বছর অনেকটাই বেড়ে ৩ লক্ষ ৩১ হাজার ৪৬৬। তবে চলতি ২০২৩ সালের ৩ আগস্ট পর্যন্ত দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির সংখ্যা নিবন্ধন হয়েছে ৮ লক্ষ ৪৭ হাজার ৪৩৯। মনে করা হচ্ছে এই সংখ্যা গত বছরের সংখ্যাকে ছাপিয়ে যাবে।

দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহারের প্রবণতা যথেষ্ট বেড়েছে

দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহারের প্রবণতা যথেষ্ট বেড়েছে। সেটা কিন্তু প্রতিটি রাজক্যেই কম-বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে তো ব্যাটারি চালিত ই-রিকশার সংখ্যা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে শহরতলী ও মফস্বল এলাকায়। তাছাড়া ব্যাটারি কিংবা বৈদ্যুতিক গাড়ির সংখ্যায় এখন আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এখন বহু মানুষ বৈদ্যুতিক গাড়ির দিকে ঝুঁকছে। এই বিষয়ে একাধিক গাড়ি চালকের সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও এখন বৈদ্যুতিক গাড়িকেই সমর্থন করছে। তারা বলছেন- এতে অর্থ অনেকটাই সাশ্রয় হবে। এক লিটার প্রেট্রল-এ যে টাকা খরচ হয় আর তাতে যত টুকু দূরত্ব অতিক্রম করা যায় তার চেয়ে অনেক বেশি দূরত্ব যাওয়া যায় বৈদ্যুতিক গাড়িতে। একবার চার্জ করলেই অনেক দূরত্ব অতিক্রম করা সম্ভব। সেই চার্জিং-এর খরচ পেট্রলের তুলনায় অনেক কম।

আর সেটাই সরকার করছে। সেই দিকে খেয়াল রেখে এদিন লোকসভায় কেন্দ্রীয় সড়ক মন্ত্রী নিতিন গড়করি বলেন- ভারী শিল্প মন্ত্রনালয় ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রক দেশে আরও বেশি করে যাতে বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহার করা হয় সেজন্য কিছু উদ্যোগ নিয়েছে।

ভারি শিল্প মন্ত্রণালয় যে উদ্যোগগুলি নিয়েছে, তা হল-

  • ২০১৫ সালে ভারতে (হাইব্রিড ও) বৈদ্যুতিক যানবাহনগুলির দ্রুত দত্তক গ্রহণ এবং উত্পাদন (এফএএমই ইন্ডিয়া) স্কিম চালু করেছে এবং বর্তমানে, এফএএমই ইন্ডিয়া স্কিমের দ্বিতীয় পর্যায়টি ৫ বছরের জন্য কার্যকর করা হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০১৯ মোট বাজেটের সহায়তায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এফএএমই দুই স্কিম ৭,০৯০টি ই-বাস, ৫ লক্ষ ই-থ্রি-হুইলার, ৫৫ হাজার ই ফোর-হুইলার প্যাসেঞ্জার কার এবং ১০ লক্ষ ই-টু-হুইলারে ভর্তুকি দিয়ে পাবলিক এবং শেয়ার্ড ট্রান্সপোর্টেশনের বিদ্যুতায়নকে সমর্থন করে৷
  • দেশে ব্যাটারির দাম কমানোর জন্য সরকার ১২ মে, ২০২১-এ দেশে অ্যাডভান্সড কেমিস্ট্রি সেল (এসিসি) তৈরির জন্য একটি প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভ (পিএলআই) স্কিম অনুমোদন করেছে। ব্যাটারির দাম কমার ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির খরচ কমে যাবে।
  • বৈদ্যুতিক যানবাহনগুলি অটোমোবাইল এবং অটো কম্পোনেন্টগুলির জন্য প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভ (পিএলআই) স্কিমের আওতায় রয়েছে, যা ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১-এ অনুমোদন করা হয়েছিল রুপি বাজেটের ব্যয় সহ। পাঁচ বছরের জন্য ২৫,৯৩৮ কোটি টাকা।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রকের উদ্যোগ –

  • ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর থেকে এস.ও. ৫৩৩৩(ই) অনুসারে ব্যাটারি চালিত পরিবহন যানবাহনগুলিকে অনুমতির প্রয়োজনীয়তা থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
  • ব্যাটারি চালিত যানবাহনগুলিকে ২ আগস্ট, ২০২১ তারিখে জিএসআর ৫২৫ (ই) এর মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট ইস্যু বা পুনর্নবীকরণ এবং নতুন নিবন্ধন চিহ্ন প্রদানের উদ্দেশ্যে ফি প্রদান থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
  • ১৮ এপ্রিল, ২০২৩ তারিখে জিএসআর ৩০২(ই) এর মাধ্যমে পারমিট ফি প্রদান ছাড়াই ব্যাটারি চালিত যানবাহনের জন্য অল ইন্ডিয়া ট্যুরিস্ট পারমিট জারি করা হয়।

এতগুলি সুবিধা দেওয়ার ফলে এখন দেশজুড়ে বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহারের প্রবণতা ক্রমে বাড়ছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পেশ করা তথ্য অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে যে সারা দেশে এখন সবচেয়ে বেশি বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যহার করছে উত্তরপ্রদেশ। সেখানে সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৫ লক্ষ ৭৪ হাজার ৯৬৭। এরপর আছে মহারাষ্ট্র-৩ লক্ষ ৫ হাজার ৬। তারপর কর্নাটক-২ লক্ষ ৪৮ হাজার ৭৪৭। দিল্লি- ২ লক্ষ ৩৩ হাজার ২১২, রাজস্থান ১ লক্ষ ৮০ হাজার ৬৭০, তামিলনাড়ু- ১ লক্ষ ৭৩ হাজার ১৫২, বিহার ১ লক্ষ ৬১ হাজার ৬০, গুজরাত ১ লক্ষ ৩৮ হাজার ৪১০, অসম ১ লক্ষ ২০ হাজার ৪২৩। তবে বাকি সব রাজ্যে সংখ্যাতা এখনও এক লাখের নীচে আছে। পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যাটা ৬৮ হাজার ৩৭৬।মোট ৩৪টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বৈদ্যুতিক গাড়ির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ লক্ষ ৩০ হাজার ৫৬৫।

যদিও এই সংখ্যাটা অবশ্য কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রী নিতিন গড়করির পেশ করা সরকারি তথ্য অনুযায়ী।

Published on: আগ ১০, ২০২৩ @ ২১:৪৩


শেয়ার করুন