অপরাধীরা রাজস্থানের ভরতপুরের, সাবধান করে কলকাতা পুলিশের সাইবার ব্রাঞ্চ জানাল রক্ষা পাবার উপায়

Main দেশ ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: সেপ্টে ২৬, ২০২৩ at ১৮:৩২
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ২৬ সেপ্টেম্বর: অন্যান্য সব অপরাধকে ছাপিয়ে গেছে এখন সাইবার অপরাধ। তা সে ছোট কিংবা বড় ক্ষেত্রে এই অপরাধ এখন ভয়ানক আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষের হাতে যত বেশি মোবাইল ফোন কিংবা ল্যাপটপ কিংবা ইন্টারনেট সুবিধা আসছে ততই যেন সাইবার অপরাধ আজ অক্টোপাসের মতো ছেয়ে ফেলেছে। গতকাল কলকাতায় ট্রাভেল এজেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া বা টাফি সাইবার অপরাধ বিষয়ে বিশেষ এক অধিবেশনের আয়োজন করেছিল। যেখানে কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগের পুলিশ আধিকারিকরা জানালেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। তাদের নজরে এখন রাজস্থান। কারণ সেখানে বসেই চলছে এই অপরাধ।ইতিমধ্যে রাজস্থানের ভরতপুর থেকে কলকাতা পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। মানুষকে সাবধান করে দিয়ে তারা জানাল কিভাবে সাইবার অপরাধ থেকে মানুষ নিজেকে রক্ষা করবে।

কলকাতা পুলিশের সাইবার আধিকারিকরা জানালেন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-অনিল পাঞ্জাবি

সোমবার কলকাতায় কেনিলওয়ার্থ হোটেলে টাফি এক সভায় আয়োজন করে। সেখানেই কলকাতা সাইবার ব্রাঞ্চের আধিকারিকরা তাদের মূল্যবান বক্তব্য রাখেন।টাফি’র ন্যাশনাল কমিটির মেম্বার অনিল পাঞ্জাবি বলেছেন- বর্তমানে সাইবার অপরাধ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সাধারণ মানুষ সর্বত্র আজ এই অপরাধের শিকার হচ্ছে। কারও ফোন হ্যাক হচ্ছে তো কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে যাচ্ছে। এমনকি ফেক কিছু সাইট তৈরি করে মানুষকে ধোকা দিয়ে টাকা লুটে চলেছে সাইবার অপরাধীরা। আমরা এই বিষয়টি নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে এদিন কলকাতা পুলিশের সাইবার ব্রাঞ্চের আধিকারিকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। তারা তাদের মূল্যবান বক্তব্য তুলে ধরে আমাদের সহযোগিতা করেছেন।

সাইবার অপরাধের মূলতঃ দুটি দিক

এদিন বক্তব্যের শুরুতে কলকাতা পুলিশের ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের এসিপি  প্রসেনজিৎ ভট্টাচার্য সাইবার অপরাধ বিষয়ে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন- আমরা সাইবার অপরাধ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করি। এটি ভিন্ন ধরনের অপরাধদ। এই অপরাধ মূলত ভিন্ন প্রকৃতির। প্রথমে অপারেটররা কিছু বার্তা, কিছু ফটো দিয়ে বিরক্ত করেছে, প্রাথমিকভাবে এটাতেই সীমাবদ্ধ ছিল।এরপর অপরাধের ধরন পাল্টাতে থাকে। এটি হোয়াটসঅ্যাপ এবং অন্যান্য উপায়ে মহিলাদের ফটোগ্রাফ এবং অফসিনে সীমিত কোনও কাজ নয়।তারা মনস্তাত্ত্বিকভাবে উপহাসকারী মন। আমাদের ল্যাপটপ, আমাদের কম্পিউটার, আমাদের ইন্টারনেট সবকিছুই চালু আছে। ভার্চুয়াল জগতে কোনো সন্দেহ ছাড়াই আমরা একা একা রোম করি। সামাজিক প্ল্যাটফর্মে আমাদের উপস্থিতি আমাদের কাছ থেকে প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করে। তারা সেখানে আর্থিক দিকও সংগ্রহ করে। তাতেই সমস্যা দেখা দেয়। তাই সাইবার সিকিউরিটি, সেফটি নিয়ে আলোচনা আজ জরুরী হয়ে পড়েছে। এই অপরাধের দুটি দিক- এক, সামাজিক সম্মান নষ্ট হয় এবং দ্বিতীয়ত, আপনার আর্থিক দিকের ক্ষতি হয়। কিছু সময় সিইএসসি কর্তৃপক্ষের একটি বার্তা পান, যে আপনার বিদ্যুৎ বিল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এবং এই বার্তা পেয়ে আপনি খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন। আর অপরাধীরা আপনার সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ব্যাঙ্ক তথ্য বের করে নিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়। তাহলে এর থেকে রক্ষার উপায় কি? এজন্য সবসময় আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে।

ইদানিং সাইবার অপরাধ বেশ আকার নিতে চলেছে। কলকাতা পুলিশের সাইবার পুলিশ স্টেশনের আধিকারিকদের কাছে এমন কিছু তথ্য এসেছে যা খুবই চাঞ্চল্যকর। তদন্তে নেমে তারা যা জানতে পেরেছে তা সত্যি অবাক করে দেবার মতো বিষয়।সাইবার অপরাধ আর রাজস্থান। সত্যি অবাক করার মতো বিষয়।

রাজস্থানের ভরতপুর থেকে এই কল জেনারেট হচ্ছে- সাইবার ব্রাঞ্চ

কলকাতা পুলিশের সাইবার ব্রাঞ্চের আধিকারিকদের কথায় – “এই অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে রাজস্থানে বসেই। আমরা তার প্রমাণও পেয়েছি। তাই তারা সবাইকে সাবধান করে দিচ্ছে।”

কলকাতায় টাফি’র এক সভায় সাইবার অপরাধ বিষয়ে বক্তব্য রাখার সময় সাইবার পুলিশ স্টেশনের আধিকারিক রাজা দাস বলেন- এখন হোয়াটসআপ কল থেকে অনেকের ফোনেই অপরিচিত হোয়াটসআপ ভিডিও কল আসে। অনেক সময় সেতা কোনও মহিলার হয়। ট্রু-কলার দিয়ে দেখলে জানবেন এটা পশ্চিমবঙ্গ কিংবা অসম থেকে হচ্ছে। কিন্তু পুরোটাই ধোকা। এই কল জেনারেট হচ্ছে রাজস্থানের ভরতপুর থেকে। আমরা এমন অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তে জানা গেছে যে ওই ভিডিও কলে একজন মহিলার নগ্ন শরীর দেখায়। পরক্ষনেই সেই কল বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এরপর আবার ওই মহিলা ফোন করে আত্মহত্যার হুমকি দেয় নতুবা মোটা টাকা দেবার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। আমরা তদন্ত করতে গিয়ে জেনেছি এই কল পশ্চিমবঙ্গ কিংবা অসমের নয় রাজস্থানের ভরতপুর থেকে করা হয়। ইতিমধ্যে আমরা ভরতপুর থেকে কিছু ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছি। একজন এখনো এক বছরে জেলে আছে।এটি যৌন নির্যাতন।”

m-adhar ডাউনলোড করুন এবং আপনার বায়োমেট্রিক লক করুন

অন্য আরেকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে – AEPS সমস্যা, যার অর্থ ‘আধার এনাবল পেমেন্ট সিস্টেম’। আপনার প্লে-স্টোর থেকে এম-আধার ডাউনলোড করুন। বা এপেক্স স্টোর। অন্যথায় আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে আপনার টাকা চলে যেতে পারে. এবং সৌভাগ্যক্রমে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া থানাতেও একটি কেস হয়েছে। ইতিমধ্যেই চা বাগান থেকে কয়েকজনকে ট্র্যাক করা হয়েছে। অনুগ্রহ করে m-adhar ডাউনলোড করুন এবং আপনার বায়োমেট্রিক লক করুন। আর হোটেল বুকিং-এর ক্ষেত্রে গুগল প্ল্যাটফর্মে গিয়ে বুকিং করবেন না। যদি বুক করতেই হয় তাহলে সেই হোটেলের নিজস্ব ওয়েবসাইটে গিয়ে বুকিং করুন।  নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন।

হ্যাকারদের হাত থেকে আপনার ফোন সুরক্ষিত করুন…

এজন্য এইগুলি মেনে চলার পরামর্শ দেন কলকাতা সাইবার পুলিশ স্টেশনের আর এক পুলিশ আধিকারিক অলোক মাজি। এগুলি হল-

  • সর্বদা একটি পিন/পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন
  • শুধুমাত্র অফিসিয়াল স্টোর থেকে অ্যাপস ডাউনলোড করুন
  • আপনার অ্যাপস এবং অপারেটিং সিস্টেম আপ-টু-ডেট রাখুন
  • অটো-লগইন এড়াতে চেষ্টা করুন
  • ‘আমার ফোন খুঁজুন’ সক্ষম করুন
  • ব্যক্তিগত/আর্থিক অ্যাপ লক করুন
  • Whatsapp থেকে প্রাপ্ত OTP শেয়ার করবেন না
  • অনিরাপদ পাবলিক ওয়াইফাই এড়িয়ে চলুন
  • নিয়মিত আপনার ব্রাউজিং ইতিহাস, কুকিজ, এবং ক্যাশে মুছে দিন
  • সুরক্ষা বাড়ায় এমন একটি নিরাপত্তা অ্যাপ ব্যবহার করুন

টাফি’র ন্যাশনাল কমিটির মেম্বার অনিল পাঞ্জাবি বলেন- কলকাতা পুলিশের সাইবার ব্রাঞ্চের পুলিশ অফিসাররা তাফি’র সভায় এসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। আমরা তাদের মূল্যবান পরামর্শ অনুরসরণ করব।

Published on: সেপ্টে ২৬, ২০২৩ at ১৮:৩২


শেয়ার করুন