- চাও ফ্রেয়া থাইল্যান্ডের প্রধান নদী।
- একথা আমি বলতেই পারি যে দেশটির রাজধানী ব্যাংককে ঘুরে করোনাভাইরাসের সেরকম কোনও প্রভাব কিন্তু আমার চোখে পড়ল না।বিশেষ করে যে বিষয়ের উপর এই প্রতিবেদন লিখছি সেখানে তো নয়ই।
- এই ক্রুজে উঠলে আপনি এক অন্য জগতে পৌঁছে যাবেন। প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের অসাধারণ সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন দেখার সুযোগ হবে।
Published on: মার্চ ১৪, ২০২০ @ ২০:২৭
ব্যাংকক থেকে ফিরে লিখেছেন
সংবাদ প্রভাকর টাইমস-এর
Editor-in-Chief: Aniruddha Pal
এসপিটি নিউজ, ১৪ মার্চ: ব্যাংকক বেড়াতে গিয়ে চাও ফ্রেয়া রিভার ক্রুজ-এ রাতের আহার যদি না করেন তাহলে আপনার ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এটা শুধু আমার মত নয় যারাই ব্যাংকক বেড়াতে গিয়েছে তাদের বেশিরভাগেরই এমনই মত। মাত্র ১০ দিন আগে ঘুরে এসেছি। কিন্তু এখনও তার রেশ রয়ে গিয়েছে আমারে মনের ভিতর। জ্বলজ্বল করছে সেই স্মৃতি। নদীর বুকে এমন সুন্দর বিনোদনমূলক ভ্রমণ আপনাকে এক অন্য জগতে পৌঁছে দেবে। যারা করোনা নিয়ে ভাবছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলি- থাইল্যান্ডে এই করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সেদেশের সরকার যে্সমস্ত ব্যস্থা গ্রহণ করেছে তাতে পর্যটকরা একেবারে সুরক্ষিত। নিশ্চিন্তে ঘুরে আসতে পারেন।
চাও ফ্রেয়া নদীর বর্ণনা
চাও ফ্রেয়া থাইল্যান্ডের প্রধান নদী। এর নীচু পলল সমভূমি দেশের কেন্দ্রস্থল গঠন করে।এটি ব্যাংককের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে থাইল্যান্ডের উপসাগরে গিয়ে মিশেছে।
চাও ফ্রেয়া নাখন সাওয়ান প্রদেশের নাখন সাওয়ান (যাকে পাক নাম ফোও বলা হয়) এর পিং এবং নান নদীর সঙ্গমে শুরু হয়। এর পরে এটি কেন্দ্রীয় সমতল থেকে ব্যাংকক এবং থাইল্যান্ডের উপসাগরে 372 কিলোমিটার (231 মাইল) দক্ষিণে প্রবাহিত হয়। চই নাট-এ নদীটি মূল পথ এবং থা চিন নদীতে বিভক্ত হয়, যা মূল নদীর সমান্তরালে প্রবাহিত হয় এবং থাইল্যান্ডের উপসাগরে সমুত সখনের ব্যাংকক থেকে প্রায় 35 কিলোমিটার (22 মাইল) পশ্চিমে প্রস্থান করে। চৈনত বাঁধের নীচে শুরু হওয়া নিম্ন পললভূমিতে অনেকগুলি ছোট ছোট খাল (খালং) রয়েছে যা মূল নদী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। খালগুলি এই অঞ্চলের ধানচাষে সেচের জন্য ব্যবহৃত হয়।
চাও ফ্রেয়া নদীর প্রধান উপনদীগুলি হল পা সাক নদী, সাকাই ক্র্যাং নদী, নান নদী (মূল প্রধান যোম নদী সহ), পিং নদী (এর মূল সঙ্গম, ওয়াং নদী সহ) এবং থা চিন নদী। এই উপনদীগুলির প্রত্যেকটি (এবং চাও ফ্রেয়া নিজেই) খোয়া নামে অভিহিত ছোটখাটো উপনদীগুলির দ্বারা বাড়ানো হয়। কম খাওয়া সহ সমস্ত শাখা প্রশাখাগুলি একটি বৃহত বৃক্ষের মতো প্যাটার্ন গঠন করে, মধ্য এবং উত্তর থাইল্যান্ডের প্রায় প্রতিটি প্রদেশে শাখা প্রবাহিত হয়। চাও ফ্রেয়ার কোন শাখা নদী সীমানা পেরিয়ে প্রসারিত হয়নি। নান এবং ইওম নদী নাখোন সাওয়ান প্রদেশের উত্তরে ফিটসানুলোক থেকে চুমস্যাং পর্যন্ত প্রায় সমান্তরালভাবে প্রবাহিত। ওয়াং নদী টাক প্রদেশের সাম নাগাও জেলার কাছে পিং নদীতে প্রবেশ করে।
এমন নদীর উপর দিয়ে ভেসে নৌবিহারের মজা নিতে কি আপনি চান না? থাইল্যান্ড ট্যুরিজম আমাদের কয়েকজন ভারতীয় সাংবাদিকদের সেই সুযোগ করে দিয়েছিল সাম্প্রতিক সফরে। লক্ষ্য পরিষ্কার- করোনাভাইরাসের আতঙ্ক সেভাবে প্রভাব ফেলতে পারেনি দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার এই অপূর্ব দেশটিতে। আশপাশের সমস্ত দেশ যখন নভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ব্যস্ত সেইসময় থাইল্যান্ড তাদের দেশের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর।সত্যি বলতে কি- একথা আমি বলতেই পারি যে দেশটির রাজধানী ব্যাংককে ঘুরে করোনাভাইরাসের সেরকম কোনও প্রভাব কিন্তু আমার চোখে পড়ল না।বিশেষ করে যে বিষয়ের উপর এই প্রতিবেদন লিখছি সেখানে তো নয়ই। ভারতীয় থেকে শুরু করে থাইল্যান্ডের মানুষ এমনকী বিদেশিরা সকলে একজোট হয়ে প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যের সংস্কৃতিকে এক করে বিনোদনের আনন্দে মেতে উঠলেন।
চাও ফ্রেয়া রিভার ক্রুজ-এ ডিনার
থাইল্যান্ড ট্যুরিজম-এর বিশেষ আমন্ত্রণে তিনদিনের ব্যাংকক সফরে গিয়েছিলাম। সেখানেই এই অসাধারণ অভিজ্ঞতার স্মৃতি রোমন্থনের সূযোগ মিলেছে। আমাদের ক্রুজের সময় ছিল সন্ধ্যার দিকে। যথসময়ে এসে হাজির হয় ক্রুজটি।থাইল্যান্ড ট্যরিজমের দিল্লি অফিসের মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ পিঙ্কি অরোরার নেতৃত্বে আময়াদের যাত্রা শুরু হয় এই অপূর্ব সুন্দর ক্রুজে। আমাদের মতো সেদিন সেখানে অন্যান্য বহু দেশের একাধিক যাত্রী সওয়ার হয়েছিলেন। আমাদের সকলকে স্বাগত জানাতে ডেকের উপর থাই নৃত্য পরিবেশন করে অভিবাদন জানান এক থাই তরুণী।এর পর আমরা ভিতরে প্রবেশ করি।
আমাদের স্থান হয়েছিল ক্রুজের দু’তলায়। খোলা আকশের নীচে একটি টেবিল দেওয়া হয়েছিল। সেখানেই আমাদের গোটা দল বসে। আমাদের দলে ছিল মোট ছয়জন। টেবিলেন আগে থেকেই সব কিছু সাজানো ছিল। ক্রুজ যাত্রা শুরু করতেই যার যার মতো খাবার নিয়ে আসতে শুরু করে। আমিও আমার পছন্দের ভারতীয় খাবার নিয়ে এসে আমাদের টেবিলে বসি। ততক্ষণে স্যাক্সোফোনে মধুর সুর বাজতে শুরু করে দিয়েছে। এক থাই তরুণী তার সুরেলা কণ্ঠে পাশ্চাত্য সঙ্গীত গাইতে শুরু করেন। গানের তালে তালে শুরু হয়ে যায় নাচ। স্প্যানিশ, পর্তুগীজ থেকে ভারতীয় সকলেই এক তালে নাচ শুরু করে।সে এক অপূর্ব স্মৃতি। আমাদের ক্রুজ ধীরে এগিয়ে চলতে থাকে তার রুট ধরে।
যে রুটে ক্রুজ এগিয়ে চলে
আমরা উঠেছিলাম আইকন সিয়াম পিয়ার থেকে। ক্রুজ যে পথে চলে সেখানে দেখা যায় তাসকিন ব্রিজ, সাংগ্রি্লা হোটেল, পেনিসুয়ালা হোটেল, ম্যান্ডারিল ওরিয়েন্টাল হোটেল, মিলেনিয়াম হিলটন হোটেল, রয়্যাল অর্কিড শেরাটন হোটেল, মেমোরিয়াল ব্রিজ, ওয়াট কানলায়া, ওয়াট ফো, ওয়াট অরুন, দ্য গ্র্যান্ড প্যালেস, থাম্মাসাত ইউনিভার্সিটি, রামা ভিল ভিলেজ।
অফুরন্ত বিনোদন
এই ক্রুজে উঠলে আপনি এক অন্য জগতে পৌঁছে যাবেন। প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের অসাধারণ সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন দেখার সুযোগ হবে। কারণ, এখানে যেমন ইউরোপিয়ানরা থাকে ঠিক তেমনই দেখা মিলবে বহু ভারতীয়ের সঙ্গে। যাদের অনেকেই আবার এই থাইল্যান্ডেই নিবাস করেছে। অনেকে আবার ভারত থেকে বেড়াতেও আসে। স্যক্সোফোনের সুরে, পাশ্চাত্যের গানে এবং তালে আপনি কোমর না দুলিয়ে পারবেন না। চাও ফ্রেয়া রিভার ক্রুজে নৈশাহার তাই সত্যি এক অসাধারণ মুহূর্ত উপহার দেবে আপনাকে।
Published on: মার্চ ১৪, ২০২০ @ ২০:২৭