CAMEL FESTIVAL 2020: ১১ ও ১২ জানুয়ারি বিকানীর হয়ে উঠতে চলেছে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের মিলন ক্ষেত্র

Main এসপিটি এক্সক্লুসিভ দেশ ভ্রমণ
শেয়ার করুন

  • বিকানীরে ১১ জানুয়ারি মহারাজা কর্ণ সিং স্টেডিয়ামে এই উৎসবের উদ্বোধন হতে চলেছে।
  • এই উৎসব ১৫ বছর ধরে চলছে। আন্তর্জাতিক স্তরে এর একটা বিশাল জনপ্রিয়তা আছে।
  • বিকানীরের উটকে সবচেয়ে সুন্দর ক্যামেল মানা হয়ে থাকে।
  • ক্যামেল কিভাবে স্যালুট করে ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে। বিশেষ অতিথিকে, মুখ্য অতিথিকে তা দেখা যাবে।

Reporter: ANIRUDDHA PAL

Published on: জানু ১০, ২০২০ @ ২৩:৩২

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ১০জানুয়ারি:  ভারতে পর্যটন মানচিত্রে রাজস্থান তার শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে। তাদের একাধিক উৎসবের মাধ্যমে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য উট উৎসব। যাকে ঘিরে ইতিমধ্যে সেজে উঠেছে রাজস্থানের বিকানীর। এই স্থানেই অনুষ্ঠিত হতে চলেছে আন্তর্জাতিক উট উৎসব। যা দেখার জন্য দেশ-বিদেশের হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমাতে শুরু করেছেন। কলকাতা থেকেও অনেকেই রওনা হয়ে গিয়েছেন এই উৎসবে যোগ দিতে। আর এই উৎসব নিয়েই সংবাদ প্রভাকর টাইমস মুখোমুখি হয়েছিল রাজস্থান পর্যটন বিকাশ নিগমের কলকাতা শাখার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক হিঙ্গলাজ দন রত্নুজির। এই উৎসব সম্পর্কে তিনি জানালেন নানা কথা। আসুন তাঁর মুখ থেকেই জেনে নেওয়া যাক এই আন্তর্জাতিক উট উৎসবের ইতিকথা।

যেখানে হতে চলেছে এই উৎসব

হিঙ্গলাজজি জানালেন- “১১ জানুয়ারি থেকে আন্তর্জাতিক উট উৎসব শুরু হবে। চলবে ১২জানুয়ারি পর্যন্ত।আন্তর্জাতিক মানচিত্রে এই উৎসব বিশেষ স্থান অধিকার আছে। মরু মহোৎসব ক্যামেল ফেস্টিভ্যাল, এলিফ্যান্ট ফেস্টিভ্যাল, ব্রিজ ফেস্টিভ্যাল এরকম একাধিক ফেস্টিভ্যাল আমাদের রাজস্থান পর্যটন দফতর বিকাশ নগমের অধীনে হয়ে থাকে। এর মধ্যে বিকানীরে অনুষ্ঠিত এই ক্যামেল ফেস্টিভ্যাল খুবই আকর্ষক স্থান নিয়েছে। যা ইন্টারন্যাশনাল উ্ট উৎসব-২০২০। যার শুভ উদ্বোধন হবে বিকানীরে ১১ জানুয়ারি মহারাজা কর্ণ সিং স্টেডিয়ামে।যিনি ইন্টারন্যাশনাল শ্যুটার ছিলেন। যাকে ভারত সরকার পদ্মশ্রী উপাধিতে সম্মানিত করেছে। অর্জুন পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন তিনি। ওনার স্মৃতিতেই এই স্টেডিয়াম বানানো হয়েছে। সেখানেই এবারের উট উৎসব আয়োজিত হতে চলেছে। এই উৎসবে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক সমবেত হবে। ভারত এমনকী বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে এই সমস্ত পর্যটক এখানে এসে এই আকর্ষক উৎসবের আনন্দ উপভোগ করবেন।”

যে সময় এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে

“এই উৎসব প্রতি বছর জানুয়ারি মাসেই অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে এখন পর্যন্ত এই উৎসব ১৫ বছর ধরে চলছে। আন্তর্জাতিক স্তরে এর একটা বিশাল জনপ্রিয়তা আছে। বিশেষ করে ইংরেজ পর্যটক এখানে আসে। কারণ ফেস্টিভ্যালে পুরোটাই গ্রামীণ পরিবেশের মধ্যে কলা-সাহিত্য-সংস্কৃতির উপর নানা ধরনের দিক তুলে ধরা হয়। যেখানে হেরিটেজ, হসপিটালিটি, খানাপিনা সব কিছুর ব্যবস্থা হয়ে থাকে।”

“রাজস্থান পর্যটন বিভাগ, রাজস্থান সরকার এধরনের উৎসব করে থাকে নিয়মিতভাবে। এতে পর্যটনের এক দিক মেলে। এতে পর্যটনের ভাবমূর্তি আরও সুদৃঢ় হয়। বিদেশে এখানকার পর্যটন সম্পর্কে একটা বাড়তি আকর্ষণ তৈরি হয়। ফের এই উৎসবই আমাদের মূল ভিত্তি। যার আকর্ষণে পর্যটক সোজা চলে আসে রাজস্থানে।”

কেন এই উট উৎসব

আমি এই উৎসবের বিশেষত্ব নিয়ে বলতে চাই। এই উট উৎসব নাম কেন দেওয়া হয়েছে? এর পিছনে একটা প্রধান কারণ রয়েছে। আপনারা দেখেন উ্টকে। যাদের হিন্দিতে বলা হয়-পুষ্ট অনুসন্ধান কেন্দ্র। আর ইংরাজিতে বলা হয় ন্যাশনাল রিসোর্স সেন্টার অন ক্যামেল(এনআরসিসি)। এশিয়াতে একটাই আছে তা হল বিকানীরে। এই উট নিয়ে গবেষণাও হচ্ছে। শুধু বিকানীর কেন? কারণ, এই বিকানীরের উটকে সবচেয়ে সুন্দর ক্যামেল মানা হয়ে থাকে। এক পুরনো দোহা এই নিয়ে প্রচলিত আছে- সেখানে বলা হয়েছে – “উট, মিঠা্ই,‌ স্ত্রী, সোন্‌ গহরলো সা/পাঁচ চিচ প্রতি সেরে বাগি কা নাওয়া।” বিকানীরকে সংক্ষেপে বিকানা বলা হয়ে থাকে। এতে বিকানীরের পাঁচ দিক উল্ল্যেখ করা হয়েছে। ১) উট- বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরতম উট বিকানীরে। আপনারা ক্যামেল ফেস্টিভ্যালে যদি যান তাহলে সেখানে গিয়ে দেখবেন উটের কতরকম দিক। সেখানে উটের চলাফেরা, উটের খাওয়া-দাওয়া, নাচা, শৃঙ্গার, পায়ে ঘুঙরু-পায়েল লমঝম করতে করতে চলছে। তাদের নানা দিক আপনারা দেখতে পাবেন। এর সঙ্গে আপনি দেখতে পাবেন ক্যামেল ড্যান্স। ক্যামেল কিভাবে স্যালুট করে ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে। বিশেষ অতিথিকে, মুখ্য অতিথিকে। এটা খুবই স্বাভাবিক যে উট খুবই প্রভুভক্ত প্রাণী মানা হয়ে থাকে। এরা খুব সহজেই পোষ মানে। এরা যার কাছে থাকে তার কথা শোনে। এক সময় রাজস্থানের যোগাযোগ মাধ্যমে একমাত্র অবল্বন ছিল এই উট। বিকানীরের পাঁচটি জিনিস বিখ্যাত- উট, মিঠাই। ২) মিঠাই আর নিমকির জন্য বিকানীর সারা বিশ্বে বিখ্যাত। যেমন আপনারা দেখেন এই যে হলদিরাম- হলদিরাম আসলে বিকানীরের মানুষ। ঠিক তেমনই ছোটু-মোটু, ভিকারাম চান্দমলি এরা সকলেই বিকানীরের। ৩) এরপর আসে বিকানীরের স্ত্রী- ঠিক তেমনই বিকানীরের মেয়েরা খুব সুন্দরী। ঢোলা এবং মারুর যে প্রেম কাহিনি আছে তা খুবই প্রাচীন। যা লায়লা-মজনুর আগে থেকে চলে আসছে। ঢোলা-মারু যাদের সঙ্গে বিকানীরের সম্পর্ক ছিল। মারু বিকানীরের ছোট একটি স্থান। সেখানকার রাজকুমারী ছিলেন। ঢোলা ছিলেন গুজরাটের এক অঞ্চলের রাজকুমার। যেমনটা মুমল এবং মাহিন্দ্রার প্রেম কাহিনি। মুমুল জয়শলমীরের রাজকুমারী  আর মাহিন্দ্রা অমরকোটের রাজকুমার। এসব প্রেম কাহিনি চলে আসছে। ৪) এরপর আসে সোনার গয়না-কুন্দন যে আছে তা সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ জিনিসটাই হল বিকানীরের। যা বিকানীরে তৈরি হয়। আর রইল বাকি সা। ৫) সা বলতে বোঝায় মারোয়ারিকে। আপনি কলকাতার বড়বাজারে চলে যান সেখানে গিয়ে যে পাথরের খোঁজ করবেন তা বিকানীরের মারোয়ারির কাছেই পৌঁছবে। গঙ্গাসর ভীমাসোর শীতল, দেশনখ, লোখা, যেসমস্ত নাম এসবই যে বিকানীরের।

যে দুদিন উৎসব চলবে

১১ ও ১২জানুয়ারি দু’দিন ধরে চলবে এই উৎসব। এর উদ্বোধন করবে জেলাশাসক কুমারপাল গৌতম, থাকবেন পর্যটন বিভাগের উর্দ্ধতন আধিকারিক, যেখানে থাকবেন ডাইরেক্টর, অ্যাসিস্ট্যান্ট ডাইরেক্টর, ডেপুটি ডাইরেক্টর সকলেই থাকবেন।খুব সুন্দর আয়োজন করা হয়েছে। পুরনো শহর থেকে শুরু করে জুনাগড় থেকে মহারাজা কর্ণ সিং স্টেডিয়ামে পৌঁছবে। রাজস্থানের লোক শিল্পীরা সেখানে পারফর্ম করবেন। কলসি নিয়ে রাজস্থানের ঐতিহ্যশালী নৃত্য পরিবেশন করবেন সেখানকার শিল্পীরা। এরপর প্রতিযোগিতা হবে- যার মধ্যে রয়েছে উটের নানা দিক। সন্ধ্যায় রাজস্থান ও অন্য রাজ্যের শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করবেন। দিনের শেষে আতসবাজির প্রদর্শনের মাধ্যমে উৎসবের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে।

উৎসবে যা থাকছে

আগামিকাল সকালে বিকানীরে শহরে ১৫ কিলোমিটার উটের পিঠে ভ্রমণ- পর্যটকদের জন্য। এরপর থাকছে উটের পরিক্রমা- যা শুরু হবে জুনাগড় দুর্গ থেকে শেষ হবে মহারাজা কর্ণ সিং স্টেডিয়ামে। এরপর শুরু হবে উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।এরপর থাকছে সেবনাবাহিনীর দ্বারা ব্যাগপাইপার ব্যান্ডের আবৃত্তি। উটকে সাজানোর প্রতিযোগিতা। উটের পশম কাটার প্রতিযোগিতা। উটের নৃত্য প্রতিযোগিতা।এরপর থাকছে মিস মারভান প্রতিযোগিতা। পরে মিস্টার বিকানা প্রতিযোগিতা। পরদিন থাকছে রাম্পুরানা হাভেলি থেকে লক্ষ্মিনাথজির টেম্পল পর্যন্ত হেরিটেজ পরিক্রমা। উট দৌড় ও ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা। থাকছে আরও একাধিক প্রতিযোগিতা।

Published on: জানু ১০, ২০২০ @ ২৩:৩২

 

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

9 + 1 =