সংবাদদাতাত– বাপ্পা মন্ডল ছবি-বাপন ঘোষ
Published on: ডিসে ২৬, ২০১৮ @ ০৯:৫১
এসপিটি নিউজ, চন্দ্রকোনা, ২৬ ডিসেম্বরঃ বড়দিনের আনন্দের পরদিনের শীতের সকাল অনেকের কাছে দুঃসময় হয়ে ফিরে এল। ভয়াবহ এক বাস দুর্ঘটনায় প্রাণ কেড়ে নিল ৫ জনের। যার মধ্যে রয়েছেন এক মেডিকেলের ছাত্রীও।আছেন দুটি গাড়ির চালকও। বুধবার সাতসকালে চন্দ্রকোনা-ঘাটাল রোডে এই দুর্ঘটনার পর কান্নার রোল উঠেছে। নিকটজনকে হারানোর শোকে বহু মানুষ হাহাকার করছেন। দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা অনেক। আহতদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঘাটাল, চন্দ্রকোনা, মেদিনীপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া জানিয়েছেন মৃতের সংখ্যা ৫। শালবনীতেও এক পৃথক পথ দুর্ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।এদিন সকালে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে মারুতি অমনি-র সঙ্গে ইন্ডিকা গাড়ির মুখোমুখি ধাক্কা লাগলে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী-“পায়েল” নামের যাত্রী বোঝাই বাসটি চন্দ্রকোনা পুরসভার আট নম্বর ওয়ার্ড লাগোয়া ঘাটাল-চন্দ্রকোনা রোড দিয়ে ছুটছিল তারকেশ্বরের দিকে। উল্টোদিকে ক্ষিরপাই-এর দিক থেকে একটি ট্রাক দ্রুত গতিতে আসছিল। মুহূর্তের মধ্যে দুটি গাড়ি মুখোমুখি সংঘর্ষ হতেই ত্রাহি ত্রাহি রব ওঠে। বাঁচার জন্য চিৎকার করতে থাকে অনেকে। কিন্তু ঘটনাস্থলে আসার পর দেখা যায় সেখানে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত পাঁচজনের মধ্যে রয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী অন্তরা সামন্ত, বাসের চালক শ্রীকান্ত দে(৪০)। ট্রাকের চালক চন্দন রায় (৩৫)। বাস যাত্রী মণিকা করণ (৩৫) ও তার ছেলে প্রীতম করণ (১৪)। এদের চন্দ্রকোনা থানার ধূলিয়াডাঙা গ্রামে। ট্রাক চালকের বাড়ি বিহারে।
জানা গিয়েছে বাসটিতে ৫০ জনের মতো যাত্রী ছিল। খড়্গপুর থেকে ভোর ৫টা ২০ মিনিটে ছেড়ে সাড়ে পাঁচটা নাগাদ মেদিনীপুরে আসে। এরপর বাসটি মেদিনীপুর থেকে তারকেশ্বরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায়। সকালে রাস্তা ফাঁকা থাকায় গাড়ির গতি বাড়িয়ে ঘাটাল-চন্দ্রকোনা রোড দিয়ে ছুটতে থাকে যাত্রী বোঝাই বাসটি। কিন্তু চন্দ্রকোনা পুরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের খেজুরডাঙা এলাকায় আসার পরই ক্ষিরপাইয়ের দিকে থেকে দ্রুতগতিতে ছুটে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে যায়। দুর্ঘটনা এতই বিধ্বংসী ছিল যে বাসের চালক নিজেকে বাঁচাতে ব্যর্থ হন। বিভৎস ভাবে মৃত্যু হয় তাঁর। এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে ৪৫জন যাত্রী। তাদের মধ্যে ১০জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বাস চালক নিহত শ্রীকান্ত দে-র বাড়ি বাঁকুড়া জেলার ওন্দা এলাকায়। জানা গিয়েছে, এই বাসটিতে সকালের দিকে ভিড়ে ঠাসা থাকে প্রায় দিনই। এদিনও তার ব্যতিক্রম ছিল না।দুটি গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে দুই গাড়ির চালকের। তবে মৃতদের তালিকায় মেডিক্যালের ছাত্রী অন্তরার মৃত্যুতে তাঁর সহপাঠী থেকে শুরু করে আত্মীয় পরিজনরা নির্বাক হয়ে পড়েছেন। এদিন যখন দুর্ঘটনার পর মেদিনীপুরের নারায়ন বিদ্যাপীঠের শিক্ষিকা সুস্মিতা পয়ড়্যা হাসপাতালে এসে বোন অন্তরার খোঁজ করছিলেন তখন তাঁকে প্রথমে মৃত্যু সংবাদ জানানো হয়নি। তিনি বলছিলেন-” দু’মাস আগে এরকমই এক পথ দুর্ঘটয়ার কবলে পড়েছিলেন বাবা-মা। সেবার বাবার মৃত্যু হয়েছিল। তাই এবার যাতে আর কারও প্রাণ না যায়। ” কিন্তু দিদি সুস্মিতার আশঙ্কা মিথ্যে হল না। এবারেও মৃত্যুর করাল থাবা কেড়ে নিল প্রিয় বোনকে কেড়ে। মায়ের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তাঁর চিকিৎসা চলছে।
জানা গিয়েছে, মায়ের সঙ্গে এদিন অন্তরা খড়্গপুর থেকে বাসটিতে চেপে আরামবাগে বাড়ি ফিরছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর আর বাড়ি ফেরা হল না। মাঝ পথেই থেমে গেল তাঁর জীবনের যাত্রা।
Published on: ডিসে ২৬, ২০১৮ @ ০৯:৫১