চোটের আঘাত সইতে পারল না, অকালেই চলে গেল ইকা-মন ভার মা শীলার

Main বন্যপ্রাণ রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা-কৃষ্ণা দাস

Published on: অক্টো ৩০, ২০১৮ @ ২৩:৩৬

এসপিটি নিউজ, শিলিগুড়ি, ৩০অক্টোবরঃ গত বেশ কয়েক দিন ধরেই খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছিল সে।চিকিৎসকদের চেষ্টাও কাজে এল না। অসহ্য ব্যাথা সইতে না পেরে আজ মঙ্গলবার চারা গেল ব্যাঘ্র শাবক ইকা। এই ঘটনায় শিলিগুড়ি বেঙ্গল সাফারি পার্কে শোকের ছায়া। শীতের মরশুমে ছোট কন্যাকে হারিয়ে মন ভার মা শীলার।

প্রসঙ্গত, উত্তরবঙ্গের পর্যটনকে চাঙ্গা করতে বেঙ্গল সাফারি পার্ক তৈরি করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সেইমত হাতি, চিতা, কুমির সহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর পাশাপাশি দুটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার এই পার্কে এনে ঢেলে সাজানো হয়। তাদের মধ্যে স্ত্রী বাঘটিরই এই তিনটি কন্যা সন্তান হয়। আর এই তিন ব্যাঘ্র কন্যার নাম রেখেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী পরামর্শ মত তিন জনের নামকরন হয় কিকা, রিকা ও ইকা। চলতি বছরের মে মাস নাগাদ সাফারি পার্কে এই তিন সন্তান প্রসব করেছিল শিলা নামে বাঘিনী। গত আগষ্ট মাসেই আগেই নামকরন করেন মুখ্যমন্ত্রী।যার মধ্যে শীলার কনিষ্ঠ কন্যা ইকা, যার মৃত্যু হয় আজ।ইকার মৃত্যু পার্কে নিয়ে এসেছে শোকের আবহ।

এমনটা হল কিভাবে?

সুত্রের খবর, গত কয়েক দিন আগে তিনটি শাবক ক্রলের মধ্যে খেলা করছিল। সেইসময় পিছনের পায়ে চোট লাগে ইকার। এরপর থেকে ইকা একটু খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলাফেরা করছিল। বিষয়টি পার্ক কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। সাথে সাথেই ইকার চিকিৎসা শুরু করে সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ ক্রলে এসে বনকর্মীরা দেখে ইকার দেহে কোনও সার নেই, মৃত্যু হয়েছে তার। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই সাফারি পার্কে কিছুটা শোকের আবহ তৈরি হয়।শীতকালিন পর্যটন মরসুমে একসাথে তিনটি ব্যাঘ্র শাবক দেখতে না পেয়ে হতাশ হন অনেকেই।

কি বলছেন ব্যাঘ্র বিশেষজ্ঞ?

বেঙ্গল সাফারি পার্কের গবেষক ও বায়োলজিস্ট আদিত্য মিত্র জানান, কিকা, রিকা, ইকা তিনটি শাবক একসাথে  খেলার সময় পিছনের পায়ে চোট পায় ইকা। সাফারী পার্কে কর্তব্যরত ডাক্তারের পাশাপাশি দার্জিলিং থেকেও আরও দুজন পশু চিকিৎসকেও এনে ইকার চিকিৎসা চলে, দেওয়া হয় ব্যাথা নিবারনকারী ওষুধও। কিন্তু মঙ্গলবার আর ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে গাঢ় রঙের ব্যাঘ্র শাবক ইকা মৃত্যু বরণ করে। আদিত্যবাবু জানান, সাধারণত পশুদের ক্ষেত্রে সর্ব শেষে জন্মানো সন্তানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও প্রকৃতির সাথে লড়াই করার ক্ষমতা একটু কমই থাকে। এক্ষেত্রেও তৃতীয় শাবকটিরও তা কম ছিল সে কারণেই চোটের আঘাত সহ্য করতে না পেরে তার মৃত্যু হয়। মঙ্গল বারই তার ময়নাতদন্ত করে দাহ করা হয়।

যেহেতু বেঙ্গল সাফারি সিডিউল ওয়ান  থ্রিসিস অ্যাক্টের মধ্যে পড়ে সে কারনে তিনজন ডাক্তারের উপস্থিতে পার্কের ল্যাবরেটরিতেই ময়না তদন্ত করা হবে। পরে এই অ্যাক্টের তালিকাভুক্তদের পুড়িয়ে নষ্ট করার নিয়ম তাই কবর না দিয়ে ইকাকে দাহ করা হবে।

বনমন্ত্রী কি বললেন?

বনমন্ত্রী বিনয় কৃষ্ণ বর্মণ জানান, কখনও তিনটি বাঘ্র শাবক একসাথে জন্মালে বাঁচে না। বিভিন্ন বাঘ বিশেষজ্ঞরা এমনটাই বলে থাকেন। তবু তিনটিকেই বাঁচানোর ব্যাপারে আমরা একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। মাঝখানে একটি বাচ্চা মরনাপন্ন অবস্থায় ছিল। তাকে স্যালাইন দিয়ে শুশ্রুষা করিয়ে সুস্থ করা হয়। সাফারি পার্কের কর্মীরা ২৪ ঘন্টা তাদের নজরে রাখে। মানুষের সন্তানদের চাইতেও বেশি যত্নে তারা বেড়ে উঠছে। এমনকি পার্কে সার্জেনও রয়েছে। মাঝে আর একটি বাচ্চারও অবস্থা ভাল ছিল না। তাকেও চিকিৎসা করে সুস্থ করা হয়। কিন্তু এবার আর শেষ রক্ষা হল না। প্রকৃতির বিরুদ্ধে যাওয়া সম্ভব নয় বলেই চ্যালেঞ্জ কাজ হল না বলে আক্ষেপ করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের স্নেহ ও ভালবাসার ব্যাঘ্র শাবকের মৃত্যুর খবর ইতিমধ্যেই তার কাছে পৌঁছালেও সে ব্যাপারে এখনও কোনো কথা হয় নি বলে জানান তিনি।

Published on: অক্টো ৩০, ২০১৮ @ ২৩:৩৬

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

72 + = 78