টোকিও অলিম্পিকে একমাত্র ভারতীয় হিসাবে জিমন্যাস্টিক্সে সুযোগ পেলেন পিংলার মেয়ে প্রণতি নায়েক

Main খেলা দেশ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: জুন ৩০, ২০২১ @ ২১:১১
Reporter:Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ৩০জুন:  ” বয়স তখন চার বছর। হঠাৎ একদিন উঁচু জায়গা থেকে নীচে পড়ে যাচ্ছিলাম। মাথা নীচের দিকে আর পা উপরের দিকে। মাথা বাঁচানর জন্য নিজের অজান্তেই দু’টি হাত আগে মাটিতে পড়ে যায়। তারপর হাতের উপর ভর দিয়ে কাঠ হুইল খেলার মতো ঘুরে যাই। সেই থেকে শুরু কাঠ হুইল খেলা।”

টোকিও অলিম্পিকে একমাত্র ভারতীয় হিসাবে জিমন্যাস্টিক্সে স্থান করে নেওয়া পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার মেয়ে প্রণতি নায়েক নিজের এক সাক্ষাৎকারে এই কথা বলেছিলেন। এভাবেই তাঁর জিমনাস্টের প্রতি আগ্রহ জন্মাতে শুরু করে।

পাঁচ বছর বয়সে ঝাড়খণ্ড থেকে চলে আসেন পিংলা

প্রণতির জন্ম ঝাড়খণ্ডে। পাঁচ বছর বয়সে পিংলার করকাই গ্রামে মামার বাড়িতে চলে আসেন। এখানেই পড়াশুনো। এরপর তাঁর বাবা-মা এই গ্রামে বাড়ি করে স্থায়ীভাবে থাকা শুরু করেন। করকাই জনকল্যাণ শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে পড়ার সময় থেকেই জিমনাস্টের প্রতি যোগসূত্র স্থাপন হতে শুরু করে। এর পিছনে স্কুলের শিক্ষিকা সন্ধ্যা মালাকার যিনি সম্পর্কে মামি তিনিই পাশের নাকপুরা গ্রামের জিমন্যাস্টিক্স প্রশিক্ষক শুভাশিস চক্রবর্তীকে স্কুলের ছেলেমেয়েদের খেলাধুলোর জন্য ডেকে পাঠান। শুরু হয়ে প্রশিক্ষণ। সেই হিসেবে শুভাশিসবাবুই হলেন প্রণতির প্রথম জিমন্যাস্ট গুরু।

তেমাথানি মনসারাম প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই জেলা প্রতিযোগিতায় যোগদান

এরপর তেমাথানি মনসারাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন প্রণতি। সেখানে স্কুলের শিক্ষক রাধাকান্ত শীটের প্রচেষ্টায় ২০০৩ সালে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় জেলা জিমন্যাস্টিক্স প্রতিযোগিতায় যোগ দেন। চ্যাম্পিয়ন হয়ে যোগ দেন রাজ্য প্রতিযোগিতায়। প্রথম্বার সাফল্য আসেনি। কিন্তু হাল ছাড়েননি প্রণতি। এরপর সাই কমপ্লেক্সে ডাক পান। শুরু হয়ে জিমন্যাস্টিক্সের প্রশিক্ষণ।

সাফল্যের শুরু

২০০৩ সালে জেলা জিমন্যাস্টিক্সে চ্যাম্পিয়ন হন প্রণতি। এরপর ২০০৪ সালে রাজ্য প্রতিযোগিতা এবং ওই বছরেই ন্যাশনাল আর্টিস্টিক যোগায় সফল হন তিনি। ২০০৮ সালে প্রথম প্লেনে চেপে রাশিয়া যান। মস্কোয় আন্তর্জাতিক জিমন্যাস্টিক্স প্রতিযোগিতায় ভ্ল্ট নিজের ক্যারিশ্মা দেখান প্রণতি। বিশ্বের সেরা প্রতিযোগিদের সঙ্গে সমানে লরাই করে যান বাংলার অখ্যাত গ্রামের এই প্রতিভারর কন্যা। অবশেষে চতুর্থ স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। যদিও প্রতিযোগিতার বিশ্বসেরাদের তারিফ কুড়োন এই ভারতীয় প্রতিভাধর।

প্রেরণা বাবা-মা

তবে প্রণতির এই উঠে আসার পিছনে যাদের প্রেরণা তাঁকে সবসময় উদবুদ্ধ করে তাঁদের কথা সবস্ময়ই বলেন তিনি। আর তাঁরা হলেন সাই-এর প্রশিক্ষক মিনারা বেগম ও প্রণতির বাবা-মা।

অর্থাভাব হার মেনেছে প্রতিভার কাছে

অর্থাভাব তো ছিলই পরবারে। বাবা বাস চালিয়ে পরিবারে তিন মেয়ের পড়াশোনা চালাতে হিমশিম খেতেন। স্কুলের শিক্ষক রাধাকান্তবাবু সাহায্য করেছেন। সেই সময় যুবভারতীতে বিনামূল্যে থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন ম্যানেজার স্বপন মন্ডল। এরপর সাইয়ের জিমন্যাস্টিক্সের কোচ সাইয়ের হস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। আসলে অর্থাভাব হার মেনেছে প্রতিভার কাছে।

গোটা দেশ তাকিয়ে আছে বাংলার এই মেয়ের দিকে

আজ গোটা দেশ তাকিয়ে আছে বাংলার এই মেয়ের দিকে। তবে তিনি পদক পান আর নাই পান সারা দেশ থেকে জিমন্যাস্টিক্সের মতো ইভেন্টে যেভাবে নিজের যোগ্যতায় সুযোগ করে নিয়েছেন প্রণতি তা কিন্তু প্রশংসার দাবি রাখে। আমরা সকলেই চাই তিনি টোকিও অলিম্পিকে তিনি তাঁর সেরাটা তুলে ধরতে পারেন।

Published on: জুন ৩০, ২০২১ @ ২১:১১


শেয়ার করুন