২০২২ সালে কৃষকের আয় দ্বিগুন করার লক্ষ্যে তাদের সবরকম সহায়তার আশ্বাস কৃষি অধিকর্তার, চালু হচ্ছে কৃষিসাংবাদিকতার সার্টিফিকেট কোর্সও

রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবা্দদাতা-ডাঃ সৌমিত্র পন্ডিত

Published on: জানু ৬, ২০১৮ @ ১৯:০০

এসপিটি নিউজ, কলকাতাঃ কৃষি-কৃষক-কৃষিপ্রযুক্তি এই তিনের সঠিক মেলবন্ধন ঘটাতে পারলেই তা হয়ে উঠবে কৃষির পক্ষে অত্যন্ত সহায়ক। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সম্প্রতি এক অভিনব অনুষ্ঠান “কৃষকের মুখোমুখি” আয়োজন করা হয়েছিল। যেখানে কৃষক-কৃষি সাংবাদিক-প্রযুক্তিবিদদের মুখোমুখি আলোচনা হয়, এযাবৎকালীন এমন গুণগ্রাহী ও বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা কোনদিনও হয়নি। সেদিক থেকে দেখতে গেলে অনুষ্ঠানটি একেবারে ব্যতিক্রমী।এদিনের আলোচনায় কৃষিবিজ্ঞান ও প্রাণীবিজ্ঞান বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।যেখানে কৃষী সাংবাদিকদের সঙ্গে কৃষক ও কৃষিপ্রযুক্তিকে একত্রিত করার কথা বলা হয়েছে।বেঙ্গল ভেটেরেনারি কলেজের ১২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরেনারি কাউন্সিলের প্রেক্ষাগৃহে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।এখানে বিশেষজ্ঞরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। যেখানে কৃষি অনুসন্ধান বিভাগের কলকাতার অধিকর্তা ডা. এস এস সিং ৬৮০টি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্ত তিনটি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের কাজ নিয়ে খুশি হয়ে আগামিদিনে আরও একটি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র খোলার কথা জানান।একই সঙ্গে ২০২২ সালে কৃষকের আয় দ্বিগুন করার লক্ষ্যে তাদের সকল প্রকার সহায়তা করার কথাও বলেন তিনি।বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পূর্ণেন্দু বিশ্বাস কৃষি ও প্রাণীপালনে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বেশি করে যুক্ত থাকার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্ল্যেখ করেন।ঘোষণা করলেন কৃষিসাংবাদিকতার সার্টিফিকেট কোর্স চালু করার কথাও।

এদিনের কর্মসূচিতে প্রায় ২৫০জন কৃষক-খামারী, ৪০জন সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক-অধ্যাপিকা, ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি ছিল নজরকাড়া।অনুষ্ঠানটি মূলত, গ্রামীণ মানুষের কৃষি-প্রাণীপালন ও মৎস্যচাষের প্রতিবন্ধকতা ও তার প্রতিকারের মাধ্যমে লাভজনক চাষ নিয়ে হয়েছে।একদিকে চাষিরা যেমন নিজের চাষের বর্ণনা করেছেন ঠিক পাশাপাশি বর্তমান পরিস্থিতিতে কৃষি বিমুখ মানুষের কথাও আলোচনায় উঠে এসেছে।এই অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যাল্যের সাথে সহযোগিতায় ছিলেন কৃষি অনুসন্ধান বিভাগের কলকাতার অধিকর্তা ডা. এস এস সিং। প্রধান বৈজ্ঞানিক ডা. পার্থ প্রতিম পাল।উপাচার্য অধ্যাপক পুর্ণেন্দু বিশ্বাস, নিবন্ধক অধ্যাপক শ্যামসুন্দর দানার সহযোগিতায় গবেষণা, সম্প্রসারণ ও খামার অধিকরণ বিভাগের অধিকর্তা অধ্যাপক অরুণাশীষ গোস্বামীর ঐতিহাসিক প্রয়াস হল এদিনের “কৃষকের মুখোমুখি”।

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের “গবেষণা, সম্প্রসারণ ও খামার অধিকরণ” বিভাগ থেকে একটি ডকুমেন্ট্রি ফিল্ম-“প্রগতির পথে” এবং মুর্শিদাবাদ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র কত্তৃক শর্ট ফিল্ম-“মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার সহজ উপায়” উদ্বোধন হয়।অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্টার ডা.সৌরভ চন্দ্র।

অরুণাশীষবাবু কৃষিবিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বলেন, এখানকার গবেষণালব্ধ ফল কতটা মানুষের কাছে পৌঁছেছে, তা কতটা কার্যকর হয়েছে সেটা জেনে এগোতে হবে।চাষীদের সমস্যার কথা উল্ল্যেখ করে তিনি বলেন, চাষীদের অনেক অসুবিধা আমরা দূর করতে পারিনি কেন?এ প্রসঙ্গে কৃষি সাংবাদিকদের দায়বদ্ধতার কথাও তুলে ধরেন অরুণাশীষবাবু। তিনি বলেন-“কৃষক-কৃষিসাংবাদিক-কৃষিপ্রযুক্তি-কে এক ছাতার তলায় আনতে পারলেই কৃষি ও প্রাণিপালনে উন্নতি সম্ভব হবে।তাই কৃষিসাংবাদিকদেরও কৃষি ও প্রাণীপালনের সম্যক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। তবেই তিনি সঠিক বিজ্ঞান উপস্থাপন করবেন।

আশার কথা শোনা যায় উপাচার্য অধ্যাপক পূর্ণেন্দু বিশ্বাসের গলাতেও। তিনি গ্রামীন মানুষের উপযোগী হবে এমন গবেষণার উপর ছাত্রছাত্রীদের জোর দিতে বলেন।একদিকে তিনি যেমন সফল চাষীদের কাজে খুশি হয়েছেন ঠিক তেমনি লাভের মুখ দেখতে না পারা সেই সমস্ত চাষীবন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে তাদের কারণ অনুসন্ধান করে তাদের সঠিক দিশা দেখানোর কথাও বলেছেন।তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সমস্ত প্রকল্প -জল্পাইগুড়ি, সুন্দরবন, মুর্শিদাবাদ, লোধাশুলি, বর্ধমান, উঃ ও দঃ ২৪ পরগনায় চলছে তাতে হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হচ্ছে বলেও জানান পূর্ণেন্দুবাবু।কৃষিবিজ্ঞানী সাংবাদিকদের প্রাণীপালন, মৎস্যচাষ ও কৃষিকাজে সফল ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার এবং যারা পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক চাষী তাদের সঠিক দিশা দেখানোর জন্য আরও বেশি করে বিজ্ঞানী-বিশ্ববিদ্যালয়-সাংবাদিক-চাষী ও খামারী বন্ধুদের যোগসূত্র স্থাপন করতে হবে।

কৃষিসাংবাদিকদের অনুরোধে উপাচার্য আগামী জুলাই শিক্ষাবর্ষে “সার্টিফিকেট কোর্স” চালু করার কথা ঘোষণা করেন। যার ফলে কৃষিসাংবাদিকরা কৃষী-মৎস্য-প্রাণীপালনের প্রাথমিক জ্ঞান তার সঠিক উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে মানুষের মনোগ্রাহী সংবাদ পরিবেশন করতে পারবেন।শেষের দিকে উপাচার্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি বলেন। তাঁর কথায়-গ্রামের শিক্ষিত বেকারদের একত্রিত করে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে যদি প্রাণীপালন বা কৃষি বা মৎস্যচাষ করার দিশা দেখাতে পারি তাহলেই আমাদের এই আলোচনা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রয়াস সার্থক হয়ে উঠবে।তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় তার সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে। তিনি গড়বেতায় নতুন কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র, লোধাশুলিতে প্রাণী প্রজণনকেন্দ্র গড়ে প্রাণী চিকিৎসা ও প্রাণীপালনের নতুন দিশা দেখানোর কথা জানান।

Published on: জানু ৬, ২০১৮ @ ১৯:০০

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 3 = 7