স্বচ্ছ ভারত অভিযানঃ মোদির জন্মস্থানের এ কি হাল, কৌটো হাতে কি বলছেন সেখানকার মহিলারা

দেশ
শেয়ার করুন

২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে নরেন্দ্র মোদি দেশকে পরিষ্কার রাখার জন্য তাঁর সরকারের প্রচারাভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। বিবিসি-র প্রিয়াঙ্কা দুবে এই প্রকল্পে কীভাবে অগ্রগতি হয়েছে তা দেখার জন্য মোদির শহরে গিয়েছিলেন, এবং সেখানে গিয়ে তিনি এমন একটি জিনিস খুঁজে পাননি যেটা মহিলারা চাইছেন – টয়লেটবিবিসির প্রতিনিধির সেই চাঞ্চল্যকর অভিযানের বর্ণনা সংবাদ প্রভাকর টাইমস-এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।শুনুন প্রিয়াঙ্কার নিজের মুখেই–

এসপিটি, ২৫ নভেম্বরঃ  ভারতীয় রাজ্য গুজরাত উপত্যকায় অবস্থিত ভাদনাগড়-এ গিয়ে আমি ভারত সরকারের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী ফ্ল্যাশপ্যাশ প্রকল্প “স্বচ্ছ ভারত মিশন” বা “ক্লিন ইন্ডিয়া মিশন” এর উজ্জ্বলতা ও উতকর্ষতা অনুভব করি।

গুজরাতের মেহসানা জেলায় অবস্থিত একটি পুরসভা ভাদনাগড়, যেখানে মোদি জন্মগ্রহণ করেন এবং যেখানে তিনি তাঁর শৈশবকালও কাটিয়েছেন। এটা এখন ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেকখানি।   

রোহিত ভাস লোকালয়, যার একটি বড় অংশ দলিত (পূর্বে অচ্ছিত হিসাবে পরিচিত) জনসংখ্যা ছিল, এখানে আসার সময় আমার স্মার্টফোন-এ আমি একটি বার্তা পাই- তাতে বলা হয় “আপনি ভাদনাগড়-এ ওয়াইফাই জোনে প্রবেশ করেছেন”। এখানকার মানুষ ওয়াইফাই-এর সুবিধা পাচ্ছে,  কিন্তু যখন আমি তাদের টয়লেট-এর বিষয়ে  জিজ্ঞাসা করি তখন তাদের কথার মধ্যে অস্পষ্টতা ধরা পড়ে।

সেখানকার ছাত্রীদের একটি দল আমাকে এমন একটি স্থানে নিয়ে গিয়েছিল যেখানে তারা প্রতি সকালে খোলা মাঠে মলত্যাগ করে।এটা সত্যি যে, রোহিত ভাসে এখনও পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা আলাদা আলাদা মর্যাদা রয়েছে, তবু দেখা যায় যে গ্রামীণ এলাকায় টয়লেট নির্মাণের জন্য বরাদ্দ করা ১০.৯ মিলিয়ন রুপি তহবিলের অর্থ মোদির নিজের গ্রামের অংশেই পৌছয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা দক্ষ বেন অভিযোগ করেন, যে এলাকার নিকাশি নালা সবসময় খোলা ছিল।তিনি বলেন, “ছোট বাচ্চাদের পাশাপাশি আমাদের অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েদেরও মাটিতে মলত্যাগ করতে হয়।আমাদের বাস করার জন্য ঘর নেই। আমাদের কোনও বাড়ি দেওয়া হয়নি বা কেউ টয়লেটের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে আসেন নি,” বিবিসি এমনটাই তারা জানিয়েছে।নির্মল বেন আরও যোগ করেছেন যে মোদির সরকার তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করে নি। “আমরা প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলাম যে আমাদের মাথা্র উপর ছাদ ও টয়লেটের ব্যবস্থা করা হবে কিন্তু আমরা কিছুই পায়নি”।

২০১৪ সালের গ্রীষ্মে ক্ষমতায় আসার পর মোদির প্রথম বারের জন্য ৮ অক্টোবর তাঁর জন্মস্থান সফর করেন। “এখন নির্বাচন এসে গেছে, তিনি অবশেষে আমাদের ও তাঁর পুরানো শহরটি মনে রেখেছেন। অন্যথায় কেউ আমাদের কথা শোনার জন্য আসেননি।” বাসিন্দারা বলে যে প্রায় ৩০ হাজারের এর এই পুরসভার প্রায় ৫০০টি বাড়িতে টয়লেট ব্যবস্থা নেই। এদের বেশিরভাগই দলিত এবং অন্যান্য নিম্নশ্রেণীর।বিবিসি প্রতিনিধি বলছেন, ‘আমি খোলা নর্দমা, দম বন্ধ পরিবেশ এবং ভাঙা রাস্তা দেখেছি, আমি তাদের বাড়ির সামনে মহিলাদের কাপড় ধুতেও দেখেছি।

ভারতীয় সরকার সম্প্রতি আধুনিক চিকিৎসা ও প্রযুক্তিগত সুযোগসুবিধা দিয়ে সজ্জিত ভাদনাগড়কে একটি ঐতিহাসিক পর্যটক স্থান হিসাবে বনবিভাগকে গড়ে তোলার জন্য ৫.৫ বিলিয়ন রুপি তহবিল ঘোষণা করেছে।

কিন্তু এই ঘোষণাগুলি ৭০ বছরের মনি বেনের জীবনে খুব সামান্য বদল আনতে পেরেছে, যিনি আমার দিকে হেঁটে আসছিলেন তার হাতে পুরানো রশ্মিযুক্ত লাল টিনের বাক্স ধরা ছিল যা দেখিয়ে তিনি বলেন যে এটা তিনি জল ঢেলে ভর্তি করবেন এবং প্রতিদিন সকালে মাঠের মধ্যে এটাই তাদের অবলম্বন।বেশিরভাগ মহিলাই ভাদনাগড়ের সরকারি পরিকল্পনা সম্পর্কে কোন ধারণা পায়নি। অনেকে বলেন যে তারা এখনও নিজেদের বাড়িগুলিতে কংক্রিট ফাংশনাল টয়লেট নির্মাণের জন্য অপেক্ষা করছেন।

বিবিসি-র ওই প্রতিনিধি যখন তাদের জিজ্ঞাসা করে যে প্রধানমন্ত্রীকে কোন বার্তা তারা পাঠাতে চায়, মুহূর্তে তাদের সকলে একটাই দাবি জানায়-টয়লেট নির্মাণ করে দিতে হবে।

এটা নির্বাচনের সবচেয়ে বড় সমস্যা।

তাদের মধ্যে একজন বলে ওঠেন, “এটা আমাদের জন্য অপ্রত্যাশিত এবং অপমানজনক।”

সূত্রঃ বিবিসি


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 + 5 =