লোকসভা ভোটে লড়ছেন ১৫০০ অপরাধী, পাঁচ বছরে ৩৩৫জন সংসদ সদস্যের সম্পত্তি বেড়েছে ৪১%

Main দেশ লোকসভা ভোট 2019
শেয়ার করুন

 

সংবাদদাতা– অনিরুদ্ধ পাল

Published on: মে ১৪, ২০১৯ @ ২৩:৫৪

এসপিটি নিউজ ডেস্ক: এখনও আরও একটি পর্যায়ের ভোটগ্রহণ পর্ব বাকি রয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে কিন্তু অ্যাসোসিয়েশন অফ ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (এডিআর)-এর রিপোর্ট তুলে ধরল লোকসভা ভোটে লড়া প্রার্থী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলির একটা ছবি। একই সঙ্গে তারা জানিয়ে দিল গত পাঁচ বছরে দেশের সাধারণ মানুষ কতটা লাভবান হয়েছে কিংবা তারা কতটা উপকৃত হয়েছে সেটা যতটা না গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে তার চেয়ে বেশি নজর কেড়েছে সেইসব সাংসদদের সম্পত্তির পরিমানের আকাশচুম্বী বৃদ্ধিতে। গত পাঁচ বছরে তাদের সম্পত্তির পরিমান বেড়েছে ৪১ শতাংশ। এখানেই শেষ নয় অপরাধের মামলায় জড়িত অভিযোগ থাকা এমন ১৫০০ জন প্রার্থী ভোটে লড়ছেন।

৫৪৩টি লোকসভা আসনে ৮০৪৯ জন প্রার্থীর ভিতর ৭৯২৮জন প্রার্থীর উপর এই সমীক্ষা চালানো হয়। যারা ২০১৯ লোকসভা ভোটে প্রার্থী হয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এক থেকে সপ্তম দফার ভোটে। তাতে যা তথ্য মিলেছে তা কিন্তু দেশের নাগরিকদের মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।

অপরাধীর তকমা

ঘোষিত অপরাধ মামলা সমেত প্রার্থী- ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এমন ৭৯২৮ জনের উপর সমীক্ষা চালাতে গিয়ে এডিআর জানতে পারে যে এর মধ্যে ১৫০০জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে ঘোষিত অপরাধের মামলা রয়েছে। যা শতাংশের হারে ১৯ শতাংশ। ২০১৪ সালে সংখ্যাটা ছিল ১৪০৪জন ৮২০৫জন প্রার্থীর ভিতর, অর্থাৎ ১৭ শতাংশ। ২০০৯ সালে এই ছবিটা ছিল ৭৮১০জন প্রার্থীর ভিতর ১১৫৮জন অর্থাৎ ১৫ শতাংশ।

গুরুত্বপূর্ণ অপরাধ মামলা সমেত প্রার্থীরা– ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এমন ১০৭০জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে রয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপঊর্ণ মামলা, যার মধ্যে রয়েছে-ধর্ষণ, খুন, খুনের চেষ্টা, অপহরণ, মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ সহ আরও অনেক। ২০১৪ সালে এই সংখ্যাটা ছিল ৯০৮জন ৮২০৫জন প্রার্থীর মধ্যে। ২০০৯ সালে ৭৮১০জনের মধ্যে ৬০৮জন ছিলেন েমন ধরনের অপরাধের মামলা থাকা প্রার্থী।

  • ৫৬জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা হয়েছে।
  • ৫৫জন প্রার্থী খুনের মামলায় অভিযুক্ত, যাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ফৌজদারী দন্ডবিধির ৩০২ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।
  • ১৮৪জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা রুজু হয়েছে।
  • ১২৬জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ করার মামলা রুজু হয়েছে। এর মধ্যে আবার ৯জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে রুজু হয়েছে ধর্ষণের মামলা।
  • ৪৭জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে অপহরণের মামলা।
  • ৯৫জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে অশালীন মন্তব্য করার মামলা।  
  • দলগতভাবে অপরাধের মামলার পরিসংখ্যান

তালিকায় শীর্ষে আছে ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি। তাদের ৪৩৩জন প্রার্থীর ভিতর ১৭৫জনের বিরুদ্ধে রয়েছে অপরাধের মামলা। যা তাদের মোট প্রার্থীর ৪০ শতাংশ।

এরপরই তালিকায় দ্বিতীয় স্থান নিয়েছে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস, ৪১৯জনের মধ্যে ৮৫জন – যা তাদের মোট প্রার্থীর ২২ শতাংশ।

তৃতীয় স্থানে বহুজন সমাজ পার্টি, তাদের ৬৯জন প্রার্থীর মধ্যে ৪০জন- যা তাদের মোট প্রার্থীর ৫৮ শতাংশ। এরপর সিপিএম এবং সবশেষে আছে নির্দল।

দলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অপরাধের মামলা

এখানেও তালিকায় প্রথমে বিজেপি, তাদের আছে ১০৭জন, কংগ্রেসের আছে ৬১জন, বিএসপি-র আছে ২৪জন এবং নির্দলের আছে ২৯২জন।

অর্থনৈতিক তকমা

৭৯২৮ জন প্রার্থীর মধ্যে ২২৯৭জন প্রার্থী কোটিপতি। যেখানে ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে ৮২০৫জন প্রার্থীর উপর সমীক্ষা চালানো হয় সেখানে ২২১৭জন প্রার্থী ছিলেন কোটিপতি। ২০০৯ সালে ৭৮১০জন প্রার্থীর মধ্যে ১২৪৯জন প্রার্থী ছিলেন কোটিপতি।

দলগতাভাবে কোটিপতির তালিকা

এখানেও বিজেপি শীর্ষে। তাদের ৩৬১জন, কংগ্রেসের ৩৪৮জন, বহুজন সমাজ পার্টির ২৫জন, এনসিপির ৩৪জনের মধ্যে ২০জন, নির্দলদের ৩৩৭০ জনের মধ্যে ৫০৬জন প্রার্থী কোটিপতি।

গড় সম্পত্তি

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রতি প্রার্থীর গড় স্মপত্তির পরিময়ান ৪.১৪ কোটি টাকা।

দলগতভাবে গড় সম্পত্তি

বিজেপির ৪৩৩জন প্রার্থীর প্রত্যেকের গড় সম্পত্তির পরিমান ১৩.৩৭ কোটি টাকা, কংগ্রেসের ৪১৯জন প্রার্থীর প্রত্যেকের গড় সম্পত্তি ১৯.৯২ কোটি টাকা, বিএসপি-র ৩৮১জন প্রার্থীর প্রত্যেকের সম্পত্তির পরিমান ৩.৮৬ কোটি টাকা, সিপিএমের ৬৯জন প্রার্থীর প্রত্যেকের গড় সম্পত্তির পরিমান  ১.২৮ কোটি টাকা এবং ৩৩৭০ নির্দল প্রার্থীর প্রত্যেকের গড় সম্পত্তির পরিমান ১.২৫ কটি টাকা।

এবার লোকসভা ভোটে তিন সর্বোচ্চ ধনী প্রার্থী

২০১৯ সালে এমন তিনজন প্রার্থী লড়ছেন তারা হলেন সবচেয়ে ধনী প্রার্থী। তাঁরা হলেন- বিহারের পাটলিপুত্র কেন্দ্রের নির্দল প্রার্থী রমেশ কুমার শর্মা, যার মোট সম্পত্তির পরিমান ১১০৭ কোটি টাকা, দ্বিতীয়জন তেলেঙ্গানার চেভিল্লা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী কন্ডা বিশ্বেশ্বর রেড্ডি যার মোট সম্পত্তির পরিমান ৮৯৫ কোটি টাকা, তৃতীয়জন হলেন মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়াড়া কেন্দ্রের কংরেস প্রার্থী নকুল নাথ যার মোট সম্পত্তির পরিমান ৬৬০ কোটি টাকা।

পাঁচ বছরে সম্পত্তি বেড়েছে ৪১ শতাংশ

২০১৪ থেকে শুরু করে ২০১৯ সাল এই পাঁচ বছরে পুনরায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সাংসদদের সম্পত্তির পরিমান বেড়েছে ৪১ শতাংশ। এমন প্রার্থীর সংখ্যা এবার ৩৩৫জন। ২০১৪ সালে এই সব সাংদদের সম্পত্তির পরিমান ছিল ১৬.৭৯ কোটি টাকা।২০১৯ সালে তাদের সম্পত্তির পরিমান বেড়ে হয়েছে ২৩.৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ পাঁচ বছরে বেড়েছে ৬.৮৬ কোটি টাকা।

ফের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা সাংসদদের সর্বোচ্চ সম্পত্তির বৃদ্ধির তালিকায় শীর্ষে কংগ্রেস

ছেবিল্লা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী কোন্ডা বিশ্বেশ্বর রেড্ডির সম্পত্তি সব চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৬৬.৩৯ কোটি টাকা, তাঁর ২০১৪ সালে সম্পত্তির পরিমান ছিল ৫২৮.৬২ কোটি টাকা সেখানে ২০১৯ সালে হয়েছে ৮৯৬.০১ কোটি টাকা।

গুনা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী জ্যোতিরাদিত্য এম সিন্ধিয়ার সম্পত্তির পরিমান বেড়েছে ৩৪১.৪৭ কোটি টাকা, ২০১৪ সালে তাঁর সম্পত্তির পরিমান ৩৩.০৮ কোটি থেকে বেড়ে ২০১৯ সালে হয়েছে ৩৭৪.৫৬ কোটি টাকা।

অপ্র এক কংগ্রেস প্রার্থী ব্যাঙ্গালোর গ্রামীণ কেন্দ্রের কংগ্রেসের ডি কে সুরেশের ২০১৪ সালে সম্পত্তি ছিল ৮৫.৮৭ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৩৩৮.৮৯ কোটি টাকা অর্থাৎ বড়েছে ২৫৩.০২ কোটি টাকা।

প্রার্থীদের যোগ্যতা

৩৪৭৭জন প্রার্থী (৪৪ শতাংশ), যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা হল পঞ্চম এবং দ্বাদশ শ্রেণি পাশ। যদিও ৩৮০৮জন প্রার্থী (৪৮ শতাংশ) প্রার্থী আছেন যারা গ্র্যাজুয়েট। সমীক্ষাটিতে আরও উঠে এসেছে যেখানে দেখা গেছে ২৫৩জন প্রার্থী শিক্ষিত এবং ১৬৩জন প্রার্থী নিরক্ষর।

৪৯৪১ জন (৬২ শতাংশ) প্রার্থী যাদের বয়স ২৫ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে আবার যেখানে ২৯৩২ (৩৭%) জন প্রার্থী বয়স ৫১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে। আবার ১৮ জন প্রার্থীর বয়স ৮০ বছরের উর্দ্ধে। ৩৫জন প্রার্থী তাদের বয়স সম্পর্কে কোনও তথ্য হাতে তুলে দেয়নি। ২জন প্রার্থীর বয়স আবার ২৫ বছরের নীচে।

৭১৬জন (৯%) মহিলা প্রার্থী এবারের লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

 

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

25 − = 18