রাজনীতি কি শুধুই ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার

উত্তর সম্পাদকীয় রাজ্য
শেয়ার করুন

সম্রাট তপাদার

Published on: আগ ২১, ২০১৯ @ ২৩:৪৭

আমার ২৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনে অনেক উত্থান পতন দেখেছি,পবিত্র গঙ্গা দিয়ে আজ অনেক জল গড়িয়ে গেছে প্রতিনিয়ত জোয়ার-ভাঁটা দিয়ে মা গঙ্গা-তে অনেক  শুদ্ধ-বিশুদ্ধ হয়েছে,ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে আজ মধ্য গগনে আসা পর্যন্ত অনেক সংগ্রাম দেখেছি, কেউবা আজ শ্মশানে দাহিত কেউবা কবরস্থ কারোর জীবন আজ ও নিখোঁজিত তাদের আত্ম বলিদান আজ শিহরিত করে বাংলার জনগণ কে…।

না শোভনদা!  অভিনন্দন আপনাকে, ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদানের জন্য। আপনার মুখেই শুনলা্‌ম দলের অভ্যন্তরে নাকি আপনি পঞ্চায়েত নির্বাচনের বিরোধিতা করেছিলেন। দলের অনৈতিক কাজের বিরোধিতা করেছিলেন। ৩৭% বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা আপনার বিবেকে সয় নি তাই ৯২% বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা একটি দলে যোগদান করলেন। সাবাশ আপনাকে, আপনার অধুনা জাগ্রত বিবেককে। কি পাননি বলুন তো এই তৃণমূল কংগ্রেস দলটি থেকে? সামান্য পুরপ্রতিনিধি থেকে কলকাতার মহানাগরিক। ভিখিরি থেকে রাজসিংহাসন, বিধায়ক থেকে মন্ত্রীত্ব কোনোটিই বাদ যায়নি। পেয়েছেন দলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক দায়িত্ব। মুকুল রায়ের বিশ্বাসঘাতকতার পর মমতা ব্যানার্জ্জীর সবথেকে আস্থাভাজন যদি কেউ কেউ থেকে থাকে, আপনি ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। রাজনীতি আপনাকে কি দেয় নি? ভুলে গেলেন সেসব কথা এক লহমায়? রাজনীতি কি শুধুই ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হয়েই থাকবে? আপনাকে নিন্দা করার মতো ভাষা নেই। আপনি জানেন সারা ভারতবর্ষে এক রাজনৈতিক মাৎস্যন্যায় চলছে, হ্যাঁ, বড় মাছেরা, দুর্নীতির রাঘব বোয়ালরা ছোটো ছোটো মাছেদের খেয়ে ফেলছে, এই ভয়ঙ্কর মাৎস্যন্যায়ে মেরুদন্ড সোজা রাখা খুব কঠিন, তবে আপনাদের মতো সস্তায় বিকিয়ে যাওয়া লোকেদের দেখলে ঘৃণা হয়। মনে হয় রাজনীতি থেকে দূরে আছি, ভালোই আছি, মানুষের ঘৃণা নিয়ে হয়তো বেঁচে নেই।

আপনি ব্যক্তিগত সমস্যাকে প্রাধান্য দিয়ে এই ন্যাক্কারজনক কাজটি করলেন, আমরা যারা অতি সাধারণ জনগণ, যাদের গুণতি আসে কেবলমাত্র একটি “ভোট” হিসেবে, তারাও নিজেদের পরিবার সমাজ ও সংস্কৃতির সঙ্গে একটা সামঞ্জস্য রেখে চলি, কিন্তু আপনি? আজ আপনার ঔরসজাত সন্তানদের হাসতে দেখে কষ্ট লাগছে, তারা এককালের কলকাতার মহানাগরিকের এতটা অবস্খলণ মানতে পারছে না। প্রতিটা মুহূর্তে পিতৃপরিচয় দিতে ঘৃণা করছে। তবে যারা বিক্রি হয় খুব সস্তায়, তাদের কাছে এসবের মূল্য কি বলুন? যার কাছে নিজের পরিবারের কোনো মূল্য নেই, তার কাছ থেকে মূল্যবোধের শিক্ষা আমাদের নিতে হবে? যে মানুষটি আপনাদের রাজা করার জন্য সর্বাধিকবার ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন তার প্রতি আপনার দায়বদ্ধতা? ওহঃ, না, সেটাও তো ওই গুটকাখোর প্রভুদের পায়ে বন্ধক রেখেছেন। যে পদ একদিন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ অলঙ্কৃত করেছিলেন, আপনি সেই পথের কলঙ্ক হয়েই রয়ে গেলেন।

ইতিহাস বিচার করবে আপনারা সঠিক নাকি ওই হাওয়াই চটির ভদ্রমহিলা, তবে আপনাদের অভিধানে নীতি, আদর্শ, বিবেক, আনুগত্য, বিশ্বাসযোগ্যতা এইসব শব্দের কোনো জায়গাই নেই, একথা বলাই বাহুল্য। ১৪ই আগষ্ট আপনি বিজেপিতে যোগদান করেছেন, এই ১৪ ই আগস্ট ভারতের ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত দিন কারণ এই দিন পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল। ১৪ই আগষ্ট বাংলার ইতিহাসেও একটি কালো দিন হিসেবে রয়ে গেল আপনার মত একটা বিশ্বাসঘাতকের বিজেপিতে যোগ দেওয়ায়। কি কাকতালীয় বিষয় দেখুন, “ক্যালেন্ডার”ও আপনাকে আপনার অবস্থান বুঝিয়ে দিলো। আমরা জানি এখনো তৃণমূল কংগ্রেসে আপনার ও আপনাদের মতো অনেক সুবিধাবাদী বিক্রয়জাত পণ্য আছে যারা ক্ষমতার দিকে ঝুঁকে আছে। যেকোনো মুহূর্তে তারা আপনারই মতো শিবির পরিবর্তন করবে, বিশ্বাস করুন, তাতে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কিচ্ছু আসে যায় না। তারাও আপনারই মতো কালসাপ যাদের দলের মধ্যে দুধ-কলা দিয়ে পোষা হচ্ছে। সুযোগ পেলে এরাও ছোবল মেরে চলে যাবে।

কাল যদি তৃণমূল কংগ্রেসে একটিও লোক না থাকে, আপনি জেনে রাখুন, পশ্চিমবঙ্গের কোটি কোটি জনগণ ওই মহিলাটির সঙ্গে থাকবে, কারণ সব বিকিয়ে গেলেও জনতার ভালোবাসা, আবেগ, সমর্থন আপনারা কিনতে পারবেন না। সবাই আপনাদের মত সুবিধাবাদী, ঘুষখোর, আদর্শহীন, লম্পট, চরিত্রহীন বিশ্বাসঘাতক নয়। ভুলে যাবেন না, আজও মীরজাফরের সমাধিতে লোকে থুথু ছেটাতে যায়, ভবিষ্যতে ওই একইভাবে হয়তো ইতিহাসে আপনাদের জায়গা হয়ে থাকবে। আগামী প্রজন্ম আপনাদের দেখে হয়তো ঘৃণায় চোখ সরিয়ে নেবে…..

লেখকঃ পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক

Published on: আগ ২১, ২০১৯ @ ২৩:৪৭


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

94 − = 93