” রশ্মি ” – নিবেদিতার স্মরণে বরানগর রামকৃষ্ণ মিশন সেন্টিনারি প্রাইমারি স্কুলের এক অনন্য সাধারণ প্রয়াস

এসপিটি এক্সক্লুসিভ রাজ্য
শেয়ার করুন

বই-এর প্রারম্ভে স্বামী স্মরণানন্দজীর শুভেচ্ছা বানী– ” আমি আনন্দিত হলাম এই যে, যে বরানগর রামকৃষ্ণ মিশন সেন্টিনারি প্রাইমারি স্কুল প্রতি বছরের মতো এবারও শিশু ছাত্র প্রতিভা অন্বেষনের প্রয়াসে “রশ্মি” পত্রিকা প্রকাশে উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমান বছর ভগিনী নিবেদিতার জন্মের সার্ধশততম বর্ষ উপলক্ষে এই বছরের পত্রিকাতে তাকে অবলম্বন করে পরিকল্পিত হয়েছে। আমি ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণ, শ্রীমা সারদা দেবী ও শ্রীমৎ স্বামী বিবেকানন্দজীর শ্রীচরণে স্মরণিকা প্রকাশের পূর্ণ সাফল্যের জন্য প্রার্থণা জানাই। সকলকে জানাই আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা।    

সংবাদদাতা-অরুণাভ গুপ্ত

Published on: মার্চ ২৭, ২০১৮ @ ১৪:৪৫     

এসপিটি নিউজঃ ভগিনী নিবেদিতার সার্ধশতবছরে ‘রামকৃষ্ণ মিশন সেন্টিনারি প্রাইমারি স্কুল’ বরানগর শিশু-ছাত্রদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য স্মারক পত্রিকা “রশ্মি” প্রকাশ করল। এককথায় অসাধারণ। পত্রিকা নিঃসন্দেহে বিভিন্ন লেখায় সমৃদ্ধ। স্বামী শিবপ্রভানন্দ, সম্পাদক রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম, বরানগর এবং প্রধান শিক্ষক স্বামী শশীশেখরানন্দজী উপদেষ্টা ও ব্যবস্থাপক উভয়ের সার্থক প্রয়াসে সার্থক ফসল “রশ্মি” যে ছাত্রদের মনে চিরস্থায়ী ছাপ ফেলবে হলফ করে বলতে পারি। প্রচ্ছদে মা সারদা ও তাঁর আদরের খুকি নিবেদিতা। পত্রিকা আগাগোড়া নিবেদিতা- স্মরণে মননে। ছাত্রদের কথা কি বলি, নিজেই এই বয়সে কাবু হলাম, পোড় খাওয়া মন নিমেষে ভিজে, আবার একবার ঝালিয়ে নেওয়ার তাগিদ অনুভব করছি, নিবেদিতায় কখনই ধুলো জমে না, সবসময় ঝকঝকে তকতকে।

সত্যি বলছি, প্রচ্ছদের ঐ ছবি ছিল নিবেদিতার কাছে “Day of Days।” ১৮ মার্চ ১৮৯৮ মায়ের সঙ্গে প্রথম মিলতে চলেছেন নিবেদিতা সঙ্গে ছিল ম্যাকলাউড ও মিসেস ওলি বুল। প্রথম সেই সাক্ষাৎকারের বর্ণনা লিখলেন ফরাসি ভাষায় শ্রীমতী রিজেলমঁ। অনুবাদ করেছেন শ্রীমতী নারায়নীদেবী। তথ্য যখন পড়া আছে তখন ওঁদের ভাষার কাঁধে বন্দুক রাখব না। নিজের মতন লিখব। তৎকালীন সময় মেমদের দেখে নিমেষে ভিড় জমল, গুলিগালাদের দঙ্গলে মা-মাসি-বৌ-ঝি-দের সামিল হওয়া, যেন কী এক আশ্চর্য জীবদের দেখছে। তিন বিদেশিনী ঘাবড়ে গিয়ে ঘেমেনেয়ে একসার।

দোতলায় ওঠার মুখে স্বামী যোগানন্দ স্মরণ করালেন-জুতো খুলে যেতে হবে। দরজা খোলা ঢুকলেন নিবেদিতা। দেখলেন জনা দশেক মহিলা মাটিতে বসে আর ঠিক ঘরের মাঝখানে সারদা মা সাদা শাড়ি পরে মাথায় আঁচল দিয়ে বসে আছেন। তিন বিদেশিনী নিচু হয়ে প্রণাম করতেই মা প্রতি নমস্কার করলেন। তিনটে ছোট মাদুর পাতা হলে ওঁরা বসলেন। কারও মুখে কথা নেই ঘরে অখণ্ড নিস্তব্ধতা। অস্পষ্টতা চাপা স্বরের কথায় নীরবতা ভাঙলো। ওঁরা দেখলেন এক মহিলা ওঁদের সামনে ফল, মিস্টি, চা রাখলেন। একই খাবার মা সারদার জন্য আনা হল। প্রত্যেকে চোখ বড় বড় করে দেখলেন মা ভিনদেশের তিন কন্যার সঙ্গে মনের আনন্দে খেতে শুরু করলেন। অভাবনীয়-অবিশ্বাস্য দৃশ্য, মায়ের স্নিগ্ধ নির্মল স্নেহ ভরা পবিত্র মুখের উদ্ভাসিত আলোয় মুগ্ধ নিবেদিতা নিজের আবেগ রোধ করতে না পেরে বলে ওঠেন ‘অপূর্ব’। শুরু হল একেবারে ঘরোয়া টুকটাক কথা, যেন কতদিন বাদে মেয়েরা মায়ের ঘরে এয়েচেন। এবার ফেরার পালা স্বামীজীর নির্দেশ। মা সারদা অকাতরে এঁদের আশীর্বাদে ভরিয়ে দিলেন। তারপর কিছু সময় অপলকে চেয়ে থেকে নিবেদিতাকে বললেন, ”তুমি আসায় ভারি খুশি হয়েছি মা।” এঁরা এরপরও বহুবার মায়ের পদপ্রান্তে, ছুটে এলেও প্রথম সাক্ষাৎ ওঁদের কাছে ছিল স্বর্গীয় আনন্দঘন। বিশেষ করে নিবেদিতার কাছে মা সারদা মেরী মাতার এক রূপ। মায়ের মন নিবেদিতায় উদ্বেল থাকত বলেই তাঁকে একঘরে তাঁর সঙ্গে থাকার অনুমতি দিয়েছেন।

বিশেষ করে কিছুদিন ও স্মরণীয় মুহূর্ত নিবেদিতার জীবনে। ২৮ জানুয়ারি, ১৮৯৮ জাহাজ কলকাতায় ভিড়ল। স্বয়ং স্বামীজী তাঁকে সাদরে অভ্যর্থনা করার জন্য সশরীরে উপস্থিত। ২৫ মার্চ ব্রহ্মচর্য ব্রতে স্বামীজীর নিকট দীক্ষালাভ। মার্গারেট নোবল হলেন নিবেদিতা। ১৩ নভেম্বর ১৮৯৮ কালীপুজোর দিন মা সারদা স্বয়ং ১৬ নং বোসপাড়া লেনের বাড়িতে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার কাজ সম্পন্ন করেন। আর নিবেদিতা শিক্ষায়-সেবায়-বিজ্ঞানে-শিল্পী সত্ত্বায়-বিজ্ঞানে-রাজনীতিতে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নিজেকে নিঃশেষে নিঙড়ে দিয়ে প্রমাণ করে দিলেন তিনি নিবেদিতা। অথচ নিজেকে সম্পূর্ণ নিবেদন করেও কখনও সাফল্যের খামতি করেননি। তিনি স্বামীজীর প্রদত্ত দায় বহন করেছেন। স্বামীজী তাই মুক্ত কণ্ঠে বলেছেন-India shall ring with, her.  যে সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়ে ভারতে পা রেখে ছিলেন তার মূলে নিঃসন্দেহে বিবেকানন্দ সূর্য। আবার হতে পারে মানুষের সার্বিক উন্নতির সূর্য নিবেদিতার আকাঙ্খায় ছিল।

এই বইটিতে লেখকের তালিকায় রয়েছেবন আমাদের দেশের অতীতের বর্ণময় চরিত্র সকল, যাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- সুভাষচন্দ্র বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যদুনাথ সরকার, রাসবিহারী ঘোষ, জগদীশচন্দ্র বসু, সুরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, ঋষি অরবিন্দ, গোপালকৃষ্ণ গোখলে, লেডি মিনটো, দিলীপ কুমার রায়, সুমেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবলা বসু, রমেশচন্দ্র মজুমদার, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, এস কে র‍্যাটক্লিফ, নন্দলাল বসু, স্বামী সারদানন্দ, স্বামী অভেদানন্দ, স্বামী শিবময়ানন্দ, স্বামী পূর্নাত্মানন্দ, প্রব্রাজিকা মুক্তিপ্রাণা।বইটি ৩৫৯ পাতার। লেখকের সংখ্যা ৩৫৮জন ।

Published on: মার্চ ২৭, ২০১৮ @ ১৪:৪৫


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

+ 72 = 81