“ম্যাজিক ফ্রিকিক”-বাতাসে ফুটবল এমনভাবে বাঁক খায় কিভাবে, দিশেহারা গোলকিপাররা

খেলা বিদেশ
শেয়ার করুন

Published on: জুন ২৫, ২০১৮ @ ২২:৩৫

এসপিটি স্পোর্টস ডেস্কঃ এবারের বিশ্বকাপে ফ্রিকিক থেকে এখনও পর্যন্ত বেশ কয়েকটি অবিশ্বাস্য গোল হয়েছে। যা নিয়ে বিশ্ব ফুটবলে বিশ্লেষণ শুরু হয়ে গেছে। একটা ফুটবল এভাবে বাতাসে এতটা বাঁক খায় কি করে? প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বলা হচ্ছে এটা নাকি “ম্যাজিক ফ্রিকিক”। এসব ফ্রিকিক একমাত্র দক্ষ খেলোয়াড় ছাড়া কেউ নিতে পারেন না।

ভালো করে মনে করে দেখুন স্পেনের বিরুদ্ধে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ফ্রিকিক থেকে নেওয়া গোলটির ছবি। মনে করে দেখুন, সুইডেনের বিরুদ্ধে টনি ক্রুজের সেই অবিশ্বাস্য ফ্রিকিক। আরও মনে করে দেখুন, এবারের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে রাশিয়ার চেরিশেভের ফ্রিকিক থেকে নেওয়া সেই গোলের দৃশ্য। এসব কিছুতেই গোলকিপাররা একেবারে থ বনে গেছেন। বল জালে চলে যাচ্ছে, আর গোলকিপাররা অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে দেখছেন। বল কতটা বাতাসে বাঁক নিয়ে গোলে ঢুকছে।সত্যি, এ যেন ম্যাজিক!

ক্রিকেটেও বল সুইং করতে দেখা যায়। কিন্তু ক্রিকেট বল আকারে ছোট। তাছাড়া সেই বলের সেলাই একদম আলাদা। বলও অনেক শক্ত। অথচ ফুটবল আকারে বড়, ভিতরে বাতাস ভর্তি থাকে। তাছাড়া এর সেলাইয়ের ধরন অন্যরকম। এসব কিন্তু বলকে বাতাসে বা হাওয়ায় ঘোরানো কিংবা সুইং করানোর পক্ষে উপযুক্ত।

বাতাসে এরকম বাঁক খাওয়ানো ফ্রিকিক-এর সূচনা করেছিলেন প্রথম ১৯৫০-এর দশকে ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার ডিডি। তিনি দেখলেন বলকে যদি বাতাসে এভাবে ঘোরানো যায় তবে তা অনেকটা বাঁক খেয়ে ঘুরতে ঘুরতে গোলে পৌঁছবে। তাছাড়া সেইসময় চামড়া দিয়ে যে বল তৈরি করা হত সেই বল জল শুষে নিত। ইউরোপে একটু বেশি বৃষ্টি হয়, তাই সেখানে বল ভিজে গিয়ে ভারী হয়ে যেত। ফলে বল ঘুরত না।

লাতিন আমেরিকার আবহাওয়া একটু শুষ্ক আর গরম। তাই সেখানে এই সমস্যা হত না। ফলে বল সেখানে অনায়াসে ঘুরত। ফলে ডিডি-র মতো দক্ষ খেলোয়াড়রা সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ফুটবলকে বাতাসে বাঁক খাইয়ে ফ্রিকিক নিত। তাতে ফলও আসত।

কিন্তু এই প্রবণতা ডিডি-দের বেশিদিন ভাগ্যে টেকেনি। ১৯৬০-এর দশকে সিন্থেটিক সামগ্রী দিয়ে বল বানানোর প্রক্রিয়া শুরু হতেই এই কৌশল রপ্ত করে নিতে থাকে ইউরোপিয়ান ফুটবলের দক্ষ খেলোয়াড়রা। তারাও এবার বলকে বাঁক খাওয়াতে শুরু করে। ফলে বল বাঁক খেতে খেতে গোলে ঢুকে যায়।

প্রথম দিকে বাতাসে বল যতটা বাঁক খেত এখন তাঁর চেয়ে বল এখন অনেক বেশি বাঁক খাচ্ছে। এর কারণ ধরা হচ্ছে বলের গঠনের উপর। বলা হচ্ছে বলের চামড়ার সেলাইয়ের একটা বড় ভূমিকা আছে। ষড়ভূজ আকৃতির চামড়ার টুকরোকে যেভাবে সেলাই করা হয় তার উপর বলের গঠন অনেকটা নির্ভর করে। অনেক আগে ৩২টি চামড়ার টুকরো বা প্যানেল সেলাই করে বল তৈরি করা হত। পরে তা কমে আসে ২৪টি। ২০০৬ সালে অ্যাডিডাস কোম্পানি যে বল তৈরি করে তাতে প্যানেল রাখা হয়েছে ১৪টি।

এখন এই প্যানেলের উপরও বল বাঁক খাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করছে। সেখানেও যুক্তি খাড়া করেছে ফুটবল গবেষকরা।তেমনই এক ফুটবল গবেষক হলেন ড. কেন ব্রে। তিনি ফুটবল নিয়ে একটি বই লিখেছেন। যেখানে তিনি সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, বল কিভাবে বাতাসে এভাবে এতটা বাঁক খেতে পারে। তিনি সেখানে লিখেছেন-বলে প্যানেলের সংখ্যা বেশি হলে বাঁক কম খাবে। প্যানেল সংখ্যা কম হলে বাঁক তত বেশি খাবে। সেক্ষেত্রে খেলোয়াড়ের উপর নির্ভর করছে তিনি বলটিকে কতটা ঘোরাতে সমর্থ হচ্ছেন। তিনি তাঁর ক্ষমতা অনুযায়ী বলকে সুইং করাতে চাইলে এখনকার বল অনায়াসে সেই খেলোয়াড়ের ক্ষমতা মতো বাঁক খেতে খেতে গোলের ভিতর ঢুকে যাবে। অর্থাৎ সুইং বেশি করালে বাঁক কম খাবে আর সুইং কম করালে বাঁক বেশি খাবে। সেক্ষেত্রে গোলকিপারের দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার থাকবে না।

অতীতে দেখা গেছে ফ্রান্সের থিয়েরি হেনরি কিংবা ব্রাজিলের রোনাল্ডিনহোকে অসাধারন সব ফ্রিকিকে গোল করতে। তাঁরা উভয়েই কিন্তু সাইডস্পিনে দক্ষ ছিলেন। আবার ইংল্যান্ডের ডেভিড বেকহাম ছিলেন টপ্সপিনে দক্ষ। তাই তাদের ফ্রিকিকে বারেবারেই বোকা বনে যেতে দেখা গেছে গোলকিপারদের।

বিষয়টি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছে বিবিসি। তাদের মতে, এই “ম্যাজিক ফ্রিকিক”-এর পিছনে রয়েছে কিন্তু পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্র। যেখানে বলা হচ্ছে-“একটি ফুটবল যখন বাতাসে ঘুরপাক খেতে খেতে যায় তখন তা পিছনের অংশে বাতাসে একটা আলোড়ন তৈরি হয়, যা সামনে ও দু’পাশে বাতাসের চাপের পার্থক্য তৈরি হয়-যা বলের গতিপথকে বাঁকা করে দেয়।”

আর এই প্রক্রিয়াতেই রাশিয়ায় ফিফা বিশ্বকাপে একাধিক খেলোয়াড়রা ম্যাজিক ফ্রিকিক-এ বোকা বানিয়ে চলেছেন গোলকিপারদের।

Published on: জুন ২৫, ২০১৮ @ ২২:৩৫


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 − = 9