মুম্বই-এ দুর্গাপুজো : বিচিত্র উপলব্ধি দোরগোড়ায়

এসপিটি এক্সক্লুসিভ দেশ ধর্ম
শেয়ার করুন

  • ১৯২৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মুম্বইতে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন স্থাপিত হয়।
  • উদ্বোধক ছিলেন স্বামী শিবানন্দ।
  • মঠ ও মিশনের আয়তন ছিল যথাক্রমে ১.৩৪ একর ও ১.৬৯ একর।

মুম্বই থেকে বিশিষ্ট সাংবাদিক অরুণাভ গুপ্ত

Published on: অক্টো ৬, ২০১৯ @ ১৮:১৮

এসপিটি নিউজ, খার(মুম্বই), ৬ অক্টোবর:  ১৯৫১ মা-দুর্গা তাঁর আবির্ভাব ঘটালেন মুম্বই অবস্থিত রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন খার-এ। বলা বাহুল্য সেই বছরের চারাগাছ এখন মহীরুহ। ভাগ্য আমার তুঙ্গে বলেই খানিকটা কাকতালীয়ভাবে চে-দুর্গার আরাধনায় উপ্সথিত থাকার সুযোগ ঘটে। সৌজন্যে স্বামী শিবার্চনানন্দজী, স্বামীজী প্রবর্তিত উদ্বোধন পত্রিকার সম্পাদক। উনি পুজোর দায়িত্বে থাকা পুরোহিতদের অন্যতম। মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ সত্যসেবানন্দজী-র সাক্ষাত পেলাম। তাঁর মাধ্যমে জানলাম অগণিত ভক্ত ও দর্শনার্থীদের সুষ্ঠুভাবে সামাল দেওয়ার জন্য ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্বেচ্ছাসেবকরা আসেন এবং সংখ্যায় ‘শ-য়ের উপর তো হবেই। এঁদের থাকার জন্য গেস্ট হাউস রয়েছে। স্বামীজী-ব্রহ্মচারীদের পাশাপাশি নানান ভাষাভাষী গৃহস্থ মহিলারা ওখানে সকাল থেকে সমানতালে পুজোর আয়োজনে ব্যস্ত থাকছেন। বৈদিক মতে দেবী দুর্গার আরাধনা, এত নিষ্ঠা আর ভক্তি সহকারে নিখুঁত মাতৃ আরাধনা দর্শনার্থীদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে, মন্ত্রোচ্চারণে অপরিচিত অনুভূতি শরীর ও মন যেন ধ্যানমগ্ন হয়ে পড়ে।

এই পুজো নিয়ে একজন অটোচালকের নিজের অনুভূতি

প্রতিটি দিন মানুষের ভিড় লক্ষণীয় কিন্তু বিশেষ করে অষ্টমীতে কুমারী পুজোর দিন মানুষের উপস্থিতি হিসেব নিকেশের বাইরে চলে যায়। ইঙ্গ-বিঙ্গ সমাজের মানুষদের মতামত আপাতত উহ্য থাক, বরং একজন সাধারণ অটোচালকের কেমন প্রতিক্রিয়া জানাই। ওঁর নাম পবন। গেটের সামনে আমাকে পৌঁছে দিয়ে বলল- জানেন সাব, এমন বড়িয়া পুজো আমি দেখিনি। মায়ের প্রসাদ অমৃত, সকলকে নিয়ে আসি। কোথাও যাই না শুধু এখানে আসবই। নির্ভেজাল শ্রদ্ধা, দুর্গার আরাধনা সব জায়গাতেই হয়। কিন্তু রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের একচালার মা-দুগগার প্রতিমা যেন মূর্তিময়ী ভরসা, আড়ম্বরবিহীন আটপৌরে ঘরোয়া পরিবেশে বড্ড আপনজন, ভঙ্গী যায় খোস মেজাজে বিড়াজিত।

স্বামীজীদের ধারাবাহিক পদার্পনে মুম্বই বরাবর সমৃদ্ধ

স্বামী বিবেকানন্দ বোম্বাই অধুনা মুম্বই-এর ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের প্রতি গভীর সম্পর্ক ছিল। কানহারি গুহার প্রতি তাঁর তীব্র আকর্ষণ লক্ষণীয় এবং স্বামীজী চেয়েছেন এখানে আধ্যাত্মিক কেন্দ্র স্থাপন করতে। শ্রীরামকৃষ্ণদেবের প্রত্যক্ষ শিষ্য রামকৃষ্ণানানন্দ ১৯০৫ সালে মুম্বই সফরে আসেন, তখন শ্রী লোকমান্য তিলক ওঁকে মুম্বইতে রামকৃষ্ণ মিশনের শাখা খোলার জন্য আবেদন করেন। ১৯২০ বিবেকানন্দ সোসাইটির পশ্চিম শাখা একই অনুরোধ রাখে। অবশেষে ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯২৫ মঠ ও মিশন স্থাপিত হয় মুম্বইতে এবং স্বামী শিবানন্দ ২৬ জানুয়ারি ১৯২৬ উদ্বোধক ছিলেন। মঠ ও মিশনের আয়তন ছিল যথাক্রমে ১.৩৪ একর ও ১.৬৯ একর। স্বামীজীদের ধারাবাহিক পদার্পনে মুম্বই বরাবর সমৃদ্ধ ছিল। এমনকি মঠ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে থেকেই। যেমন- স্বামী বিবেকানন্দ জুলাই ১৮৯২, স্বামী ব্রহ্মানন্দ ১৮৯০, স্বামী সুবোধানন্দ ১৮৯০, স্বামী তুরীয়ানন্দ ১৮৯৩, স্বামী অভেদানন্দ ১৮৯৩, স্বামী ত্রিগুণাতিতানন্দ, স্বামী নিরঞ্জনানন্দ ১৯০২, স্বামী সারদানন্দ ১৮৯২-৯৪, স্বামী শিবানন্দ ১৯২৬, স্বামী অখন্ডনানন্দ ১৯২৬ ও স্বামী বিজয়ানন্দ ১৯২৬ প্রমুখ।

পরিশেষে

সব শেষে যে কথা না বলে পারছি না- সন্ধ্যারতির বুঝি বা কোন বিকল্প নেই। পুজারিদের নিঃশেষে নিজেকে মায়ের পায়ে সমর্পন করার মাধ্যমে সর্বজনীন মঙ্গল কামনা করা যেন নতুন ঊষার জন্ম দিচ্ছে। …দৃষ্টিকটু লেগেছে পুজো প্রাঙ্গনে ঢালাও ব্যবসার ঢল দেখে এবং তার সঙ্গে দর্শনার্থী দঙ্গলের পাল্লা দিয়ে খাওয়ার বহর সুরের মাঝে অসুরের প্রবেশ ঘটিয়েছে।

Published on: অক্টো ৬, ২০১৯ @ ১৮:১৮


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

97 − 94 =