মিশন শক্তিঃ মহাকাশে স্যাটেলাইট ধ্বংস করার শক্তি অর্জন করল ভারত, বিশ্বে চতুর্থ দেশ হিসেবে উঠে এল-বললেন প্রধানমন্ত্রী মোদি

Main দেশ
শেয়ার করুন

Published on: মার্চ ২৭, ২০১৯ @ ২১:৫২

এসপিটি নিউজ ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী মোদি বুধবার দেশের উদ্দেশ্যে এক ভাষণ দেন। তিনি বলেন- আমাদের দেশ ভারত এবার মহাকাশ ইতিহাসে নিজের নাম প্রতিষ্ঠিত করল।ভারত তিন মিনিটে মহাকাশে লো আর্থ অর্বিট (এলইও) তে স্যাটেলাইটকে ধ্বংস করে দেয়। এই শক্তি অর্জন করার ক্ষেত্রে ভারত সারা পৃথিবীতে চতুর্থ দেশ হিসেবে নিজেদের জায়গা প্রতিষ্ঠিত করে ফেলল।

এর আগে এই শক্তি অর্জন করেছে বিশ্বের তিনটি দেশ

১) প্রধানমন্ত্রী বলেন-“আজ ২৭শে মার্চ, কিছু সময় আগে ভারত এক অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। ভারত আজ নিজের নাম মহাকাশ ইতিহাসে মিশন শক্তি নামে প্রতিশঠিত করেছে। এখনও পর্যন্ত বিশ্বে তিন দেশ- রাশিয়া, আমেরিকা ও চিন এই ক্ষমতা হাসিল করেছে। এবার ভারত সেই তালিকায় নিজের জায়গা সুরক্ষিত করে ফেলল। প্রত্যেক হিন্দুস্তানির এর চেয়ে বড় গর্ব আর হতে পারে না। কিছু সময় আগে আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা মহাকাশে ৩০০কিলোমিটার দূরে পৃথিবীর নীচে থাকা এক লাইভ স্যাটেলাইটকে ধ্বংস করে দেয়।

২) মোদি বলেন- “লো অর্বিট অর্থাৎ লাইভ স্যাটেলাইট, যা কিনা পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্য ছিল, সেটিকে মাদের বৈজ্ঞানিকদের তৈরি স্যাটেলাইট দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয় এর পর আমদের ওই স্যাটেলাইটটির নাম দেওয়া হয়েছে অ্যান্টি-স্যাটেলাইট। মাত্র তিন মিনিটে এই অপারেশন  সফল হয়েছে। মিশন শক্তি অত্যন্ত কঠিন অপারেশন ছিল। যা অনেক উঁচুতে অঠার ক্ষমতা প্রয়োজন ছিল। বৈজ্ঞানিকরা এসমস্ত কিছুই নিজেদের পরিশ্রম আর অধ্যাবসায় দিয়ে হাসিল করেছেন। আমাদের প্রত্যেক ভারতীয় এজন্য গর্ব করা উচিত যে এই পরাক্রম আমরা অ্যান্টি-স্যাটেলাইট এ-স্যাট মিশাইল নামে অভিহিত করেছি।”

সকলেরই এই এই উপগ্রহ থেকে সুবিধা হবে

৩) মোদি বলেন-“মিশন শক্তির সঙ্গে যুক্ত সকল বৈজ্ঞানিক, ডিআরডিও লোকজনকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। যারা এই অভূততপূর্ব সাফল্য অর্জনে প্রয়াসী হয়েছেন।আমার আমাদের বৈজ্ঞানিকদের জন্য গর্ব হচ্ছে। মহাকাশ আজ মাদের জীবনশৈলীর এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার সাক্ষী রয়ে গেল। আজ আমাদের কাছে পর্যাপ্ত সংখ্যায় উপগ্রহ আছে যা আলাদা-আলাদা ক্ষেত্রে নিজেদের ভূমিকা পালন করে চলেছে। যেমন-কৃষি, প্রতিরক্ষা, জরুরী ব্যবস্থা, টেলিভিশন, বিনোদন, আবহাওয়ার বার্তা, নেভিগেশন, শিক্ষা, মেডিক্যাল। আমাদের উপগ্রহেরসুবিধা সকলেই পাচ্ছে ।”

আমাদের এই ক্ষমতা কারও বিরুদ্ধে নয়

৪) মোদি বলেন-“বিশ্বে এই মুহূর্তে মহাকাশ এবং উপগ্রহের গুরুত্ব ক্রমে বেড়েই চলেছে। জীবন একে বাদ দিয়ে সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে এইসব উপকরণগুলিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করাটা ঠিক তেমনই গুরুত্বপূর্ণ। আজকের এই অ্যান্টি -স্যাটেলাইট এ-স্যাট মিশাইল ভারতের নিরাপত্ত্রা নিরীখে এবং ভারতের উন্নয়ন যাত্রার ক্ষেত্রে অত্যন্ত শক্তিশালী হবে। আমি আজ বিশ্বকে জানাতে চাই যে আমরা যে ক্ষমতা অর্জন করলাম, এটা কারও বিরুদ্ধে নয়। এটি দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলা দেশের এক সুরক্ষাকবচ পদক্ষেপ । ভারত মহাকাশে অস্ত্রের আস্ফালনের বিরোধী। এক্ষেত্রে এই নীতি কোনওভাবেই বদলাবে না। আজকের এই পরীক্ষা কোনওভাবেই আন্তর্জাতিক আইন কিংবা সন্ধি-চুক্তি ভঙ্গ করবে না।”

এভাবেই হল অ্যান্টি স্যাটেলাইট পরীক্ষা

৫) ভারতের হাতে ত্রিস্তরীয় বিএমডি ইন্টারসেপ্ট মিশাইল র‍্যাডার আছে। এটি লক্ষ্যকে খুঁজে বের করে স্যাটেলাইট-এর অবস্থান খুঁজে বের করতে পারে। লক্ষ্য খোঁজা হয়ে গেলেই মিশাইল ছেড়ে দেওয়া হয়। জমিতে অবস্থিত র‍্যাডার মিশাইলকেও লক্ষ্যে পোঁছে দিতে পারে। এরপরই মিশাইলের উপর আঘাত আনতে সক্ষম হয়। এরপরই মিশাইল এই স্যাটেলাইটকে নষ্ট করে দিতে পারে।

এর আগে যে তিন দেশ সাফল্য পেয়েছে

  • বর্তমান রাশিয়া (আগে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন) ১৯৫০ সালে অ্যান্টি স্যাটেলাইট মিশন নিয়ে কাজ করে।৭০-এর দশকে তারা অ্যান্টি-স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন শুরু করে।প্রথম সাফল্য আসে ১৯৬৮ সালে। যখন তারা অর্বিটে একটি স্যাটেলাইটকে নিজেদের অ্যান্টি স্যাটেলাইট দিয়ে নষ্ট করে দেয়।
  • আমেরিকা ১৯৫০ -এর দশকে অ্যান্টি-স্যাটেলাইটের মিশাইল-এর পরীক্ষা শুরু করে। ১৯৫৮ সালের ২৬শে মে থেকে ১৯৫৯ সালের ১৩ই অক্টোবর -এর মধ্যে মহাকাশে স্যাটেলাইটকে নষ্ট করার জন্য ১২টি পরীক্ষা চালায়। কিন্তু সফল হয়নি। ৭০-এর দশকেও তারা পরীক্ষা চালায়। অবশেষে ১৯৮৫ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর তারা সফল হয়, যখন ১১,৬১৩ মেইল উঁচুতে এফ-১৫ মিশাইল উৎক্ষেপন করে এবং পৃথিবীতে ৫৫৫ কিলোমিটার উপর স্যাটেলাইট পি-৭৮-১ কে নষ্ট করে দেয়।
  • চিন ২০০৭ সালে অ্যান্টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনে সফল হয়। ২০০৭ সালের ১১ই জানুয়ারি মহাকাশে ৮৬৫কিমি উঁচুতে অবস্থিত ফেঙ্গান সিরিজে নিজেদের স্যাটেলাইট ‘এফভায়-১সি পোলর’ মিশাইল নষ্ট করে দেয়।

Published on: মার্চ ২৭, ২০১৯ @ ২১:৫২

 

 

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

29 + = 36