‘ভাগাড় কাণ্ড’কে পিছনে ফেলে দিল এই বিশ্ব সম্মেলনঃ কলকাতার এই বিশ্ববিদ্যালয় দেখাল তাদের কেরামতি, দিল সমাধানের পথ

এসপিটি এক্সক্লুসিভ দেশ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা-ডা. সৌমিত্র পন্ডিত

Published on: নভে ২৫, ২০১৮ @ ১১:১৫

কলকাতার মানুষদের থেকেও কলকাতার কিছু সংবাদ মাধ্যমের সবেতেই একটু বেশি মাথাব্যাথা। তারা সব কিছুর ভিতর খুঁত বের করার চেষ্টা করে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সংবাদ দুনিয়ার দিকে প্রতিনিয়ত চোখ রাখলে বোঝা যাবে আমাদের এখানকার সংবাদ পরিবেশনের মান কতখানি। এই কথাগুলি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে বাধ্য হলাম তার কারণ এখানে সুসংবাদের চেয়ে দুঃসংবাদ পরিবেশনে বেশি জোর দেওয়া হয়, যেভাবে কিছুদিন আগে পচা মাংস কিংবা ‘ভাগাড় কাণ্ড’ নিয়ে এখানকার ‘কিছু’ এই শব্দটি বলতে বাধ্য হচ্ছি সব সংবাদ মাধ্যম নয় গুটি কয়েক সংবাদ মাধ্যমে এমন ভাব দেখানো শুরু করে দিল যে এখানকার মানুষ পচা মাংস খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাদের চরম পরিণতি হচ্ছে।

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ২৫ অক্টোবরঃ কিন্তু আদতে কী এমনটা হয়েছে। তা হলে বিশ্ব জুড়ে আলোড়ন পড়ে যেত। আশ্চর্য আর হাস্যকর এই যে কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত ‘ইন্ডিয়ান মিট সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-এর অষ্টম সম্মেনন এবং ইন্টারন্যাশনাল সিম্পোসিয়াম শুরু হতেই সেই ‘কিছু’ সংবাদপত্র ফের লাফালাফি শুরু করে দিল। কিন্তু তাদের থোতা মুখ ভোঁতা হয়ে গেছে সম্মেলনের শেষে।কলকাতার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী, গবেষক থেকে শুরু করে শিক্ষক-ছাত্র-ছাত্রীরা সংবাদ মাধ্যমের তৈরি করা তথাকথিত ‘ভাগাড় কাণ্ড’কে পিছনে ফেলে দিয়েছে শুধু নয় তারা প্রমাণ করে ছেড়েছে এটা একটা ঘটনা মাত্র। এর বেশি কিছু নয়।

পেশি খাদ্য অর্থাৎ মাংস জাতীয় খাবার ছিল আছে এবং আগামিদিনেও তা থাকবে। কিছু সংবাদ মাধ্যম তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে এসব ঘটনাকে কোনও একটি বিশেষ নাম দিয়ে তা জিইয়ে রাখতে পারবে না। তাদের অবশ্যি মনে রাখতে হবে তারা যদি এসবের অপ্রচারে জোর দেয় তাহলে আমাদের মতো এমন অনেক সংবাদ মাধ্যম আছে যারা প্রতিনিয়ত ভাল দিক নিয়ে প্রচারে আরও বেশি জোর দিয়ে যাব।সংবাদ প্রভাকর টাইমস গর্বিত যে এই সম্মেলনে প্রাণী বিজ্ঞানী-গবেষক-ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের সেই অপপ্রচারের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছেন। এটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য।

যতই ‘ভাগাড় কাণ্ড’ নিয়ে কেউ কেউ ‘ঘেউ ঘেউ’ করুক না কেন ভোজন রসিক বাঙালি-কে মাংস বিমুখ করা কোনওদিন যাবে না। তা শুধু কঠিনই নয় অসম্ভব।আসলে এসব ঘটনা আটকাতে হলে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী। ইতিমধ্যে সেদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। যারা সেদিকে নজর দেবে না তাদের বিরুদ্ধে খাদ্য আইনে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। বিজ্ঞানীরা এই সম্মেলনে বাতলে দিয়েছেন সেই পথগুলি, কি করে পরিষ্কার মাংস উৎপাদন করা যায়।কিভাবে, তাঁরা বলছেন-

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে মাংস উৎপাদন করা যায়।

মানুষের কাছে সহজলভ্য হবে এবং পুষ্টির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।

আরও বেশি করে প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও তার প্র্যোগ বাড়ানোর মধ্য দিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে।

চাষি বা খামারিদের নতুন প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে অর্থনৈতিক উন্নতিসাধন কিভাবে করা সম্ভব তার পথ দেখাতে হবে।

সরকারি, শিল্পপ্রতিশঠান-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। যাতে আগামিদিনে উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে আর্থিক উন্নতি ঘটে।

মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে-মাংস থেকে কোন কোন রোগ-ব্যাধি মানুষের দেহে সংক্রামিত হয় এবং কিভাবে তার প্রতিকার সম্ভব তার পাঠ দিতে হবে।

“ভ্যালুঅ্যাডেড” প্রোডাক্ট কিভাবে প্রক্রিয়াকরণ করা হয় তা মানুষের মধ্যে প্রচার করতে হবে।

প্রাণীজ প্রোটিন ছাড়া মানব দেহের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয় না বৃদ্ধির সাথে বুদ্ধির বিকাশ হয় না তা জনসমক্ষে জানাতে হবে।

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খোলা জায়গায় মাংস কাটা বা বিক্রয় করার বিষয়কে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

ভাল মাংস ও পচা মাংসের মধ্যে ফারাক এবং তা কিভাবে সনাক্ত করা যায় -সহজে তা প্রতিনিয়ত মানুষকে বোঝাতে হবে।

মাংস কাটার ৪ ঘণ্টা পর সেটি না কেনা ভাল।

পচা মাংস কালো ও কমনীয়তা কম থাকে অনেক সময় গন্ধ বেরোয়। ফ্যাকাসে হয়ে যায়।

মাংসপ্রিয় মানুষদের বাড়িতে মাংস রাখতে হলে ভাল করে পরিষ্কার জলে ধুয়ে পাঁচ থেকে সাত দিন ডিপ ফ্রিজে রাখতে পারেন তারপর ওই মাংস না খাওয়া ভাল।

প্রত্যেকটি অধ্যায়ে মূল আলোচনার বিষয় ছিল কিভাবে খাদ্যসুরক্ষা পুষ্টির সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায় তার জন্য নতুন উদ্ভাবনীময় দিকগুলি নিয়ে গবেষণা তার পরীক্ষা লব্ধ ফল মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আপাত সফল ব্যক্তি তথা প্রতিনিধিদের কাছে এর আগে এত বড় এত সফল সম্মেলন এর আগে হয়নি। তার সাথে উপরি হিসেবে “সিটি অব জয়”-কলকাতার সৌন্দর্য্য এই সম্মেলনকে সমৃদ্ধ করেছে। তা তো বদেশি অতিথি অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক রবিন ওয়ার্নার নিজের মুখেই জানিয়ে গেছেন।

২২ থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত চলা তিনদিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ফিস ফেস্টিভ্যাল থেকে ছৌ-নাচ-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রকমারি খাওয়া-দাওয়া সঙ্গে বিজ্ঞান ভিত্তিক নানা সৃষ্টিশীল আলোচনা সমাধানের পথ বের করে আনা সনব মিলিয়ে এই সম্মেলন চূড়ান্তভাবে সফল শুধু নয় বিগত সাতটি সম্মেলনকেও অনেক পিছনে ফেলে দিল। যা থেকে বলতেই হয় আবারও বিশ্ব সেরা আমাদের প্রাণের শহর প্রিয় কলকাতা।

ইন্ডিয়ান মিট সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-এর অষ্টম সম্মেলন ও ইন্টারন্যাশনাল সিম্পোসিয়াম-যার মূল বিষয় ছিল “পেশি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন-পুশঠি নিরাপত্তা মানের ও নিরাপত্তার জন্য।”যার পুরোভাগে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী উৎপাদন প্রযুক্তি বিজ্ঞান বিভাগ- এর অধ্যাপক তথা এই জাতীয় সম্মেলনের সম্পাদক অধ্যাপক শুভাশীষ বিশ্বাস এবং এই বিভাগের অন্যান্য ছাত্র-শিক্ষক কর্মচারী।এই সম্মেলনের সাফল্যের বিষয়ে অর্গানাইজিং কমিটির প্রায় সকল সদস্য নিজেদের রাতদিনের পরিশ্রমকে সফল করতে পেরে যারপরনাই আপ্লুত।

তিনিদিনের এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশ, মাল্যেশিয়া, নেপাল, অষ্ট্রেলিয়া থেকে ২৫০জন প্রতিনিধি অংশ নিয়েছিলেন।বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস যেভাবে সেজে উঠেছিল মনে হচ্ছিল বিশ্বের মাঝে এ যেন এক “নতুন বিশ্ব” “দুধে ভাতে বাঙালি” কখন “মাছ-মাংসের বাঙালি” হয়ে গেছে তা এই অনুষ্ঠানে এসে উপলব্ধি করতে পারলাম।

সবশেষে সম্মেলনের বিভিন্ন অধ্যায়ে অ্যাওয়ার্ড প্রাপকদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বিশিষ্ট অতিথিরা। অনুষ্ঠানের শেষে সম্পাদক অধ্যাপক শুভাশীষ বিশ্বাস কৃতজ্ঞতা জানান আগত সকল প্রতিনিধিদের। তিনি বলেন-যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম এই সম্মেলন সফল করা সম্ভব ছিল না তারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য অধায়পক পূর্ণেন্দু বিশ্বাস এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-ছাত্র-কর্মচারী, বিজ্ঞাপন্দাতা, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, ইন্ডিয়ান মিট সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন।ফের এক বছরর অপেক্ষা নিয়ে অর্থাৎ নবম সম্মেলনের আশা নিয়ে শেষ হল এই সম্মেলন।

Published on: নভে ২৫, ২০১৮ @ ১১:১৫

 

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

76 − = 74