‘ বঙ্কিম ভবন ভগ্নপ্রায় ‘- প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে নৈহাটিতে বিনম্র প্রতিবাদ গবেষক, সংস্কৃতিপ্রেমীদের

দেশ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: ফেব্রু ২৩, ২০২১ @ ১৯:০২
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, নৈহাটি, ২৩ ফেব্রুয়ারি:  গতকাল হুগলির এক জনসভায় দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন- বন্দেমাতরমের যেখানে বসে লেখা হয়েছিল সেই বঙ্কিম ভবন আজ অত্যন্ত ভগ্নপ্রায় অবস্থায় আছে। এই তথ্য চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তেই নৈহাটিতে সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মভিটা যা এখন বঙ্কি্মভবন ও গবেষনা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে সেখানে সকলে খুব ব্যথিত হন। নৈহাটির আপামর সাধারণ মানুষ যাদের মধ্যে গবেষক থেকে শুরু করে সংস্কৃতিপ্রেমীরাও আছেন তারা সকলে একযোগে বিনম্র প্রতিবাদে সরব হন। নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভূমিকও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঠিক তথ্য পরিবেশন না করার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

প্রতিবাদ জানিয়ে বিধায়ক পার্থ ভৌমিক প্রকাশ করলেন তাঁর ক্ষোভ

নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক এই ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে বলেন- “প্রধানমন্ত্রীর এই বিষয়টা নিয়ে বলার আগে তাঁর সঠিক তথ্যটা জেনে রাখা উচিত ছিল। যে বা যারা তাঁকে এমন ভুল তথ্য দিয়েছে তা মানুষের কাছে বিশেষ করে নৈহাটির মানুষের কাছে এক বড় আঘাত। বঙ্কিমচন্দ্র নৈহাটিবাসীর কাছে এক আবেগ। সেই আবেগে আঘাত করলে তা কেউ সহ্য করতে পারে না। আর উনি তো প্রায়ই না জেনে অনেক কথা বলেন। উনি মুখে বাংলা বলেন ঠিকই কিন্তু হৃদয়ে নয়। উনি বাংলা কিংবা বাঙালিকে ঘৃণা করেন। তা না হলে উনি আন্দামানে ইংরেজদের কাছে মুচলেকা দেওয়া সাভারকরের নামে বিমানবন্দরের নামকরণ করেন! কই উনি তো যে তিন বাঙালি বিপ্লপবী যারা ইংরেজদের কাছে মুচলেকা দেয়নি তাদের নামে করলেন না। এ থেকেই বোঝা যায় বাঙালিদের প্রতি তাঁর সত্যিই কতটা প্রীতি। উনি বরাবরই বাংলাকে না জেনে বাংলার সংস্কৃতিকে না জেনে বাংলা সম্পর্কে এমন ধরনের তথ্য পরিবেশন করেন।”

“গতকালের ঘটনা আমাদের সকলকে খুব ব্যথিত করেছে”

আজ সকালে নৈহাটিতে বঙ্কিম-ভবন গবেষণা কেন্দ্রের সামনে নৈহাটির সংস্কৃতি প্রেমী মানুষ, গবেষক সকলে জমায়েত হন। লেখক -সাংবাদিক শোভনলাল রাহা বলেন- “গতকালের ঘটনা আমাদের সকলকে খুব ব্যথিত করেছে। আপনারা দেখছেন এই বঙ্কিম ভবন আজ কেমন সুন্দরভাবে সজ্জিত আছে। ১৯৯৯ সালে তৎকালীন রাজ্য সরকারের উচ্চ শিক্ষা দফতর বঙ্কিম ভবন অধিগ্রহণ করে। তারপর থেকে ধারাবাহিকভাবে রাজ্য সরকারের কার্যপ্রণালীর মাধ্যমে বঙ্কিম ভবন আজ এই রূপ নিয়েছে। এটা সত্যি ১৯৯৯ সালের আগে বঙ্কিম ভবন জীর্ণ দশায় ছিল। কিন্তু তা ছিল আগের ঘটনা। তারপর রাজ্য সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বঙ্কিম ভবন গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হয়।”

“এই তথ্যটি খুবই ভয়ঙ্কর এবং বিষাক্ত”

এক গবেষক প্রধানমন্ত্রীর গতকালের বিতর্কিত অংশ তুলে ধরে বলেন- ” এই তথ্যটি খুবই ভয়ঙ্কর এবং বিষাক্ত। সেই কথাটা নথি আকারে আমরা আজ তুলে ধরব। আপনারা দেখতে পাবেন যে এখানে কতটা যত্নের সাথে এই ভবনকে রক্ষণাবেক্ষন করা হচ্ছে। রাজ্যের স্বার্থে দেশের স্বার্থে সঠিক তথ্য সকলের জানা উচিত। মিথ্যেরও ধরন আছে। আপনাদের সাল তারিখ সব দিয়ে দেব। বিচারের ধৃষ্টতা আমাদের নেই। আপনারা দেখবেন। আপনারাই বিচার করবেন। সংস্কৃতি একটা বড় জগৎ। কেউ নাটকের সঙ্গে, কেউ সংগীতের সঙ্গে, কেউ চারুকলা, কেউ ললিতকলার সঙ্গে যুক্ত। এতগুলি বিভাগের মানুষ যখন এক জায়গায় হয়েছেন তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তাদের যে আবেগ সবটাই নৈহাটি কেন্দ্রীক। তাদের ভাবাবেগে ভীষণভাবে আঘাত লেগেছে।”

“তাঁকে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া হয়নি”

সঙ্গীত শিল্পী রাজা চট্টোপাধ্যায় বলেন -“প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন তাতে আমার দৃঢ় বিশ্বাস তাঁকে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া হয়নি। তার ফলে একটা ভুল তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে। যার দায়ভার আমরা এড়াতে পারি না। গতকাল যে তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে আমি বিনম্র ভাবে তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

২০০৯ সালে কেন্দ্রের মানব সম্পদ উন্নয়ন দফতর থেকেও একটা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল

সংস্কৃতিপ্রেমী একজন বলেন- “শুধু রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতরই যেমন আছে তেমনই  ২০০৯ সালে কেন্দ্রের মানব সম্পদ উন্নয়ন দফতর থেকেও একটা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। সেখানে প্রত্যেকটা রাজ্যের ভাষার উপর মানব সম্পদ উন্নয়ন বিভাগ একটা আলাদা প্রজেক্ট নিয়েছিল।’বাংলা ভাষা মন্দাকিনী’ এতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বহু লেখকের ২৬ মিনিটের ছোট ছোট স্লট ভিডিওগ্রাফি করেছিল। সেখানে যারা প্রথিতযশা লেখক যাদের লেখা জাতীয়তাবোধে একাগ্রতায় উদ্বুদ্ধ করেছিল তাদের স্থান দেওয়া হয়েছিল, বঙ্কিমচন্দ্র তার মধ্যে পড়েন। সারা পৃথিবীতে যেখানে ভাষা চর্চা হয় সেখানে ভাষাগুলির একটা আর্কাইভ আছে, সেখানে সেগুলি সংরক্ষিত হয়ে আছে।”

“রাজনীতি রাজনীতির জায়গায় থাকুক”

তিনি বলেন-“কয়েকদিন আগেই একুশে ফেব্রুয়ারি চলে গেছে। বাংলা ভাষার অন্যতম লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তাকে নিয়ে যে কোনও ধরনের তথ্য পরিবেশন করার আগে আর একটু সতর্কভাবে করা প্রয়োজন ছিল বলে মনে করি।” আর এক গবেষক জানান- রাজনীতি রাজনীতির জায়গায় থাকুক। দয়া করে সেখানে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যকে নিয়ে টানাটানি করবেন না।

Published on: ফেব্রু ২৩, ২০২১ @ ১৯:০২


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

52 − 43 =