প্রাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ফের আন্দোলনে, ৫ মাস কেটে গেলেও পূরণ হল না দাবি

Main দেশ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান রাজ্য
শেয়ার করুন

পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী এবং মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ শুক্রবার এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের একটা মিটিং ডাকা হয়।

আন্দোলনকারী শিক্ষকদের অভিযোগ- আমাদের হুমকি দেওয়া হয়েছে, শিক্ষকরা আন্দোলন করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 সংবাদদাতা- অনিরুদ্ধ পাল

Published on: আগ ৯, ২০১৯ @ ১৭:৫৮

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ৯ আগস্ট: আমরা দেখেছিলাম কিছুদিন আগে জুনিয়র ডাক্তারদের তীব্র আন্দোলনের ছবি। মাত্র দু-সপ্তাহেরও কম সময়ের ব্যবধানে রাজ্য সরকারকে চাপের মুখে পড়ে নবান্নে জুনিয়র ডাক্তারদের এক বিশাল প্রতিনিধি দলের মুখোমুখি বসে ‘অন লাইভ’ আলোচনা করতে হয়েছিল স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ সরকারের শীর্ষ কর্তাদের। সেই ‘অন লাইভ’ বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জুনিয়র ডাক্তারদের ‘লক্ষ্মী ছেলে’ বলে প্রশংসিত করে তাদের সব দাবি-দাওয়া মেনে নিয়েছিলেন।সেই ছবি দেখা না গেলেও ফের কিন্তু রাজ্যের আরও এক গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন। অভিযোগ-তাদেরও হুমকি দেওয়া হয়েছে যদি আন্দোলন না প্রত্যাহার করে তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আন্দোননে প. ব. প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা

আজ থেকে ঠিক পাঁচ মাস আগে কলকাতার বেলগাছিয়ায় পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের ১২ বছরের বঞ্চনার দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিলেন। সেদিনও তারা বলেছিলেন দাবি পূরণ না হলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন। যদিও তাদের সেই আন্দোলনকে সেদিন আশ্বাস দিয়ে থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পাঁচ মাস কেটে যাওয়ার পরেও কিন্তু তাদের সেই দাবি পূরণ হল না।

কি কারণে এই আন্দোলন

প্রাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ক্ষোভের সঙ্গে অভিযোগ করেন-” পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী এবং মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ শুক্রবার এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের একটা মিটিং ডাকা হয়েছিল। ১০১তম মিটিং-এ আমাদের শিক্ষক প্রতিনিধিদের তরফ থেকে অনুমতি নেওয়া সত্ত্বেও তাদের কোনরূপ আলোচনায় না ডেকে এক তরফা কিছু সিদ্ধান্ত ইসি থেকে নেওয়া হয়েছে। তার প্রতিবাদে আমাদের যে সমস্ত দাবি ছিল তা নিয়েই আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে। এই আন্দোলনে সমস্ত ধরনের শিক্ষক এখানে উপস্থিত হয়ে ইসি-র সামনে তাদের অবস্থান প্রদর্শন করেছেন। এ ব্যাপারে শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোনওভাবেই ইসি-র চেয়ারম্যান কথা বলতে রাজী হয়নি। আমরা এর কারণ জানতে চাইলে তারা নানা অজুহাত দেখিয়ে সেটা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। আমরা চেয়েছিলাম সবার সঙ্গে কথা বলতে কিন্তু কিন্তু উপাচার্য পূর্ণেন্দু বিশ্বাস কারও সঙ্গে কথা বলতে রাজী হননি। শুধু দু’জনের সঙ্গে কথা বলতে রাজী হয়েছিলেন। আমরা সকল শিক্ষকরা এটা মেনে নিতে পারিনি। আমাদের একটাই কথা- আমাদের সকলের সঙ্গেই কথা বলতে হবে। লজ্জ্বার বিষয় এই যে শিক্ষক প্রতিনিধি যারা ইসি মেম্বার তারা শিক্ষকদের সঙ্গে কোন আলোচনা না করে শিক্ষকদের বিরূপতা পোষণ করে এসেছেন। অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেওয়া একটা নাইট ডিউটি কোনওভাবে মেনে নেওয়া যায় না সেটাও চাপিয়ে দিয়েছে। সেটা আমরা ১ তারিখ থেকে বন্ধ করেছি। এছাড়াও আরও অন্যান্য দাবিতে আন্দোলন ছিল আজ। আমরা আগামিদিনে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের পথে আমরা যাব। ফ্যাকাল্টির ডিন হিসেবে তিনি তার দায়িত্ব পালন করেননি। আমাদের হুমকি দেওয়া হয়েছে-শিক্ষকরা আন্দোলন করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরাও অপেক্ষা করছি যে ওনারা কি ধরনের পদক্ষেপ নেন, তা দেখার। তার উপর আমাদের আগামিদিনের কর্মসূচি ঠিক করা হবে।”

কত দিনের এই বঞ্চনা

প্রাণী সম্পদ বিকাশ বিভাগে সারা দেশের মধ্যে যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতি মুহূর্তে সংবাদের শিরোণামে থাকে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক-অধ্যাপকদের কর্মকান্ড সারা বিশ্বে আজ ছড়িয়ে পড়েছে যাদের উপর নির্ভর করে আজ সারা দেশের মধ্যে প্রাণী সম্পদ ও মৎস্য বিভাগে পশ্চিমবঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বের শিরোণামে উঠে এসেছে সেই রাজ্যের প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা দীর্ঘ ১২ বছর ধরে নিজেদের বঞ্চনার যন্ত্রণা ঢেকে রেখে কর্তৃপক্ষের মন ভুলানো কথা বিশ্বাস করে কাজ করে গেছেন। এত বছর পর তাঁরা এবার বাধ্য হয়েই সরব হয়েছেন। চাইছেন সুরাহা। চাইছেন তাদের ন্যায্য সুবিধা।

শিক্ষকদের তীব্র ক্ষোভ

কিছু বছর ধরে যে বিশ্ববিদ্যালয় তাদের কর্মকান্ড চারিদিকে ছড়িয়ে দিয়েছে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব ধরনের শিক্ষক আজ পথে নামতে বাধ্য হয়েছি। আন্দোলনরত শিক্ষক-অধ্যাপকদের অভিযোগ- “দীর্ঘ ১২ বছর ধরে তারা নির্দিষ্ট হারে বেতন পাচ্ছেন না। তার থেকে তাঁরা বঞ্চিত। তার প্রধান কারণ, বারা বার কর্ত্তৃপক্ষ তাদের সান্ত্বনার বাণী শুনিয়ে গেছে। অপরদিকে সরকারি তরফ থেকে সদ্বিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী সম্পদ দফতরের অনিচ্ছার জন্য আজ শিক্ষকরা আমাদের পাওনা থেকে বঞ্চিত। তাই আমরা আজ এই ধরনাতে বসতে বাধ্য হয়েছি।”

তাদের দাবিগুলি হল-

  • অবিলম্বে শিক্ষকদের উচ্চশিক্ষা দফতরের নিয়মানুসারে Career Advancement Scheme (CAS) পেশাগত পদোন্নতি চালু করতে হবে।
  • M.V.Sc & Ph.D -Increment – UGC বা বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের নিয়মানুসারে চালু করতে হবে।
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষকদের জন্য পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য বীমা বা প্রকল্প চালু করতে হবে।
  • অর্থ দফতরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী LTC & HTC চালু করতে হবে।
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ ৬২ থেকে ৬৫ বছর করতে হবে।
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার স্বার্থে বদলিকৃত শিক্ষকদের নিজ নিজ বিভাগে পুনঃনিয়োগ করতে হবে।
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও শিক্ষার মানোন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে সকল শূন্যপদে অবিলম্বে শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ করতে হবে।
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামোর মানোন্নয়ন করতে হবে।   
  • ফ্যাকাল্টি কাউন্সিলের সিদ্ধান্তকে মান্যতা দিতে হবে।
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের এমার্জেন্সি নাইট ডিউটি অর্ডার বাতিল করতে হবে।

Published on: আগ ৯, ২০১৯ @ ১৭:৫৮


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

80 − = 79