না জেনেই প্রেম, অপহরণের ১৩ ঘণ্টা বাদে মুক্তি পেয়ে ছাত্রী জানাল ঐ মাছ ব্যবসায়ীকে সে ভালবাসে না

এসপিটি এক্সক্লুসিভ রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা- সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

Published on: ফেব্রু ১২, ২০১৮ @ ০০:৩৩

এসপিটি নিউজ,বারুইপুর, ১১ ফেব্রুয়ারিঃ মেয়েটি এখন কলেজ ছাত্রী। ছেলেটি মাছ ব্যবসায়ী।দুইজনের সম্পর্ক ১০ বছরের। বর্তমান পরিস্থিতির বিচারে ঐ ছাত্রীটি ছেলেটির সম্পর্কে জানতই না। কিন্তু এতদিন বাদে মেয়েটির বাড়ির লোকজন জানতে পারে, ছেলেটির বিরুদ্ধে বাইক ছিনতাই ঠেকে অস্ত্র আইনে দুটি থানায় মামলা ঝুলছে। অতএব, মেয়েকে সাবধান করে দেয় পরিবারের লোকজন। একথা জানতে পেরে দল্বল নিয়ে বাড়িতে চড়াও হয়ে মেয়েটির পরিবারকে শাঁসিয়ে যায় সেই প্রেমিক যুবক। আর তারপরই ছাত্রীকে রাস্তা থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ১৩ ঘণ্টা বাদে আবার তাকে রাস্তায় ছেড়েও দিয়ে যায়। এরপর থেকে সেই অভিযুক্ত প্রেমিক যুবক বেপাত্তা। ছাত্রী বলছে, সে ঐ যুবককে ভালবাসে না।

শনিবার রাতে মোবাইল দোকানে কাজ সেরে টোটোয় চেপে বাড়ি ২৩ বছর বয়সী এক কলেজ ছাত্রী। মাঝ রাস্তায় টোটো থামিয়ে জোর করে ছাত্রীকে নামিয়ে বোলেরো গাড়ি করে চম্পট দেয় ছাত্রীর প্রেমিক  সহ তার সঙ্গীরা। আর এই অপহরণের ১৩ ঘণ্টার মধ্যেই রবিবার সকালে সোনারপুরের তেমাথা থেকে ওই কলেজ ছাত্রীকে উদ্ধার করে সোনারপুর থানার পুলিশ। অধরা অভিযুক্ত প্রেমিক প্রসেন রঙ। পুলিশ তার খোঁজে চিরুনি তল্লাশি শুরু করেছে। যে কোনও মুহূর্তে গ্রেফতার হবে মুল অভিযুক্ত বলে দাবি করেছে পুলিশ।

পুলিশ অভিযুক্ত প্রেমিক প্রসেন রঙের দুই দাদা রাজিব রঙ ও দীপক রঙকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। এদিকে কলেজ ছাত্রীকে রবিবার সকালে সোনারপুর থানায় নিয়ে আসার পর তাকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে সোনারপুর থানার আধিকারিকরা। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ডিএসপি ক্রাইম ত্রিদিব সরকার। ছাত্রীর গোপন জবান বন্দি নেওয়া হয়। সোনারপুরের ৯ নম্বর ওয়ার্ড কামরাবাদ ভৌমিক পার্কে বাড়ি ওই কলেজ ছাত্রীর।

আশুতোষ কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সে। তার বাবা স্থানীয় কাপড়ের দোকানে কাজ করে। বাবা-মায়ের সে একমাত্র মেয়ে। তার মা সোমা পাল জানান, মেয়ে এক মাস ধরে বারুইপুরের এক মোবাইল দোকানে কাজ করছে পড়াশোনার পাশাপাশি। শনিবার রাত ১০টা নাগাদ কাজ থেকে ফিরে কামরাবাদ রেলগেট হয়ে টোটোইয় চেপে বাড়ি ফিরছিল। টোটোর বাঁদিকে বসে ছিল মেয়ে। আরও ২-৩ জন যাত্রী ছিল। মন্দির তলার কাছে একটি বোলেরো গাড়ি তাদের টোটোকে ওভার টেক করে এসে টোটোর সামনে পথ আটকে দাঁড়িয়ে পড়ে। টোটো চালককে ভয় দেখিয়ে বোলেরো গাড়ি থেকে নামিয়ে প্রেমিক প্রসেন ও তার দুই সঙ্গী জোর করে মেয়ের হাত ধরে মুখ চেপে ধরে খুরিগাছির দিকে চম্পট দেয়।

পুলিশ জানায়, রবিবার সকালে একটি ভ্যানে করে মেয়েটিকে এনে সোনারপুর তেমাথায় ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ছাত্রীর সাথে অভিযুক্তর ১০ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। অভিযুক্ত মাছের কারবার করে। খুরিগাছি মালবাগানের বাসিন্দা অভিযুক্ত প্রসেনের সাথে আলাপ থেকে তার প্রেম হয়। অভিযুক্ত যুবক জোর করে ছাত্রীকে বিয়ে করতে চাইছিল। কিন্তু ছাত্রী এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছিল।

ইদানীং অভিযুক্তর চালচলন পছন্দ ছিল না ছাত্রীর। এমনকি অভিযুক্ত যুবকের সাথে ছাত্রী দেখা করছে না বলে সে নিজে ২ -৩ দিন আগে ছাত্রীর বাড়িতে চড়াও হয়ে তাদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল এমন অভিযোগও করেছে ছাত্রীর পরিবার। অভিযুক্ত প্রসেন যে বিভিন্ন কেসে যুক্ত জানতে পেরে ছাত্রীর পরিবারও চাইছিল না তার সাথে মেয়ে সম্পর্ক রাখুক।

এমনকি ছাত্রীটি তার প্রেমিককে তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বারণ করেছিল।অভিযুক্তর নামে বাইক ছিনতাই থেকে অস্ত্র আইনে ভাঙড় থানায় ও সোনারপুর থানায় অভিযোগ আছে। বিয়ের জন্য শনিবার রাতে মন্দিরও বাছা হয়ে গিয়েছিল অভিযুক্তর। জোর করে বিয়ে করার জন্যই এই অপহরণ। কিন্তু ছাত্রী বিয়ে করতে চাইছিল না।বিয়ের জন্য ছাত্রীর কাছে রাতে অনেক অনুরোধ করেছিল অভিযুক্ত। শনিবার রাতে ছাত্রীকে বোলেরো গাড়িতে প্রসেন তোলার সময় গাড়ির স্পীড এত বাড়িয়েছিল যে পথে কুকুরকে মেরে দিয়েছিল। তাদের গাড়ি গঙ্গাজয়ারা হয়ে বাইপাস ধরে মুকুন্দপুরের দিকে চলে যায়। সেখানে এক ভেড়ির পাশে গ্রামের বাড়িতে ছাত্রীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। গাড়িতে ওঠার পর ছাত্রীর মুখ নিচে করে দিয়ে হাত বেঁধে দিয়েছিল অভিযুক্ত।

পুলিশ জানায়, রাতে অভিযুক্ত ছাত্রীকে কোনও মারধর নির্যাতন করেনি বলে সে পুলিশকে জানিয়েছে। শনিবার রাতে অভিযোগ দায়েরের পর সোনারপুর থানার পুলিশ ও কলকাতা পুলিশ ১৫ -২০টি গাড়ি নিয়ে রাতভর তল্লাশি চালায়। পুলিশ অভিযুক্তসহ তার দুই সঙ্গীর সন্ধানে তল্লাশি জোরদার করেছে।

Published on: ফেব্রু ১২, ২০১৮ @ ০০:৩৩


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

+ 55 = 56