দীপাবলী উৎসবঃ জড়িয়ে আছে পুরানের নানা কাহিনি

Main দেশ ধর্ম
শেয়ার করুন

প্রতিবেদক-রসিক গৌরাঙ্গ দাস

Published on: নভে ৫, ২০১৮ @ ২৩:২৩

এসপিটি নিউজ, মায়াপুর, ৫ অক্টোবরঃ বাংলা তথা ভারতবর্ষে বারো মাসে তেরো পার্বন। দীপাবলীর উৎসব হল দ্রুত নিজেকে পবিত্র করে তোলা এবং পরস্পরের মধ্যে আনন্দের আদান-প্রদান ও মহামিলনের একটি অন্যতম মাধ্যম। সর্বোপরি এই উৎসব পালনের মধ্য দিয়ে ভগবানের প্রীতি বিধান তথা সেবার বিশেষ সুযোগ লাভ করা যায়। যার ফলে জীবনের পারমার্থিক প্রগতি লাভ হয়।

সনাতন ধর্মে যত প্রকার উৎসব আছে তারমধ্যে দীপাবলী অন্যতম। দীপাবলী কথাটির অর্থ দীপশ্রেণী বা দীপের আলি। এই উৎসব দশেরার (বিজয়ার দশমীর) ২০ দিন পর উদযাপিত হয়। ত্রেতাযুগে রাবনকে বধ করার পর ভগবান শ্রীরামচন্দ্র যখন অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন করেছিলেন, তখন অযোধ্যাবাসীগণ তাঁকে স্বাগত জানানোর জন্য বিশেষ উৎসবের আয়োজন করেছিল। সমগ্র অযোধ্যা নগরীকে আলোকমালায় সজ্জিত করে বিভিন্ন নৃত্যনাট্য ও আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছিল। লারই স্মরণে এই উৎসব। আজও বিভিন্ন মন্দিরে, গৃহে, রাজপথে, শত শত ঘৃত, তৈল প্রদীপ, মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মদ্য দিয়ে এই উৎসব মহাসমারোহে উদযাপিত হয়। অনেকে আবার দীপাবলী বা দেওয়ালী উদযাপন করেন।

একটি বিশেষ পৌরাণিক ঘটনাকে স্মরণ করেন। সেখানে বলা হয়েছে ঐ সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুর বধ করেছিলেন। নরকাসুর ছিলেন পৃথিবীর পুত্র এবং তিনি ব্রহ্মা ও শিবের বরে এত শক্তিশালী হয়ে উঠেছিলেন যে শুধু পৃথিবীই নয়, দেবতাদেরও পরাজিত করে স্বর্গালোকও অধিকার করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ স্ত্রী সত্যভামার সহায়তায় (ওই সময় সত্যভামা শ্রীকৃষ্ণের রথের সারথী হয়েছিলেন) তাকে হত্যা করেন। নরকাসুরের মৃত্যুর পর মাতা ধরিত্রী ওই দিন বিশেষ উৎসব করার জন্য শ্রীকৃষ্ণকে অনুরোধ করেন। এইভাবে নরকাসুরের কবল থেকে পৃথিবী ও স্বর্গালোকের উদ্ধার বিজয়োৎস রূপে দীপাবলীর মাধ্যমে উদযাপিত হয়। এই উৎসব ধন্সম্পদের অধিষ্ঠাত্রী দেবী লক্ষ্মীর প্রসন্নতাও বিধান করে। এই বিশেষ দিনিটিতে যদি কারও গৃহ অন্ধকার থাকে তাহলে লক্ষ্মীদেবী সেখানে প্রবেশ করেন না। ভক্তেরা লক্ষ্মীদেবীর বিশেষ পুজো করে থাকে যাতে তাদের গৃহ সমৃদ্ধশালী হয়, সকলে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারেন। কৃষ্ণভক্তদের কাছে এই উৎসব অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কৃষ্ণভক্তরা শুধু এই বিশেষ দিনটিই নয়, একমাস ব্যাপী ভগবানের উদ্দেশ্যে দীপদান করে থাকেন। ভাগবতের বর্ণনা অনুসারে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দামবন্ধন লীলাবিলাস ঘটনাটি হয় এই দীপাবলীর সময়। কৃষ্ণের দামবন্ধন লীলাকে স্মরণ করে আজ সাড়ম্বরে নানা স্থানে মহোৎসব হয়। কোথাও কোথাও মহাসমারোহে কার্তিক ব্রত পালন করা হয় এই সময়ে। বর্তমানে সারা বিশ্বের কৃষ্ণভাবনামৃত প্রসারের ফলে প্রায় সমস্ত দেশের ইস্কন মন্দির সমূহ এই উৎসব মহাসমারোহে প্রতিপালিত হয়।

পদ্মপুরাণে বর্ণ্না করা হয়েছে কার্তিক মাসের এই বিশেষ তিথি তথা সারা মাসেই যদি কেহ গগন্তলে আকাশ প্রদীপ জ্বালায় তাহলে তার সমস্ত কুল পরিত্রাণ লাভ করে হরিণাম প্রাপ্ত হয়। সুস্থ সাংস্কৃতিক বিনোদনের মাধ্যমে দীপদান উৎসব উদযাপন সমাজের রুচিপূর্ণ সংযতচর্চা তথা জন সাধারণের যথার্থ কল্যান সাধনের কেন্দ্র বিন্দু হয়ে উঠতে পারে।

Published on: নভে ৫, ২০১৮ @ ২৩:২৩


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 3 = 6