তান্ত্রিক সেজে মহিলাকে প্রতারণা, গাজিয়াবাদে গিয়ে ৫ অপরাধীকে গ্রেফতার করল কলকাতা পুলিশ

দেশ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: আগ ৩, ২০১৮ @ ২২:৫৪

এসপিটি নিজ ডেস্কঃ ‘কালাজাদুর সম্রাট। বাবা সানাউল্লাহ খান।১০০ শতাংশ সমাধান ফোনের মাধ্যমে। বাড়ি বসে। মাত্র তিন ঘণ্টায়।’ এমন বিজ্ঞাপনে হতাশায় ভোগা বহু মানুষ উৎসাহিত হয়ে পড়েন। যেমনটা হয়েছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত এক মহিলা। ১০ লক্ষ টাকা খুইয়ে তিনি বুঝতে পারেন যে বড় এক প্রতারণা চক্রের জালে পড়েছেন। এরপর তিনি সার্ভে পার্ক থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। কেসের তদন্তভার নেয় কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের দুর্নীতি দমন শাখার অফিসাররা। আর এক্ষেত্রেও তাঁরা তদন্তে বড়সড় সাফল্যই পেলেন না সঙ্গে ভণ্ড তান্ত্রিকদের গ্রেফতারও করে আনলেন সুদূর গাজিয়াবাদ থেকে।

কি হয়েছিল আর কিভাবে তারা এই সাফল্য পেলেন আর কারা ছিলেন কলকাতা পুলিশের তদন্তকারী দলে এসব কিছুই ঙ্কল্কাতা পুলিশ তুলে ধরেছে তাদের ফেসবুকের পেজে। সেই সূত্র ধরেই আমরা পাঠকের কাছে এধরনের খবর তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলাম।

সেই সূত্র ধরে জানা গিয়েছে, ওই মহিলা দীর্ঘদিন ধরেই অবসাদে ভুগছিলেন। সংবাদপত্রের পাতায় তান্ত্রিকবাবার এমন লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে তিনি মনে করেন, তাঁর সমস্যা ইনিই সমাধান করে দিতে পারবেন। সেই মতো বিজ্ঞাপনে লেখা বাবা সানাউল্লাহ খানের ফোন নম্বরে ফোন করেন। তিনি ফোনেই আশ্বাস দিলেন সব ঠিক হয়ে যাবে। আর তন্ত্রপ্রক্রিয়া চালানোর জন্য কিছু টাকার প্রয়োজন। তিনি ৫,২০০ টাকা পাঠাতে বলেন নির্দিষ্ট একটি অ্যাকাউন্টে।মহিলা বিশ্বাস করে সেই টাকা পাঠিয়েও দেন।

এর কিছুদিন পর আবার একদিন বাবাজি বলেন, তন্ত্রপ্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে পশুবলির প্রয়োজন। আর এজন্য তাঁকে ৬৪,০০০ টাকা পাঠাতে হবে।মহিলা এক্ষেত্রেও কোনও দ্বিধা না রেখে বাবাজির কথা মতো সেই টাকাও পাঠিয়ে দেন। এসব কিছুই কিন্তু হয়ে চলে ফোনে। মহিলার সঙ্গে কোনওদিন বাবাজির সাক্ষাৎ হয়নি। ইতিমধ্যে বাবাজির টাকার চাহিদা আরও বাড়তে শুরু করে। শুরু হয় তন্ত্রের নাম করে মহিলাকে ব্ল্যাকমেল করা। মহিলা টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাঁকে ভয় দেখানেও হয়। বলা হয়, তন্ত্রের কাজ শেষ না হলে গোটা পরিবার কিন্তু বড় ধরনের বিপদের মুখোমুখি হবে।

এভাবে মহিলা ওই বাবাজির বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ক্রমান্বয়ে ১০ লক্ষ টাকা জমা করেন। একটা সময় পর সানাউল্লাহ খান যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। তখন মহিলার হুঁশ ফেরে। তিনি তখন বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হইয়ে এসেছেন এতদিন।

এবার তিনি সার্ভে পার্ক থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের দুর্নীতিদমন শাখার সাব ইন্সপেক্টর সৈকত চন্দের নেতৃত্বে বিশেষ টিম গাজিয়াবাদ রওনা দেয়। সেখান থেকে কলকাতার পুলিশের জালে এক এক করে ধরা পড়ে বাবা সানাউল্লাহর ভেক ধারী মহম্মদ শাহজাদ মালিক এবং তার সহযোগী চার চক্রী ওয়াসিম খান, ফয়জল, ফকরুদ্দিন এবং আসিফ মালিক। তল্লাশি চালিয়ে তাদের ডেরা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের একাধিক ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড, একাধিক মোবাইল ফোন ও ভুয়ো সিম কার্ড, বেশ কিছু ভুয়ো পরিচয় পত্র সহ অসংখ্য নথি। এসব কিছুই বাজেয়াপ্ত করে কলকাতা পুলিশ।

ছবিতে দেখা যাচ্ছে কলকাতা পুলিশের সাফল্যকারী সেই তদন্তকারী অফিসারদের। বাঁদিক থেকে দাঁড়িয়ে ওসি অ্যান্ট ফ্রড সেকশন সৈকত চন্দ, ইন্সপেক্টর কৃষ্ণেন্দু দাস, ইন্সপেক্টর দুর্গাদাস ব্যানার্জী, বসে লালবাজারের গোয়েন্দাবিভাগের ইকোনমিক অফেন্সেস উইং(১)এর অ্যসিস্ট্যান্ট কমিশনার বিশ্বনাথ সরখেল।উদ্ধার হওয়া জিনিসপত্রেরও ছবি তুলে ধরা হল।

এধনের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সাধারণের মানুষের উচিত এমন ধরনের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করার আগে স্থানীয় থানায় পুলিশের সহযোগিতা নেওয়া।ছবি সৌজন্যে ফেসবুক

Published on: আগ ৩, ২০১৮ @ ২২:৫৪

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 + 5 =