ঢাকার উপাচার্য প্রশংসা করে গেলেন কলকাতার এই উপাচার্যের, সেইসঙ্গে জানিয়ে গেলেন বাংলাদেশ আজ খাদ্য নিরাপত্তায় সুরক্ষিত

দেশ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বাংলাদেশ
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা– অনিরুদ্ধ পাল ও ডা. সৌমিত্র পন্ডিত

Published on: নভে ২৩, ২০১৮ @ ১৭:৪৪

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ২৩ অক্টোবরঃ তিনি নিজেও একজন উপাচার্য। নিজের কাজ সম্পর্কে তিনি যথেষ্ট সচেতন। তাঁর দেশ বাংলাদেশ এখন যেভাবে এগিয়ে চলেছে তা নিয়ে তিনি বেশ গর্বিত। বাংলাদেশের এই সাফল্য তাঁকেও যে প্রভাবিত করে সেটা বেশ বোঝা গেল কলকাতায় অনুষ্ঠিত অষ্টম আন্তর্জাতিক মিট সায়েন্স কনফারেন্সে অতিথি হিসেবে এসে। অকপটে তিনি জানিয়ে গেলেন, তাঁর প্রাণের বাংলাদেশ আজ খাদ্য নিরাপত্তায় সুরক্ষিত হয়ে উঠেছে।ঢাকার শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ ভারতে এমন ধরনের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন দেখে অভিভূত। সেই সঙ্গে জানিয়ে দিলেন এখানে মাংসজাত খাবারের প্রক্রিয়াকরন নিয়ে যে কাজ শুরু হয়েছে তা খুবই সুদূরপ্রসারী হয়ে উঠবে। একই সঙ্গে এমন একটি সম্মেলনের আয়োজন করে পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় পথ দেখিয়েছে। আর এজন্য তিনি প্রশংসা করে গেলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক পূর্ণেন্দু বিশ্বাসের।

সত্যি এটাও কিন্তু এক মাটির টান। এক বাংলার উপাচার্য প্রশংসা করছেন আর এক বাংলার উপাচার্যের। অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদকে অনুষ্ঠানের শেষে সংবাদ প্রভাকর টাইমস-এর পক্ষ থেকে ধরা হয়েছিল। করা হয়েছিল বিশেষ কয়েকটি প্রশ্ন। তার মধ্যে একটি ছিল, আন্তর্জাতিক এমন একটি সম্মেলনে এসে আপনার অনুভূতি কি। কেমন লাগছে পশ্চিমবঙ্গের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে। তার উত্তরে তিনি জানান, “ভারতে মাংসজাত খাবারের প্রক্রিয়াকরণের উপর কাজ চলছে। এমনকী এ ব্যাপারে এখানে একটি অ্যাসোসিয়েশন গড়ে উঠেছে। এর ফলে এ বিষয়ে দেশের বিজ্ঞানীদের নতুন নতুন গবেষনার জন্য নতুন নতুন প্রক্রিয়াকরনের উদ্ভাবন হবে। যা খাবারের মানকে আরও উন্নততর করে তুলবে। আর এমন একটি বিষয় সম্পর্কিত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ প্রাণি ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর এজন্য আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক পূর্ণেন্দু বিশ্বাসকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, এক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা প্রশংসনীয়।”

তিনি বলেন, “মাংসজাত খাবারকে প্রক্রিয়াকরন করার চেষ্টা চলছে। উৎপাদন অনেক হলেও কিন্তু সেটি রক্ষা হচ্ছে না। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেই কারণে বেসরাকারি পর্যায়ে যদি সঠিক দাম দিতে হয় সেই উৎপাদন যেমন বাড়াতে হবে সেগুলিকে ঠিক মতো ধরে রাখতে হবে এজন্য তার প্রক্রিয়াকরন করতে হবে। যাতে তার বাজারজাতকরন হয়। এজন্য সুনির্দিষ্ট বাজারজাতকরন আর প্রক্রিয়াকরন করা খুব জরুরী। মানুষের দেহের সমস্ত কিছু পরিবর্তন হচ্ছে। তার স্বাদ, রসনা পরিবর্তন হচ্ছে সুতরা তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে এই খাদ্য প্রক্রিয়াকরন বিশেষ করে পুষ্টিজাত খাদ্য অর্থাৎ মাংসের প্রক্রিয়াকরন জরুরী।”

পুষ্টিজাত খাবার উৎপাদনে স্বয়ম্ভর বাংলাদেশ

“বাংলাদেশ এখন মাংস অর্থাৎ পুষ্টিজাত খাবার উৎপাদনে স্বয়ম্ভর হয়ে উঠেছে। আগের চেয়ে মাংস উৎপাদন এখন অনেক বেড়েছে। আগে প্রতি মানুষ পিছু মাত্র ৫০গ্রাম ছিল। এখন সেটা বেড়ে প্রতি মানুষ পিছু ১৫০ গ্রাম হয়েছে যদি লোক খেতে পারে। ডিমের ক্ষেত্রেও আমাদের প্রতি জন পিছু ২০৪টি ছিল এখন সেটা ১৬০টি মতো প্রতি জন পিছু ভাগে পড়ে। মাছ উৎপাদনে সারা পৃথিবীতে আমরা তৃতীয় স্থান অধিকার করেছি। বিশুদ্ধ জলের মাছ চাষের ক্ষেত্রে।” জানালেন অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ।

বাংলাদেশে এখন প্রতি বিঘায় ৩০ মন ধান উৎপাদন হয়   

“আমরা গরু উৎপাদনে আমরা আজ স্বয়ংম্ভর হয়ে গেছি এখন আর আমাদের ভারতের উপর নির্ভর করে থাকতে হয় না। এখন সেটা উর্দ্বৃত্ত অবস্থায় আছে। বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে এখন দিকপ্রদর্শন করছে। আমাদের দেশে রাইস ইন্সটিটিউট আছে। সেখানে বড় বড় বিজ্ঞানী আছে। সেখানে অধ্যাপক হাসানুজ্জামান সহ এরকম অনেক বিজ্ঞানী যারা নতুন নতুন জাতের ধান আবিষ্কার করছেন। আগে যেখানে সাত-আট মন ধান উৎপাদন হত এখন সেখানে ৩০ মন হয় প্রতি বিঘাতে। বর্তমানে হাইব্রিড ধান উৎপাদন আরও অনেক বেড়ে গেছে।” জানান ঢাকার এই কৃষি বিজ্ঞানী।

খাদ্য নিরাপত্তায় সুরক্ষিত

অধ্যাপক কামাল উদ্দিন জানান, “ধানের পাশাপাশি আমরা ইদানীং ভুট্টা উৎপাদনেও সাফল্য লাভ করেছি। কারণ এখন বাংলাদেশে প্রচুর ভুট্টা হচ্ছে। এবং গম উৎপাদন আগের চেয়ে বেড়েছে। অতএব এখন বাংলাদেশ খাবার উৎপাদনে স্বয়ং-স্বনির্ভর হচ্ছে। ডিমের ক্ষেত্রেও এখন আমরা প্রায় স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে চলেছি। তাই বলতেই হয় বাংলাদেশ এখন খাদ্য নিরাপত্তায় সুরক্ষিত রয়েছে। পুষ্টিকর খাবারের দিকে উন্নতি করার লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে চলেছি। স্বাস্থ্যকর খাবার দেওয়ার জন্য এখন প্রচেষ্টা চলছে।”

তিনি সবশেষে জানান, বাংলাদেশের খাদ্য দূষণের ব্যাপারে আমরা খুবই সতর্ক।এজন্য নির্দিষ্ট কমিটি গঠন করা আছে। তারা সময় মতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। আরও সচেতনা বাড়ানোর কথা চলছে।”

Published on: নভে ২৩, ২০১৮ @ ১৭:৪৪


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − = 18