গোপীশ্রেষ্ঠা শ্রীমতি রাধারানী রাসপ্রাঙ্গনে শ্রীকৃষ্ণকে কি বলেছিলেন জানেন

Main দেশ ধর্ম রাজ্য
শেয়ার করুন

লেখক-তৃপ্তকৃষ্ণ দাসাধিকারী

Published on: নভে ২২, ২০১৮ @ ২৩:২০

এসপিটি নিউজ, মায়াপুর, ২২ অক্টোবরঃ ভারতবর্ষের অন্যান্য উৎসবের মধ্যে “রাসোৎসব’ একটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মহৎ লীলা উৎসব। শ্রীধাম নবদ্বীপ, শ্রীধাম মায়াপুর এবং উত্তরপ্রদেশের শ্রীধাম বৃন্দাবন এই উৎসবের জন্য প্রসিদ্ধ। আশ্বিনের শারদীয়া পূর্ণিমায় নবকিশোর নটবর, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তিনি তাঁহার শয়নকক্ষের গবাক্ষ রন্ধদ্রদ্বারা পৃহপ্রবিষ্ট জ্যোৎস্নালোকে বদন মন্ডলে(তক্ষাহার) পতিত হওয়ায় পূর্ন প্রতিশ্রুত রজনীর কথা স্মরণ পড়িয়া গেল। গৃহ মধ্যে গৃহদাহের আশঙ্কায় তক্ষাহার নেত্র চকিত হইয়া উঠিল। শয্যাগৃহ ত্যাগ পূর্বক ছুটিয়া চলিলেন যমুনার তীরে। তিনি অবলোকন করিলেন গগন মন্ডলে উদ্ভাসিত শশীকিরণে গহন অরণ্যের অভ্যন্তরের পুষ্পরাজী সকল আনন্দে উদ্বলিত হইয়া নৃত্য করিতেছে। আর মত্ত-ভ্রমর-গন গুণ গুণ শব্দে প্রতিটি পুষ্পের কর্ণে কর্ণে গীত শ্রবণ করাইতেছে। গোবিন্দ অনুভব করিলেন প্রকৃতির রাজ্যে পুষ্প ও ভ্রমরের রাসক্রীড়া শুরু হইয়াছে।

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আর অপেক্ষা করিলেন না। তিনি মুরলীর ধ্বনি শ্রবণ মাত্রি ব্রজাঙ্গনারা জড় জাগতিক মায়া পরিত্যাগ পূর্বক গভীর নিশিথে অরণ্যে কৃষ্ণানুসন্ধানে চলিয়াছিলেন। তাঁহাদের (গোপীরা) সন্তানকে স্তনদুগ্ধ পান, গাভী দোহন, রন্ধন কার্য করিতেছিলেন।এসবই অসমাপ্ত রইল কাঁলাচাঁদের বংশীধ্বনিতে। কোন এক গোপী তাঁহার পতির নিকট শয়নে ছিলেন তিনিও শয়ন শয্যা ও পতিকে পরিত্যাগ পূর্ব্বক পরম্পতির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়াছিলেন। ক্রুদ্ধ পতি গোপীকে রুদ্ধদ্বারে বন্দি করিয়াছিলেন। শেষ রক্ষা হইল না। সেই গোপী জড় দেহ ত্যাগ করিয়া গোবিন্দের শ্রীচরনে আশ্রয় লইয়াছিলেন। গোপীরা আলুলায়িত বেশে চলিয়াছেন। তাঁহাদের ঊর্দ্ধাঙ্গের বসন মৃত্তিকায় লুটায়িত। এক কর্ণে কুন্ডল, এক হস্তে কঙ্কন, পদযুগলে কাজল, নেত্রে আলতা, কেশবিননীর বন্ধন মুক্ত প্রেম পাগলিনী ব্রজাঙ্গনারা চলিয়া ছিলেন এমনি ভাবে। এখানেই উল্লেখ করা যেতে পারে সর্ববন্ধন মোচঙ্কারী পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যেখানে মুরলীধ্বনীতে সংকেত করিয়াছেন, সেখানে শুধু বেণীর বন্ধন কেন? জড় জাগতিক সর্বপ্রকার বন্ধন মুক্ত হবে।

জড় জাগতিক দৃষ্টিতে শ্রীকৃষ্ণ লম্পট, পরনারীলোভী ইত্যাদি। কিন্তু বাস্তবিক সুক্ষমবিচারে বা (বিজ্ঞা্নসম্মত) ভাবে তিন একজন নবকিশোর নটবর। উন্মত্ত যৌবন সম্পন্ন অষ্টাদশ বর্ষীয় বালক নন। ব্রজাঙ্গনারা যখন তাহাকে দর্শন করিয়া রমন আকাঙ্খা করিয়াছিলেন, অন্তর্যামী ভগবান বলিয়াছিলেন তোমরা কি কারণে এখানে এসেছ? নিজ নিজ গৃহে প্রত্যাগমন করো। তিনি আরও বললেন-

‘যদি হয় সুপুরুষ সর্বগুনাশ্রয়,

পরপতি অভিলাষ সতীধর্ম নয়।।’

কিন্তু গোপীরা এহেন ধর্মোপদেশ শ্রবণ করিতে রাজী ছিলেন না। তাঁহারা অনড়, অটল পূর্বপ্রতিশ্রুতি অনুসারে অদ্য এই গভীর নিশিথে গহন অরণ্যে চলিয়া সিয়াছেন। কারণ, এঁরা কেউ-ই সাধারণ গোপীছিলেন না। এঁরা কেউ নিত্যসিদ্ধা, কেউ সাধন সিদ্ধা আবার কেউ কৃপাসিদ্ধা। এঁরা প্রত্যেকেই গোবিন্দের সহিত রমন করিবার অধিকার প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। গোপীরা বলিয়াছিলেন অদ্য তব প্রেম আস্বাদন করিব। ভগবান পুনরায় প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন এই প্রেম আস্বাদিতে যাইবে নদীয়া নগরে। পিতা জগন্নাথ মিশ্র ও মাতা শচীদেবীর গৃহে। সেইক্ষণে গাত্রে থাকিবে নামাবলী, স্কন্ধে ভিক্ষার ঝুলি জয় রাধে, শ্রীরাধে, রাধে দয়াকর বলে ভিক্ষা মাগিব।

গোপীদের মধ্যে প্রধানা গোপীশ্রেষ্ঠা শ্রীমতী রাধারানী বলিয়াছিলেন এই মধুর রজনীতে তোমার সঙ্গে নৃত্য করিতে চাই, গোবিন্দ যোগমায়াকে স্মরণ করিয়াছিলেন, যোগ্মায়ার প্রভাবে দুই দুই গোপীর মধ্যে এক এক কৃষ্ণ নৃত্য করিয়াছিলেন। যমুনার তীরবর্তী গহন অরণ্যে রচিত হইল ”রাসস্থলী”। নৃত্যের মধ্যে কৃষ্ণ বাঁকা নয়নে রাইবদনী দর্শন করিতেছিলেন, যোগমায়ার প্রভাবে প্রত্যেক গোপী চিন্তা করিতেছিলেন কৃষ্ণ তার নিকটেই আছেন। প্রকৃতার্থে কৃষ্ণ শ্রীমতী রাধারানীর নিকটেও ছিলেন। এইভাবে রাসস্থলীতে রাধাকৃষ্ণের মধুর মিলন হইয়াছিল।

হে একবিংশ শতাব্দীর মানব কুল আসুন, আমরা আমাদের হৃদয় বৃন্দাবনে শ্রীরাধাকৃষ্ণের অপ্রাকৃত প্রেমলীলার ‘রাসস্থলী’ নির্মাণ করিয়া ভগবৎ ভজনে ব্রতী হই।

Published on: নভে ২২, ২০১৮ @ ২৩:২০


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

75 + = 78