গাজলডোবায় ‘ভো্রের আলো’ রক্ষা করতে কড়া দাওয়াই মুখ্যমন্ত্রীর, জানালেন আরও পরিকল্পনার কথা

Main দেশ ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা– কৃষ্ণা দাস                                                                   ছবি- স্যান্ড আচার্য

Published on: অক্টো ৩, ২০১৮ @ ২২:৫৫

এসপিটি নিউজ, শিলিগুড়ি, ৩অক্টোবরঃ এটা তাঁর স্বপ্নের প্রকল্প। প্রকৃতিকে তিনি ভালবাসেন। আর তাই ঘন সবুজ বনানীতে ঘেরা অপূর্ব সুন্দর গাজলডোবা তাঁকে টেনেছিল। সেইদিনই তিনি এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন।আজ সেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্ন সার্থক হয়েছে। তাঁর হাতেই আত্মপ্রকাশ করেছে গাজলডোবায় ‘ভোরের আলো’ পর্যটন প্রকল্প। আর তাই তিন এখানকার ‘ভোরের আলো’কে রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর। এখানে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করে কোনও জমি মাফিয়া যাতে এখানে মাথা গলাতে না পারে সেজন্য তিনি পুলিশ কমিশনারকে কড়া নির্দেশ দিয়ে গেলেন। জানিয়ে দিলেন-সেক্ষেত্রে দল, পুলিশ, প্রশাসন-এর কেউ জড়িত থাকলে তাদের রেয়াত করা হবে না। একই সঙ্গে জানিয়ে দিলেন এই স্থানকে আরও বেশি করে পর্যটনমুখী করে তুলতে তাঁর বড় পরিকল্পনার কথাও।

এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই পর্যটন কেন্দ্র উদ্বোধনের পরই বেশ কিছু জমি মাফিয়া ওঁত পেতে থাকবে যে, এখানকার জমি দখল করে তাতে অবৈধ নির্মাণ করে এখানকার পরিবেশ নষ্ট করার। তাই আগেভাগেই সাবধান করছি আধিকারিকদের। আর এর পরেও যদি কোনও জমি মাফিয়া দখলদারি করে এবং তাতে যদি কোনও পুলিশ কর্মী বা দলের কোনও লোক বা অন্য কেউ যুক্ত থাকে তাহলে তাদেরকেও কিন্তু রেয়াত করা হবে না।”

সেই কারণে আগে থেকেই এখানকার বর্তমান অবস্থানের ভিডিও ফুটেজ তুলে তা সংরক্ষন করে রাখার নির্দেশ দেন পুলিশ কমিশনারকে। যাতে কোনও রকম অবৈধ দখলদারি হলে তা প্রমাণ পাওয়া যায় পরে। সেই মত স্থানীয় নাগরিক থেকে শুরু করে স্থানীয় মৎসজীবী, দোকানদার, চা বাগানের মালিক, শ্রমিক সকলের কাছে এই পর্যটন কেন্দ্রের পরিবেশ বজায় রাখতে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন।

একই সঙ্গে এদিন তিনি এই স্থানকে ঘিরে তাঁর অন্য পরিকল্পনার কথাও জানিয়ে দেন।মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে আগামী দিনে আরও একাধিক পরিকল্পনা রয়েছে। পাখি, হাতি, বন্যপ্রাণী, সাইকেল ট্রেল সহ পর্যটনের একাধিক রোমাঞ্চকর প্রকল্প তৈরি করা হবে এখানে।” সেইমত প্রাথমিক পর্যায়ে স্থানীয় ২৫জন প্রশিক্ষিত মাঝিদের জলধারা প্রকল্পের আওতায় নতুন অত্যাধুনিক বোট দেবার নির্দেশ দেন তিনি। পাশাপাশি গোটা রাজ্যের অন্যান্য বিমান বন্দরের মত কলকাতা বিমান বন্দরের সাথে এই পর্যটন কেন্দ্রকে যুক্ত করতে আগামী দিনে এখানেও একটি বিমান বন্দর করার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। যদিও ইতিমধ্যেই এখানে একটি হেলিপ্যাড গ্রাইন্ড তৈরি করা হয়েছে।

তিনি জানান, গোটা রাজ্য,  দেশ তথা গোটা বিশ্বের পর্যটকদের আকর্ষিত করতে এই মেগা হাবটিকে আরও সুন্দর করে সাজানো হবে। সেইমত এখানে একটি বিশ্ব বাংলার স্টল, দুই একর জমির ওপর স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসাদারদের জন্য গ্রামীণ হাট, পাঁচ তারা হোটেল, রিসর্ট, নতুন নতুন রুটে বাস সার্ভিস সহ এই ভোরের আলো পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে একাধিক নতুন নতুন পরিকল্পনার কথাও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।

এদিন উদ্বোধনের পর মুখ্যমন্ত্রী এই এলাকার সৌন্দর্য্যায়ন ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে নতুন করে এখানে একটি স্পেশাল পুলিশ থানা ও স্পেশাল পোস্ট তৈরি করে এসডিও নিযুক্ত করার নির্দেশ দেন মুখ্যসচিবকে।

কেমন হল এই ‘ভোরের আলো’ প্রকল্প

প্রায় ২০৮ একর জমির ওপর একধারে জঙ্গল, অন্যধারে পাহাড়- নদীর সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে এই পর্যটন কেন্দ্রটি। ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকটি কটেজ। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সেই কটেজ পর্যটকদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত হয়ে আছে। ইতিমধ্যে এখানে ৩২০কোটি টাকা খরচ হয়েছে। পরিকল্পনা রয়েছে অন্তত ১২০০ কোটি টাকার উপর খরচ করে এই প্রকল্পে সমস্ত রকমের বিনোদনের ব্যবস্থা করার। তার পাশাপাশি এখানে তিস্তা ক্যানেলের উপরে তৈরি করা হবে একটি সেতু। লন্ডনের টেমস নদীর ওপরে রয়েছে যেরকম সেতু তারই অনুকরণে সেতু নির্মাণ করে মাইলফলক তৈরি করতে চাইছে মুখ্যমন্ত্রী ও তার পর্যটন দফতর। এই পর্যটন কেন্দ্রটি্র একদিকে বৈকন্ঠপুর জঙ্গল অন্যদিকে দিকে সবুজ জলের তিস্তা সেচখাল। সেইসঙ্গে উত্তরে তাকালে দেখা মিলবে হিমালয় পর্বতমালা। শীতের মরসুমে পাখিদেরও আনাগোনা বাড়তে থাকে গাজলডোবা ব্যারেজে। সব মিলিয়ে ভরপুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অপূর্ব মেলবন্ধন গাজলডোবায় ‘ভোরের আলো’।

Published on: অক্টো ৩, ২০১৮ @ ২২:৫৫


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

51 − 49 =