খাঁচা বন্দি ছাগল পাচ্ছে অতিথি সেবা, আর দক্ষিণ রায় ছুটে বেড়াচ্ছে চারদিক, অল্পের জন্য রক্ষা শিয়ারবনির কিশোরীর

এসপিটি এক্সক্লুসিভ বন্যপ্রাণ রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা-বাপ্পা মন্ডল                           ছবি-রামপ্রসাদ সাউ

Published on: মার্চ ৫, ২০১৮ @ ১৭:৪৩

এসপিটি নিউজ, শিয়ারবনি, ৫ মার্চঃ লালগড়ের মেলখেড়িয়া থেকে গুড়গুড়িপালের শিয়ারবনি। দূরত্ব খুব বেশি হলে ১৫ কিলোমিটার হবে। এর মধ্যে রাজকীয় মেজাজে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার সুন্দরবনে যিনি দক্ষিণ রায় নামে পরিচিত বিচরন করে বেড়াচ্ছে। বন দফতরের অভিজ্ঞ বাঘ ধরার কর্মীরা পর্যন্ত দক্ষিণ রায়কে ধরতে পারেননি। ফলে গোটা এলাকায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েই চলেছে। রবিবার সন্ধ্যায় শিয়ারবনি গ্রামের একটি মেয়ে ধূর্ত বাঘের আক্রমন থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গেছে। সোমবার সন্ধ্যে নামার অনেক আগে থেকেই গ্রামবাসীরা সকলেই ঘরের ভিতর ঢুকে দরজায় খিল তুলেছেন।

লালগড়ের জঙ্গলে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার রহস্য ঘিরে যেভাবে মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, লালগড় এলাক জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে তা কিন্তু স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে আজ থেকে বহু বছর আগে কুমায়ুন এলাকায় মানুষ খেকো বাঘের কাহিনিকে। সেদিনও কিন্তু সেই বাঘটিকে ধরতে বন দফতরকে খুব নাকানি-চোবানি খেতে হয়েছিল। লন্ডন থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল দক্ষ বাঘ শিকারিকে।সেই দক্ষ বাঘ শিকারিকেও বুদ্ধিতে ঠকিয়ে দিয়েছিল মানুষ খেকো বাঘটি। একের পর এক মানুষকে সে মেরেছিল। মানুষ তার আক্রমণ থেকে যতটা না সতর্কতা নিয়েছিল বাঘটি তার চেয়েও ধূর্ততার সঙ্গে তার শিকার ধরে চলছিল। অবশেষে বাঘটিকে শিকার করার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন বিখ্যাত বাঘ শিকারি জিম করবেট সাহেব। বাঘটি করবেট সাহেবকেও কম নাকানি-চোবানি খাওয়াননি। তবু হাল ছাড়েননি করবেট সাহেব। শেষ পর্যন্ত কুমায়ুনের এই ভয়ানক মানুষ খেকো বাঘটিকে গুলি করে মেরে সাধারণ মানুষকে আতঙ্ক মুক্ত করেছিলেন তিনি। বাঘ শিকার করলেও তিন কিন্তু বড় মাপের একজন বাঘ প্রেমীও ছিলেন। সেটা তাঁর জীবনী পড়লে বিশদ ভাবে জানা যাবে। সেই বিষয়ে না ঢুকে আমরা লালগেড়ের রয়্যাল বেঙ্গল রহস্যে চলে যাই।

মেদিনীপুর সদর ব্লকের গুড়গুড়িপাল থানার ভেড়ুয়া অঞ্চলের শিয়ারবনি গ্রামের বাসিন্দা লক্ষী মাহাত। বাঘের মুখোমুখি হয়েও রবিবার সন্ধ্যায় কিভাবে বেঁচে গেলেন সেই কাহিনি শোনাচ্ছিলেন।তার নিজের কথায়, “বাড়িতে সকলেই গেছিলেন বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানে। তিনি একাই ছিলেন ঘরে। তখন সন্ধ্যা হবে। অন্ধকার নেমে এসেছে।এখানে আলো না থাকায় সন্ধ্যার পর অন্ধকার নেমে আসে এলাকায়। হঠাৎ বাইরে কেমন অস্বাভাবিক আওয়াজ শুনে একটু চমকে যাই। ছোট খুপরি দিয়ে বাইরেটা দেখার চেষ্টা করি। কিছুই চোখে পড়ে না। কিছু সময় সেখানে চোখ লাগিয়ে রাখি। এবার মনে হয় একটা বড় কোনও প্রাণী উঠোনে পায়চারি করে বেড়াচ্ছে। ঘরের ভিতরে রাখা বড় টর্চ নিয়ে আসি। দরজা খুলে টর্চ জ্বালাতেই যা দেখি তাতে বুকের রক্ত হিম হয়ে যায়। সামনে দাঁড়িয়ে বিশালাকার সেই বাঘ। চিৎকার করে উঠতেই পাশের ঘর থেকে বাতি নিয়ে বেরিয়ে আসে আমাদের প্রতিবেশী বন্দিরাম মাহাত। আশপাশ থেকে আরও গ্রামবাসীরা বেরিয়ে আসেন। সবাই টর্চ, বাতি নিয়ে চিভকার শুরু করতেই বাঘটি পিছনের জঙ্গলে গিয়ে গা ঢাকা দেয়।গ্রামের মানুষ ঐ সময় না এলে আমাকে হয়তো বাঘের আক্রমনেই মরতে হতো।”

খবর পাওয়া মাত্রই মেদিনীপুর বন দফতরের চান্দ্রা রেঞ্জের আধিকারিক নিবেদিতা মাঝির নেতৃত্বে বন দফতরের এক প্রতিনিধি দল এসে ঘটনাস্থল থেকে বাঘের পায়ের ছাপের নমুনা নিয়ে যান।পায়ের ছাপ দেখে তারা নিশ্চিত হয়েছেন এটি বাঘেরই।

বাঘ যখন সকলকে আতঙ্কে ফেলে বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে ঠিক তখন লালগড়ের মেলখেড়িয়ার জঙ্গলে যেখানে বাঘের জন্য খাঁচা পাতা হয়েছে, টোপ হিসেবে রাকাহ হয়েছে ছাগলকে-মজার বিষয় হল ছাগলটি কিন্তু সোমবার বিকেল পর্যন্ত বেশ দারুন মুডেই আছে। বলা যেতে পারে সে আছে এখন অতিথি পরিচর্যায়। তাকে তার পছন্দের খাবার দেওয়া হচ্ছে। আর সেগুলি সে খোস মেজাজেই উদরস্থ করে চলেছে।

বাঘ বিশেষজ্ঞদের কথায়, এটা যদি লেপার্ড বা চিতা হতো তাহলে হয়তো বা ধরতে এতটা বেগ পেতে হতো না, কিন্তু বাঘটি যেহেতু একটি পূর্ণ বয়স্ক রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার তাই যত অভিজ্ঞ লোকজনই হোক না কেন ধরা কিন্তু খুব সহজ হবে না।ইতিমধ্যে বাঘটি কিন্তু জঙ্গলের এক সুন্দর করিডর পেয়ে গেছে, যা সে খুব সুন্দর ভাবেই কাজে লাগাচ্ছে। এটাকে ট্র্যাপ করে বাঘটিকে ধরা আপাত দৃষ্টিতে সহজ মনে হলেও আদতে তা কিন্তু কঠিনই।

Published on: মার্চ ৫, ২০১৮ @ ১৭:৪৩

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

9 + 1 =