এ এক আজব লড়াইঃ ৮% শতাংশ ভোট পাওয়া দল থেকে হয়েছে প্রধানমন্ত্রী, আবার কেউ ৩৯% ভোট পেয়েও পারেনি সরকার গড়তে

দেশ লোকসভা ভোট 2019
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা-অনিরুদ্ধ পাল

Published on: মার্চ ২৪, ২০১৯ @ ২০:২৩

এসপিটি নিউজ ডেস্কঃ নেতৃত্বের কাছে হার মেনেছে শতকরা ভোট প্রাপ্তির হারও। তা না হলে কম ভোট পেয়ে একটি দলের নেতা কিভাবেই বা প্রধানমন্ত্রী হন? কিভাবেই বা বেশি ভোট পেয়েও ক্ষমতার বাইরে বসে থাকতে হয় সেই দলকে। এমনটাই ঘটে আসছে কিন্তু বিগত ১৬টি লোকসভা ভোটে। একবার চোখ রাখলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে সেই ছবি। যেখানে মাত্র ১৭.৮% ভোট পেয়েও জনতা দলের ভিপি সিং কংগ্রেস বিরোধী দলগুলিকে একত্রিত করতে পেরেছিলেন ১৯৮৯ সালে। সংযুক্ত মোর্চা গড়ে কেন্দ্রে ক্ষমতায় শুধু আসেননি। তিনি প্রধানমন্ত্রীও হয়েছিলেন। সেবার ৩৯.৫% ভোট পেয়েও সরকার গড়তে ব্যর্থ হয়েছিল কংগ্রেস। শুধু তাই নয় ১৯৯৬ সালেও কংগ্রেসকে বেশি ভোট পেয়েও একইভাবে দর্শকের আসনেই থাকতে হয়েছিল। সেবারেও মাত্র ৮% ভোট পাওয়া জনতা দলের নেতা দেবগৌড়া হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

বেশি ভোট পেয়েও চারবার সরকার গড়তে পারেনি কংগ্রেস, সেখানে কম ভোট পেয়েও তিনবার সরকার গড়ে বিজেপি

  • ১৯৮৯ সালের জনতা দল সরকার গড়েছিল। সেবছর তারা কিন্তু কংগ্রেসের ২১.৭% ভোট কম পেয়েছিল।এমনকি তাদের আসন সংখ্যাও কিন্তু কংগ্রেসের চেয়ে ৫৪টি কম ছিল। সেইসময় ভি পি সিং কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে বিরোধী দলগুলিকে একত্রিত করে সংযুক্ত মোর্চাকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল। বিজেপি এবং বামেরাও তাঁকে সমর্থন জানিয়েছিল।
  • ১৯৯৬ সালে আরও একবার জনতা দল সংযুক্ত মোর্চার তৈরি সরকারকে নেতৃত্ব দিয়েছিল।এবারেও জনতা দল কংগ্রেসের চাইতে ২০.৭% ভোট কম পেয়েছিল। জনতা দল পেয়েছিল ৮.১% ভোট। আর কংগ্রেস পেয়েছিল ২৮.৮% ভোট।এই নির্বাচনে বিজেপি কংগ্রেসের চেয়ে ৮.৫% ভোট কম পেলেও আসন সংখ্যা কিন্তু ২১টি বেশি পেয়েছিল এবং অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে সরকার গড়েছিল। কিন্তু এই সরকারের স্থায়িত্ব মাত্র ১৩দিন ছিল। এর পর মাত্র ৪৬টি আসন পাওয়া জনতা দল ১৩০টি আসনের সংযুক্ত মোর্চা গড়ে সরকার গড়েছিল। সেখানে কংগ্রেস এবং বামেরাও জানিয়েছিল সমর্থন।
  • ১৯৯৮ সালেও বিজেপি কংগ্রেসের চাইতে ০.২% ভোট কম পাওয়া সত্ত্বেও ৪১টি আসন বেশি জেতে। বিজেপির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট বা এনডিএ ২৫৬টি আসন জিতে নেয়। অটল বিহারী বাজপেয়ী দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হন। কাকতলীয় হলেও এটাই বাস্তব যে সেবারেও বাজপেয়ীর সরকার ১৩ দিন বাদেই উলটে যায়।
  • ১৯৯৯ সালে বিজেপি এক বার ফের কংগ্রেসের চাইতে কম ভোট পেয়েও সরকার গঠন করে। বিজেপি সেবার কংগ্রসের চেয়ে ৪.৫% কম ভট পেয়েছিল। কিন্তু ৬৮টি আসন বেশি পায় বিজেপি। এনডিএ সেবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা(২৯৯টি আসন) নিয়ে সরকার গড়ে পূর্ণ মেয়াদ অতিবাহিত করতে সক্ষম হয়।

৩৫ বছরে কংগ্রেসের আসন কমেছে ৩৭১টি আর বিজেপির আসন বেড়েছে ২৮০টি

  • জরুরী অবস্থার আগে ১৯৭১ সালে এবং পরে ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসের ভোট প্রাপ্তির শতকরা হারে স্বাধীনতার পর বিস্তর ফারাক এসেছে। সেখানে কংগ্রেসের ভোট প্রাপ্তির শতকরা হার কমেছে ৯.২%। কংগ্রসের আসন সংখ্যাও ১৯৮টি কমে গেছে। সেইসময়ও ইন্দিরা গান্ধীকে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়েছিল। জনতা দল ২৯৫টি আসন নিয়ে সরকার গড়ে এবং তাদের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মোরারজি দেশাই।
  • ১৯৮০ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসের ভোট প্রাপ্তির শতকরা হার ৮.২% বাড়ে এবং আসন সংখ্যা ১৯৯ স্পর্শ করে। সেবার ৩৫৩টি আসন নিয়ে কংগ্রেস ফের একবার সরকার গড়ে।
  • ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যা করার পর ১৯৮৪ সালের লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের ভোট প্রাপ্তির শতকরা হার ৫.৪% আরও বাড়ে। এমনকি তাদের আসন সংখ্যাও ৬২টি বেড়ে যায়। সেবার ৪১৫টি আসন নিয়ে রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হন।
  • ১৯৮৯ সালে কংগ্রেস ১৯৭টি, ১৯৯১ সালে ২৪৪টি, ১৯৯৬ সালে ১৪০টি, ১৯৯৮ সালে ১৪১, ১৯৯৯ সালে ১১৪, ২০০৪ সালে ১৪৫টি আসন পায়। ২০০৯ সালে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা বেড়ে হয় ২০৬টি। কিন্তু ২০১৩ সালে এসে ফের মুখ থুবড়ে পড়ে কংগ্রেস। কমে দাঁড়ায় মাত্র ৪৪টি।
  • এটা ঘটনা, ১৯৯৪ সালে বিজেপি ২টি আসন জিতে তাদের নির্বাচনী দৌড় শুরু করে। এরপর চোখ রাখলে দেখা যাবে ১৯৮৯ সালে তারা ৮৫, ১৯৯১ সালে ১২০, ১৯৯৬ সালে ১৬১, ১৯৯৮ সালে ১৮২, ১৯৯৯ সালে ১৮২টি আসন জেতে। বিজেপির আসন সংখ্যা কমে যায় ২০০৪ সালে। কমে দাঁড়ায় ১৩৮ এবং ২০০৯ সালে তা হয়ে নেমে আসে ১১৬তে। ২০১৪ সালে বিজেপি সবথেকে বেশি আসন জেতে ২৮২টি।
  • এই অবস্থায় গত ৩৫ বছরে বিজেপির ভোট প্রাপ্তির শতকরা হার ২৪% শতাংশ বেড়েছে এবং সংখ্যাতেও তারা ২৮০টি আসন প্রাপ্তি লাভ করেছে। সেখানে কংগ্রেসের ভোটের শতকরা হার ২৮.৫% কমেছে এবং আসন সংখ্যাও কমেছে ৩৭১টি।

Published on: মার্চ ২৪, ২০১৯ @ ২০:২৩

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

+ 61 = 66