আজ রাসপূর্ণিমাঃ জানেন কি শ্রীধাম বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ কত ধরনের ব্রজললনাদের সঙ্গে রাসনৃত্য করেছিলেন

Main দেশ ধর্ম ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: নভে ১৯, ২০২১ @ ২১:৫৪
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ:  রাসলীলা নিয়ে রাধাকৃষ্ণের নানা লোককাহিনি শোনা যায়। তবে এর পিছনে যে মূল ঘটনা আছে তা হয়তো আমাদের অনেকেরই জানা নেই। শোনা যায় সেইসময় শ্রীকৃষ্ণ গোপীনীদের সঙ্গে নেচেছিলেন। এটা জানলেও অনেকেই হয়তো একই সঙ্গে এটাও জানেন না যে সেইসময় শ্রীকৃষ্ণ শ্রীধাম বৃন্দাবনে চার শ্রেণির ব্রজললনাদের সঙ্গে রাসনৃত্য করেছিলেন।

ব্রজললনারা কত রকমের ছিলেন

এই চার শ্রেণি কারা ছিল তা নিয়ে বিশদে জানিয়েছেন মায়াপুর ইসকনের জনসংযোগ আধিকারিক রসিক গৌরাঙ্গ দাস। তিনি বলেন-শ্রীধাম বৃন্দাবনে চার শ্রেণির ব্রজললনাদের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণ রাসনৃত্য করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিল- ১)নিত্যসিদ্ধ গোপকন্যারা, যারা ছিলেন শ্রীমতী রাধারাণীর সখি। ২) দেবকন্যারা, যাঁরা নিত্যসিদ্ধদের সঙ্গের ফলে নিত্যসিদ্ধ স্তর লাভ করেছিলেন, ৩) মূর্তিমানশ্রুতিরা, যাঁরা তপস্যা করে গোপকূলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং তারা ছিলেন সাধনসিদ্ধ, ৪)সবশেষে ঋষিরা, যাঁরা দন্ডকারণ্যে ভগবান শ্রীরামচন্দ্রকে দেখে শ্রীকৃষ্ণকে পরিরূপে লাভ করতে চেয়েছিলেন।

জানা যায়, ব্রজরামারা যমুনার তীরে একমাস ধরে কাত্যায়ণীর ব্রত করেছিলেন। তাঁরা শ্রীকৃষ্ণকে পতি রূপে লাভ করতে চেয়েছিলেন। ব্রজবালাদের মনোবাসনা পূর্ণ করতে রাসনৃত্য অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

শ্রীকৃষ্ণ কিভাবে এতজন গোপীনীদের সঙ্গে নৃত্য করেছিলেন?

শ্রীকৃষ্ণ কিভাবে এতজন গোপীনীদের সঙ্গে নৃত্য করেছিলেন? সেই সময় কেমন ছিল? এই সমস্ত প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন মায়াপুর ইসকনের জনসংযোগ আধিকারিক। তিনি বলেন-“শ্রীকৃষ্ণ নিজেকে অসংখ্য রূপে বিস্তার করে প্রত্যেক গোপীর সঙ্গে যুগপৎভাবে নৃত্য করেছিলেন। রাসপূর্ণিমার রাতটি ছিল ব্রহ্মরাত। মানুষের চারশত বত্রিশ কোটী বছর। ব্রজগোপিকারা একটু গর্বিত হলে, রাধারানীকে নিয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অন্তর্হিত হয়ে যান। কৃষ্ণবিরহে গোপিনীরা প্রেমে উন্মাদিনী হয়েছিলেন এবং সারা রাত্রি কৃষ্ণের লীলা অনুসরণ করে তাঁকে খুঁজে বেরিয়েছিলেন। অবশেষে কৃষ্ণ গোপিনীদের সামনে দেখা দিয়ে রাসনৃত্যের মাধ্যমে গোপিনীদের মনের ইচ্ছা পূর্ণ করেছিলেন। এইভাবে ব্রহ্মারও দুর্লভ প্রেম গোপিনীরা লাভ করেছিলেন।

মন প্রাণকে কৃষ্ণের প্রেমের দিকে নিয়ে যাওয়াই আমাদের সাধনা

ব্রজগোপিনীদের কৃষ্ণের প্রতি যে আকর্ষণ বা ভালোবাসা, সেটাই তাঁদের সবকিছু পরিত্যাগ করে কৃষ্ণের সান্নিধ্য লাভে সহায়তা করেছিল। গভীর প্রেমার্তি না থাকলে তাঁকে পাওয়া যায় না। যতরকমের সাধন-মার্গ আছে, সবেরই মূলকথা প্রেম-গভীর আকর্ষণ। এই বিষয়টা পরিষ্কার করে বলতে গিয়ে রসিক গৌরাঙ্গ দাস জানান, ” আমাদের মন প্রাণকে কৃষ্ণের সেবার প্রতি, কৃষ্ণের প্রেমের দিকে নিয়ে যাওয়াই আমাদের সাধনা।” একই সঙ্গে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন- “কামার্ত মানুষ যদি রাসনৃত্য অনুকরণ করার চেষ্টা করে তা হলে রুদ্রকে অনুকরণ করে বিষ পান করার মতোই সে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।”

জানতে চাই ভগবানের রাসলীলা রহস্য

বর্তমানে আমরা একবিংশ শতাব্দীর সভ্য মানুষ। আত্মসুখের আয়োজনে তৎপর। উন্নত প্রযুক্তির সাহয্যে ছোট হয়ে আসা পৃথিবীর মানুষ। সব কিছুই আমাদের হাতের মুঠোয়। আমরা ছুটে চলেছি বিশ্ব বিজয়ে। চলছে পারমানবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা। ভোগ্য বস্তুর চাহিদা বেড়ে চলেছে। অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে জানতে চাই ভগবানের রাসলীলা রহস্য। অথচ মন ছুটে চলে জড় জাগতিক বিকৃত কদর্য রসের দিকে। এভাবে ব্যাখায়া করে রসিক গৌরাঙ্গ দাস বলেন-“এর বাইরেও যে জগৎ আছে তোমরা নিজেরাই তা জানো না।জগতের কেউ সুখী নয়। সুরভিত চির বিকাশমান পুষ্পের মতো জীবনের আর এক রূপ যথার্থ বাস্তব জীবন। যা শাশ্বত, জরা-ব্যাধি-মৃত্যুহীন। এই জীবনেই তা লাভ করা সম্ভব।”

শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলা কেমন ধরনের

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলা জড়জাগতিক কামউপভোগ নয়। আমাদের কাম-কলুষিত দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে শুদ্ধ চিত্তে রাসলীলা রহস্য উন্মোচনে প্রয়াসী হতে হবে। মনে রাখতে হবে ব্রজগোপিনীরা সাধারণ স্ত্রীলোক ছিলেন না। প্রকৃত পক্ষে তাঁরা ছিলেন শ্রীকৃষ্ণের অন্তরঙ্গ পার্ষদ। ব্রহ্মসংহিতায় বলা হয়েছে, তাঁরা হলেন শ্রীকৃষ্ণের হ্লাদিনী শক্তির প্রকাশ।বলেন মায়াপুর ইসকনের জনসংযোগ আধিকারিক।

Published on: নভে ১৯, ২০২১ @ ২১:৫৪


শেয়ার করুন