“এই সত্য উদ্ধারের জন্য বাংলার সচেতন প্রতিটি মানুষের সংকল্প নেওয়া উচিত। ওই ঘরটিতে দুষ্কৃতীরা কিভাবে ঢুকেছে? এই সবকিছু পূর্বপরিকল্পিত কিনা? কেন অচল হয়ে গেল কলেজের ভেতরের সিসিটিভি ক্যামেরা?”
সংবাদদাতা– অনিরুদ্ধ পাল
Published on: জুলা ৭, ২০১৯ @ ২১:৫২
এসপিটি নিউজ, নবদ্বীপ, ৭জুলাই: লোকসভা নির্বাচনের ভোটের প্রচারে এসে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের রোড- শো ঘিরে ধুন্ধুমার কান্ড বেধে গিয়েছিল কলকাতায় গত ১৪ই মে। বিদ্যাসাগর কলেজে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা নিয়ে বিজেপি-তৃণমূলের ভিতর বাদানুবাদের রাজনীতি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তৃণমূল কংগ্রেস দাবি করে মূর্তি ভেঙেছে বিজেপির কর্মীরাই। আর বিজেপি তা অস্বীকার করে। তারা ঘটনার প্রকৃত তদন্তের দাবিও জানায়।ইতিমধ্যে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল পরিচালিত সরকার ঘটা করে সেখানে নয়া মূর্তি স্থাপনও করে। কিন্তু বিতর্ক থেমে থাকেনি। প্রকৃত ঘটনা আজও সামনে আসেনি। কারা, কিভাবে সেদিন ভিতরে ঢুকে এভাবে মূর্তি টেনে বাইরে এনে ভেঙে দিল- তাদের চিহ্নিত করা গেল না কেন? এই প্রশ্ন উঠছে।
৩২ পাতার পুস্তিকায় জোরালো প্রতিবাদ, তুলল গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্নও
বিজেপি এই বিষয়টি নিয়ে হাল হাল ছাড়তে রাজী নয়। তারা এর সদুত্তর চায়। কারণ বিদ্যাসাগরের মতো এমন একজন মহামানবের মূর্তি ভাঙার দায় তাদের উপর চাপিয়ে দেবে এটা বিজেপি কিছুতেই মানবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। তারা বারে বারে এর প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানিয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত ঘটনার প্রকৃত দোষীকে প্রকাশ্যে আনা হল না এবং তার নাম জানানো হল না -এর পিছনে কি রহস্য তা নিয়ে পশ্ন তুলেছে বিজেপি।
আর তাই ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মবার্ষিকীতে ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রিসার্চ ফাউন্ডেশন ‘স্বয়ং বিদ্যাসাগর আজ কলঙ্ক জনক ষড়যন্ত্রের শিকার’ শিরোণামে ৩২ পাতার এক পুস্তিকা প্রকাশ করে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে। যেখানে ভারতীয় জনতা পার্টির সভাপতি অমিত শাহের বক্তব্য সহ পাঁচ জন বিদ্বজ্জনের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। তাতে সেদিনের ঘটনার এমন কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে যাতে বিদ্যসাগরের মূর্তি ভাঙা নিয়ে বিজেপিকে দোষারোপ করা কতটা কাঙ্খিত কিংবা যুক্তিসঙ্গত তা নিয়েও কিন্তু সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর ড. অনির্বান গাঙ্গুলি জানালেন-” সেদিনকার সেই রহস্যময় ঘটনা এবং তার সহযত্রটা কি- তার পুরো ঘটনাটি এর মধ্যে লেখা আছে। এখন আমরা সীমিত সংখ্যক কপি এনেছি। পরে এগুলো বড় আকারে বিনামূল্যে বিতরন করব। এগুলো করার কারণ এর মধ্যে বিশিষ্ট জনের লেখা।কারণ, এর আগে এমন অদ্ভুত রাজনীতি ও মানসিকতা কিন্তু পশ্চিমবাংলা দেখেনি।”
কি লেখা আছে পুস্তিকাটিতে
1.লেখক ড. জিষ্ণু বসু লিখছেন-
“যে মূর্তিটি গত ১৪ মে ভাঙা হয়েছে সেটি বিদ্যাসাগর কলেজের মূল বিল্ডিং-এ ঢুকে একটি কাচের বাক্সে ছিল। এই ঘরে পৌঁছনোর জন্য একটি লোহার রেলিং দেওয়া গেট। লোহার গেট পার হওয়ার পর তিনটে দরজা। মাঝেরটা দিয়ে সকলে যাতায়াত করে, বাকি দু’টি দরজা সব সময়ই বন্ধ থাকে। এখনও পর্যন্ত পাওয়া সব কটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে যে ওই লোহার শাটার দেওয়া দরজাটি বন্ধই ছিল। তাই বিকল্প রাস্তা হল ওই বিল্ডিংযের পেছনের লাইব্রেরি ও জিমনাশিয়াম। মূল ফটক বন্ধ থাকলে যারা ভেঙেছে তারা পিছনের দিক থেকে ওই মূর্তির স্থানে পৌঁছেছিল। ওই স্থানটি বেশ বড়সড়। মূর্তির ওপরের অংশ ভাঙার পরে ওই বড় জায়গাটা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতার মধ্যেই ছিল। কিন্তু সেই কাজ সেখানে করা হয়নি। আর ওই সময় ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজও কলেজ দিতে পারেনি। এরপরের ঘটনার ফুটেজ আছে। দুষ্কৃতীরা মূর্তির ওপরের অংশ আছাড় মেরে ভাঙছে।”
তিনি এই বিষয়ে অত্যন্ত যুক্তিনিষ্ঠভাবে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রেখেছেন- “এই সত্য উদ্ধারের জন্য বাংলার সচেতন প্রতিটি মানুষের সংকল্প নেওয়া উচিত। ওই ঘরটিতে দুষ্কৃতীরা কিভাবে ঢুকেছে? এই সবকিছু পূর্বপরিকল্পিত কিনা? কেন অচল হয়ে গেল কলেজের ভেতরের সিসিটিভি ক্যামেরা?”
জিষ্ণুবাবু তুলেছেন আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন-
- “পুলিশ প্রশাসনে গোয়েন্দা দফতর কী ভূমিকা নিয়েছে?
- নাকি আইবি রিপোর্টের পরেও ঠান্ডা মাথায় এই ঘটনা ঘটতে দেওয়া হয়েছে?
- অনেক রাজনৈতিক নেতানেত্রীর সামনেই প্রতিবাদ বা কালো পতাকা দেখানোর ঘটনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু সেক্ষেত্রে মিছিলের একটু দূরে দেখানোর অনুমতি দেওয়া হয়। অল্প কিছুক্ষন বিক্ষোভ দেখাতে দিয়েই তাদের পুলিশের গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। কেন সর্বভারতীয় দলের সভাপতির মিছিলে ইট, পাথর ছুড়তে দিল কলকাতা পুলিশ?
- কি ছিল গোয়েন্দা রিপোর্ট?
- কে অনুমতি দিলেন বিক্ষোভ প্রদর্শনের?”
2. প্রশ্ন তুললেন ড. অচিন্ত্য বিশ্বাসও।তিনিও তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন।
- প্রথম প্রশ্ন-“মূর্তি ভাঙা তো হিন্দু জীবনের আদর্শনীয় নয়। হিন্দু সমাজের জীবন নীতিতে বিশ্বস্ত রাজনৈতিক দল তার কর্মীরা নবজাগরণে অগ্রসর পিতৃকল্প ব্যক্তির মূর্তি ভেঙে কোন রাজনৈতিক লাভের গুড় খাবে?”
- দ্বিতীয় প্রশ্ন-“বিদ্যাসাগর মশাইয়ের মূর্তি কি শোভাযাত্রার পথে ছিল না? কলেজ স্ট্রিট অঞ্চলে কলেজ স্কোয়ারের সামনে মহাত্মা বিদ্যাসাগরের মূর্তিটি তো সুপরিকল্পিত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ বিল্ডিং-এর দিকে তাকিয়ে এই সর্ব শুক্ল বজ্রাসনে আসীন বিদ্যাসগের মূর্তিই তো ছিল?”
- তৃতীয় প্রশ্ন-“কলেজের অধ্যক্ষ গৌতম কুন্ডু মহাশয়ের কক্ষের সামনে কাঁচের বাক্সে রক্ষিত এই মূর্তি আছড়ে ভাঙা হল। কলেজের সিসিটিভি -র ফুটেজ পাওয়া গেল না কেন? কেউ কেউ গোলমালের ছবি তুলেছে- তাতে যাদের দেখা যাচ্ছে তাদের কেউ কেউ তো এলাকার তৃণমূল সাংসদের হয়ে প্রচার করেছে। তাদের সঙ্গে কলেজের সংশ্রব কি ছিল? কেন তারা গরমের ছুটি চলাকালীন কলেজে গিয়েছিল? এরকম অজস্র প্রশ্ন উঠে আসছে।”
3. ড. শুভদীপ গাঙ্গুলি এই ঘটনার বিষয়ে তাঁর চুলচেরা বিশ্লেষণ করে লিখছেন-
“তবে কী কারোর এই বিষয়ে সংশয় ছিল যে ‘বাঙালি বনাম অ-বাঙালি’ বিতর্ক উস্কে না দিলে বা বিজেপি -বাঙালি বিদ্বেষী এই বিশ্বাস মানুষের মধ্যে না জাগ্রত করতে পারলে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া যাবে না? আমাদের ভাববার সময় এসেছে। এতকিছুর পরেও সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে ঐ বিধানসভা অর্থাৎ জোড়াসাঁকো বিধানসভা ক্ষেত্রে মানুষ বিজেপিকে দুই হাত তুলে আশীর্বাদ করেছেন, যার ফলশ্রুতি এই বিধানসভা ক্ষেত্রে বিজেপি প্রায় সাড়ে তিন হাজার ভোটে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে, যা ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলের নিরীখে প্রায় দশ হাজার ভোট বেশি। সুতরাং ‘লাভের গুড় বোধহয় পিঁপড়ে খেয়ে ফেলেছে।’এই ফলাফল প্রমাণ করল এতদঞ্চলের যারা সুধী ভোটার তাঁরা বিজেপিকে বাঙালি বিদ্বেষী মনে তো করেনই না, উপরন্তু বাংলার একমাত্র রাজনৈতিক ভরসা ও নিরাপত্তার স্থল বলে মনে করে।…”
পাশাপাশি তিনি উল্ল্যেখ করেছেন-“ভারতকেশরী, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনিষ্ঠতম উপাচার্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের নবরূপকার, বাঙালির হৃদয়ের মণীকোঠার স্থায়ী সম্রাট বঙ্গজনক মহীরূহ ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিধন্য তাঁর মহান কর্মক্ষেত্র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বা তাঁর অধীনস্ত কোনো মহাবিদ্যালয়ে বিজেপির কোনো কর্মী, সমর্থক বা শুভাকাঙ্খী কখনও কোনো অবস্থাতেই আঘাত হানতে পারে কোনও বাঙালি তা বিশ্বাস করে না।”
তিনি সব শেষে লিখছেন-“আর যারা বিজেপিকে ‘মেরো খোটার দল’ বলে বিদ্রুপ করে, তাদের অবগতির জন্য জানাই এই দলের প্রতিষ্ঠাতা না থাকলে এই মাটিতে দাঁড়িয়ে আজ এই সকল কথা বলার মতো পরিস্থিতিও তাদের থাকতো না। এই সকল স্বঘোষিত শিক্ষাবিদদের উদ্দেশ্যে বিনীত আবেদন ইতিহাস জেনে কথা বলুন। এক্ষেত্রে গবেষনালব্ধ ইতিহাসের কথা বলছি। গালগল্পে ভরা স্বরচিত ইতিহাস নয়। এদের জ্ঞানের অজ্ঞতার প্রতি পরমেশ্বরের কাছে যুগাবতার শ্রীরামকৃষ্ণের ভাবাদর্শে আমার প্রার্থণা ‘এদের চৈতন্য হোক’।”
Published on: জুলা ৭, ২০১৯ @ ২১:৫২