
- স্কুলগুলি 10 জুন পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
- কিছু ইংরাজি মাধ্যম স্কুল আবার মোবাইলে মেসেজ করে কিংবা খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে অভিভাবকদের স্কুলে গিয়ে ফিজ জমা দেওয়ার অনুরোধ কিংবা নির্দেশ দিচ্ছে। কেউ কেউ আবার ফিজ বাড়িয়েও দিয়েছে।
- রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী গোটা ঘটনায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ। সংবাদ প্রভাকর টাইমস-কে ফোন মারফৎ তিনি জানিয়ে দিয়েছে- খবর তাঁর কাছেও আসছে। নিয়ম না মানলে স্কুলগুলিকে পেতে হবে কড়া শাস্তি।
Published on: এপ্রি ১১, ২০২০ @ ২০:৫৬
Reporter: Aniruddha Pal & Jayanta Bandopadhyay
এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ১১ এপ্রিল: দেশজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমন বেশ খারাপ জায়গায় যেতে শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের পরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে লকডাউন 30 এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইতিমধ্যে স্কুলগুলি 10 জুন পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে কিছু ইংরাজি মাধ্যম স্কুল আবার মোবাইলে মেসেজ করে কিংবা খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে অভিভাবকদের স্কুলে গিয়ে ফিজ জমা দেওয়ার অনুরোধ কিংবা নির্দেশ দিচ্ছে। কেউ কেউ আবার ফিজ বাড়িয়েও দিয়েছে। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী গোটা ঘটনায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ। সংবাদ প্রভাকর টাইমস-কে ফোন মারফৎ তিনি জানিয়ে দিয়েছে- খবর তাঁর কাছেও আসছে। নিয়ম না মানলে স্কুলগুলিকে পেতে হবে কড়া শাস্তি। গতকাল এই সম্পর্কে একটি অর্ডারের কথাও তিনি স্মরণ করিয়ে দেন।
সংবাদ প্রভাকর টাইমস-এ এসেছে একাধিক অভিযোগ
সংবাদ প্রভাকর টাইমস সংবাদ মাধ্যমের কাছে রাজ্যের একাধিক ইংরাজি মাধ্যমের স্কুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসতে শুরু করে। হাওড়ার সেন্ট ডেনিস, নৈহাটির সেন্ট লুক্স ডে স্কুল, কল্যানী পাবলিক স্কুল, জুলিয়েন ডে স্কুল থেকে শুরু এরকম একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উঠেছে লকডাউনের মধ্যে স্কুলে রিপোর্ট কার্ড বিলি কিংবা ফিজ জমা দেওয়ার নির্দেশের গুরুতর অভিযোগ। যা নিয়ে অভিভাবক-অভিভাবিকাদের মধ্যেও বিভ্রান্তি দেখা দেয়। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন- এটা কিভাবে সম্ভব! যেখানে প্রধানমন্ত্রী -মুখ্যমন্ত্রী উভয়েই লকডাউনে ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সেখানে স্কুলগুলি কোন যুক্তিতে স্কুলে গিয়ে টাকা জমা দিয়ে আসার কথা বলে। এই বিষয়গুলি নিয়ে সংবাদ প্রভাকর টাইমস-এর অফিসে আসতে শুরু করে একের পর এক অভিযোগ। আমরা এক এক করে সেই অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখা শুরু করি। তারপর আমরা সংশ্লিষ্ট প্রধানদের সঙ্গে কথা বলি। নীচে আমরা সেই স্কুলগুলির ছবিগুলি তুলে ধরলাম।সবই অবশ্য আইসিএসই অনুমোদিত।
সেন্ট ডেনিস স্কুল
হাওড়ার এই ইংরাজি মাধ্যম স্কুলটির বিরুদ্ধে আমাদের কাছে প্রথম অভিযোগ আসে। অভিযোগ- তারা লকডাউন উপেক্ষা করে ছাত্র-ছাত্রীদের রিপোর্ট কার্ড বিলি করেছে। এই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে সংবাদ প্রভাকর টাইমস স্কুলের প্রিন্সিপল ভোলা সাউকে ফোনে ধরার চেষ্টা করি। কিন্তু যতবার ফোন করেছি ততবার সেখান থেকে মেলেনি কোনও সদুত্তর।
অ্যাঞ্জেল এডুকেশন সোসাইটি
- এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে উঠেছে মারাত্মক অভিযোগ। এই সোসাইটির অধীনে রয়েছে পাঁচটি সিবিএসই অনুমোদিত স্কুল। ১)কল্যাণীতে কল্যাণী সেন্ট্রাল মডেল স্কুল, ২)বারাকপুরে সেন্ট্রাল মডেল স্কুল, ৩)বারাসতে কল্যাণী পাবলিক স্কুল, ৪)কোন্নগরে মাদার মেমোরিয়াল স্কুল এবং ৫)সল্টলেকে কল্যাণী পাবলিক স্কুল।গত 22 মার্চ এই সোসাইটি এই পাঁচটি স্কুলের নাম সমেত কলকাতার এক নামি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানায় যে তারা তাদের অধীনে থাকা পাঁচটি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের নার্সারি থেকে ক্লাস নাইন এবং একাদশ শ্রেণীতে হাফিয়ার্লি পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে সকলকে উত্তীর্ণ করেছে।অভিভাবকদের একই সঙ্গে তারা নির্দেশ দিয়ে জানায় যে তারা যেন এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে স্কুলে এসে সেশন চার্জ, ড্রেস, বই এবং টিউশন চার্জের টাকা জমা করে দিয়ে যান। নীচে লেখা অ্যাঞ্জেল এডুকেশন সোসাইটি এবং মোনামি এডুকেশন ট্রাস্টের চেয়ারম্যান রুদ্রবীর রায়ের নাম।
- আমরা রুদ্রবীর রায়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করি। তাঁর কাছে জানতে চাই- লকডাউন-এর মধ্যে আপনারা কিভাবে অভিভাবকদের স্কুলে গিয়ে টাকা জমা করে আসার কথা বলেন? ভারত সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুসারে কোনও স্কুল তাঁর নাম ব্যবহার করে কিংবা স্কুলের ভিতরে ড্রেস কিংবা খাতা-বই বিক্রি করার নিয়ম না থাকলেও এগুলি কিভাবে করেন, তাও আবার বিজ্ঞাপন দিয়ে?
- প্রথম প্রশ্নের জবাবে ঐ সোসাইটির চেয়ারম্যান রুদ্রবীর রায় আমাদের ফোনে জানালেন যে তাদের বিজ্ঞাপন অনেক আগেই জমা দেওয়া ছিল। তবে লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় তারা মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে সব অভিভাবকদের আসতে নিষেধ করেছেন। এরপর যখন তাকে প্রশ্ন করা হয় “বিজ্ঞাপন তো কয়েক লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। তার কি হবে? আপনারা কি ফের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে সেকথা জানিয়েছেন?” জবাবে রুদ্রবীরবাবু জানান-“আমরা আগামিকাল কাগজে জানাবো।” কিন্তু সেটাও সংবাদ প্রভাকর টাইমস ফোন করে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পর। এরপর তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় – আপনারা কিভাবে স্কুলে বই-খাতা আর ড্রেস বিক্রি করছেন? জবাবে তিনি জানান- “আমরা নই একটা আলাদা সংস্থা করছে।” তখন তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়- তাই যদি হয় তাহলে বিজ্ঞাপনে আপনারা স্কুলগুলির নাম ব্যবহার করলেন কেন? এবার রুদ্রবীরবাবু মেজাজ হারিয়ে বলে ওঠেন-“যা পারেন করুন গিয়ে।”
সেন্ট লুক্স ডে স্কুল
নৈহাটির এটি একমাত্র আইসিএসই স্কুল। লকডাউনে অন্যান্য স্কুলের মতো এটিও বন্ধই আছে। তারাও গত 9 এপ্রিল একটি মেসেজ পাঠায় প্রত্যেক অভিভাবকের কাছে। যেখানে তারা জানায় যে গত 6 এপ্রিল থেকে তাদের অনলাইন ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে। আগামী 13 এপ্রিল থেকে ফের অনলাইন ক্লাস শুরু হতে চলেছে। এরপরই তারা জানায় তাদের এপ্রিল মাসের ফিজ যেন অভিভাবকরা চেক মারফত স্কুলে গিয়ে দিয়ে আসে। প্রসঙ্গত এই স্কুলে তিনটি বিভাগ আছে- তিনটি পৃথক নামে। প্লে গ্রুপ – যার নাম সেন্ট লুক্স কেজি স্কুল, ক্লাস ওয়ান থেকে ফোর- যার নাম হরপ্রসাদ প্রাইমারি ইনস্টিটিউশন এবং সেকেন্ডারি অর্থাৎ ক্লাস ফাইভ থেকে দ্বাদশ শ্রেশী- যার নাম সেন্ট লুক্স ডে স্কুল। ওই নোটিশে বলা হয়- একটা খামের ভিতর অ্যাকাউন্ট পে-ই চেক যেখানে যে যে ক্লাসে পড়ে সেই অনুযায়ী স্কুলের নাম লিখে অ্যামাউন্ট লিখে সাক্ষর করে দিতে হবে। আর খামের উপর ছাত্র কিংবা ছাত্রীর নাম, সে যে ক্লাসে পড়ত সেই ক্লাস, রোল নম্বর, সেকশন, আইডি নম্বর এবং অভিভাবকের নাম লিখে স্কুলে রাখা একটি ড্রপ বাক্সের ভিতর চেকটি ফেলে দিয়ে আসবেন। কারও চেক বাউন্স করলে তার জন্য জরিমানা হবে।
এরপর তারা ফের নতুন করে আজ আবার একটি মেসেজ পাঠায়। সেখানে তারা জানায় – এ এক খুবই দুঃসময়। আমাদের স্কুলের স্টাফদের বেতন দিতে হবে। তাই আপনারা যদি বাচ্চাদের স্কুলের এপ্রিল মাসের টিউশন ফি এবং ডেভেলপমেন্ট ফিজ স্কুলের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দেন তাহলে আমাদের সুবিধা হয়। স্কুলের চেয়ারম্যান সুজিত ভট্টাচার্য জানান- আমরা আগের নোটিশ সংশোধন করে নিয়েছি। যারা সরকারি চাকরি করেন তারা তো দিতেই পারে। তাই আমরা এক্ষেত্রে কারও উপর জোর করছি না। দিলে ভাল হয়- এই আর কী। তবে পাঁচ ঘণ্টা ধরে অনলাইন ক্লাস নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়। জানতে চাওয়া হয়- পাঁচ ঘণ্টা ধরে কিভাবে একটি বাচ্চা মোবাইল নিয়ে বসে থাকবে? এত মোবাইল ইন্টারনেট ডেতা কোথায় পাওয়া যাবে? জবাবে সুজিতবাবু বলেন- জিও থাকলে তো হবে। কিন্তু জিও ক’জনের আছে, সেটাও তো দেখতে হবে। বিশেষ করে রিচার্জের জায়গাও তো এখন বন্ধ আছে। তাহলে এটা কতদিন চালানো যাবে? মেলেনি কোনও সদুত্তর।
নৈহাটির পুরপ্রধান লকডাউন মেনে ঘরে থাকার আবেদন জানালেন
এই বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রথমে যোগাযোগ করি নৈহাটি পুরসভার পুরপ্রধান অশোক চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। অশোকবাবু আমাদের ফোনে জানান- লকডাউন পিরিয়ডে কোনওভাবেই বাড়ির বাইরে বেরোনো যাবে না। এই নির্দেশ মেনে চলতেই হবে। আমি স্কুলের চেয়রম্যানের সঙ্গে কথা বলছি।
অভূত্পূর্ব কাজ করেছে বরানগর সেন্ট্রাল মডেল
তবে কিছু স্কুল আইন মেনেই কাজ করছে। যেমন বরানগর সেন্ট্রাল মডেল স্কুল। স্কুলের প্রিন্সিপল যিনি আবার আইসিএসই এক্সিকিউটিভ বোর্ডের সদস্য সেই নবারুন দে আমাদের ফোনে জানালেন কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা। নবারুনবাবু জানান- আমরাও প্রথমে অনলাইনে পেমেন্ট নেওয়া শুরু করেছিলাম। কিন্তু লকডাউন শুরু হতেই তা আমরা ব্লক করে দিয়েছি। আমরা মনে করি লকডাউন পিরিয়ডে সরকারি নির্দেশ মেনে চলাই শ্রেয়। এই প্রসঙ্গে তিনি জানান- তাঁর কাছে উত্তরপ্রদেশের কানপুরের ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের একটি সার্কুলার হাতে এসেছে। তিনি সেখানকার স্কুলগুলিকে নির্দেশ দিয়েছেন যে “আপনারা কোনও অভিভাবকদের উপর ফিজ দেওয়ার বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করবেন না। অন্তন জুন মাস পর্যন্ত তো নয়ই। কেউ যদি স্বেচ্ছায় দিতে চায় নেবেন নচেৎ অপেক্ষা করবেন। জুন মাসে গিয়ে একসঙ্গে নেবেন। কিন্তু ভুলেও তার উপর আলাদা ফাইন করবেন না।”
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানালেন গুরুত্বপূর্ণ কথা
একই রকম নির্দেশ রয়েছে আমাদের রাজ্যেও। আমাদের রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আজ সংবাদ প্রভাকর টাইমস-কে ফোনে এই বিষয়ে জানান- ” গতকালই একটি অর্ডার জারি হয়েছে। সেখানে আমরা পরিষ্কার করে এই বিষয়ে উল্লেখ করেছি। আমরা সব স্কুলকেই জানিয়েছি যে আপনারা লকডাউন পিরিয়ডে স্কুল বন্ধ রাখবেন। কোনওভাবে স্কুল খোলার চেষ্টা করবেন না। আমাদের কাছে এও অভিযোগ এসেছে যে কিছু স্কুল এর মধেয়ো অভিভাবকদের উপর চাপ সৃষ্টি করে ফিজ বৃদ্ধি করেছে। অনেকে ফিজ দিতে জোর করছে। আমরা আবারও বলছি এই পরিস্থিতি বিষয়টিকে মানবিকতার চোখে দেখুন। ফিজ কেউ বাড়াবেন না। লকডাউন মেনে চলুন কেউ ঘর থেকে বেরোবেন না। কেউ এর অন্যথা করলে সরকার কড়া শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।”
Published on: এপ্রি ১১, ২০২০ @ ২০:৫৬