মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আসাম সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিল ওয়েস্ট বেঙ্গল পোল্ট্রি ফেডারেশন

Main অর্থ ও বাণিজ্য দেশ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান রাজ্য
শেয়ার করুন

 Published on: এপ্রি ১৩, ২০২৩ @ ২৩:৪৯
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ১৩ এপ্রিল: গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে আসাম সরকার ওয়েস্টার্ন বর্ডার সিল করে রেখেছে। ফলে এই বর্ডার দিয়ে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে মুরগি নিয়ে যাওয়া একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর ফলে পশ্চিমম্বঙ্গের পাঁচ লক্ষ ব্রয়লার ফার্মারদের ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দেওয়ার পরেও সমস্যার সমাধান হয়নি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। অবিলম্বে যদি এই বর্দার না খোলা হয় তাহলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিতে পারে, এমনকি, ভয়াবহ এই ক্ষতির দায় সামলাতে না পেরে ব্রয়লার ফার্মাররা আত্মহননের পথও বেছে নিতে পারে। রাজ্যের প্রাণী সম্পদ দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের সঙ্গে বৈঠকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ওয়েস্ট বেঙ্গল পোলট্রি ফেডারেশন।একই সঙ্গে তারা আসাম সরকারের বিরুদ্ধে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এদিনের বৈঠকে মন্ত্রী অবশ্য ভার্চুয়াল-এ উপস্থিত ছিলেন।

প্রাণী সম্পদ ভবনে বৈঠক

আজ ওয়েস্ট বেঙ্গল পোলট্রি ফেডারেশন প্রাণী সম্পদ ভবনে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের সঙ্গে এক জরুরী বৈঠকে বসেছিল। ফেডারেশনের সদস্য ছাড়াও দফতরের আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন।সেখানে তাদের নির্দিষ্ট একটা দাবি ছিল। আসাম সরকার ভারত সরকারের নির্দিষ্ট আইনকে অমান্য করে পশ্চিমবঙ্গের মুরগি আসামে যাওয়া বন্ধ করেছে ওয়েস্টার্ন বর্ডার দিয়ে। বিগত ৬ মার্চ তারা একটা অর্ডার বের করে।ওই অর্ডার বের করে সমস্ত নর্থ-ইস্টে মুরগি যাওয়া বন্ধ করেছে।

আসাম সরকারের ওই অর্ডার অবৈধ

ওয়েস্ট বেঙ্গল পোলট্রি ফেডারেশনের সভাপতি মদন মোহন মাইতি এদিন সংবাদ প্রভাকর টাইমসকে এক এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে এই বিষয়ে তাদের ক্ষোভের কথা প্রকাশ করেন। প্রথমেই তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভূমিকায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। এরপর তিনি বলেন-  “দেখুন, নর্থ-ইস্টে অনেকগুলি রাজ্য আছে। আসাম সরকার নিজের থেকে একটা অর্ডার দিয়ে অনেকগুলি রাজ্যের মুরগি যাওয়া বন্ধ করতে পারে না। কিন্তু তারা সেটা করেছে একটি অর্ডারের মাধ্যমে। আমরা মনে করি, এই অর্ডার অবৈধ। সেখানে বলা হয়েছে, ওয়েস্টার্ন বর্ডার দিয়ে মুরগি যাওয়া বন্ধ। উনি আসামের জন্য বন্ধ করতে পারেন। কিন্তু অন্য রাজ্যের ক্ষেত্রে মুরগি যাওয়া বন্ধ করতে পারেন না। নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মণিপুর, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ-এ কি করে বন্ধ করতে পারেন?”

এক একটা মুরগি পিছু ৫০-৬০টাকা ক্ষতি হয়েছে

এই খবর জানার পর আমরা আমাদের রাজ্য সরকারকে গোটা বিষয়টি জানিয়েছি। ওই বর্ডার দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসামে যায়। উত্তর-পূর্বের সমস্ত রাজ্যেও এই বর্ডার দিয়েই যেতে হয়। এখন ওই বর্ডার বন্ধ করে দিলে আর কোনও রাজ্যেই যাওয়া যাবে না। এই উদ্বেগ প্রকাশ করে মদনবাবু বলেন- “আমাদের রাজ্যে যা মুরগি চাষ হয় তার পরিমান ১৪০ শতাংশ। অর্থাৎ ৪০ শতাংশ বেশি চাষ হয়। এই ৪০ শতাংশের বেশির ভাগটাই নর্থ-ইস্টের রাজ্যগুলি আসাম সহ অন্যান্য রাজ্যে যায়। এই বার এই মুরগি যাওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় প্রতিটি ফার্মারের তার উৎপাদন খরচের ৫০ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে। এক একটা মুরগি পিছু ৫০-৬০টাকা ক্ষতি হয়েছে। এটা ৬ মার্চ থেকে চলছে। এই ক্ষতির পরিমাণ এখন ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। ৫ লক্ষ ফার্মার আছে উত্তরবঙ্গে।তারা সকলেই আজ চরম ক্ষতিগ্রস্ত।”

আসাম কি ফেডারেল সিস্টেমের বাইরে- প্রশ্ন ফেডারেশন সভাপতি মদনবাবুর

“আমাদের পশ্চিমবঙ্গ সরকার এটা তুলে নেবার জন্য আসাম সরকারকে অনুরোধ করে। তা না হওয়ায় আমাদের সরকার কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি লেখে। আমরাও কেন্দ্রীর সরকারকে খোলা চিঠি লিখি। কেন্দ্রীয় সরকার বিবেচনা করে। তারা লেখেন যে ওয়েস্ট বেঙ্গল পোলট্রি ফেডারেশন এবং পশ্চিমবঙ্গের সরকারের মাধ্যমে জানতে পেরেছে যে আসাম সরকার এই বর্ডারটা সিল করেছে। কিন্তু ২০১৯ সালে বার্ড ফ্লু কনটেইনমেন্ট অ্যাক্ট-এর সব সেকশনগুলি দিয়ে বলা হয়েছে, আসাম এটা সম্পূর্ণ বেআইনি করে করেছে।অবিলম্বে এটা তুলে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেটা তারা তোলেনি। ১২ এপ্রিল অর্ডার হয়ে গেছে। কিন্তু আসাম সরকার এই বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। এরকম চলতে থাকলে তো ফেডারেল সিস্টেম নষ্ট হয়ে যাবে। কেন্দ্রীয় সরকার আসামকে তুলে নিতে বলার পরও আসাম সরকার সেটা যদি না তোলে তাহলে তারা কি ফেডারেল সিস্টেমের বাইরে?” প্রশ্ন তুলেছেন মদন মোহন মাইতি।

ক্ষতি বন্ধ করতে বর্ডার খুলে দেওয়া হোক

এদিনের বৈঠকের পর মদনবাবু বলেন- “আমাদের প্রতিবাদ – এটা এখনই তুলে নেওয়া হোক। আমাদের রাজ্যে যে ক্ষতি হচ্ছে সেই ক্ষতিটাও বন্ধ হবে। আসামের মানুষও কম দামে মুরগি পাবে। আমাদের দেশের যে সিস্টেম যে জাতীয় সড়ক কোনওভাবে কেউ বন্ধ করতে পারে না। সিস্টেমটাও মেইন্টেইন হবে। আমি বুঝতে পারছি না যে ভারত সরকার কিভাবে এটাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। যে আসামের হাইওয়ে দিয়ে আমাদের মুরগি যাওয়া বন্ধ করে দেবে। যখন কেন্দ্রীয় সরকারের অর্ডার আছে বার্ডফ্লু বলতে গেলে এই সিস্টেমের মধ্য দিয়ে যেতে হবে, সেই সিস্টেমের কোনওটাই মানা হয়নি আসামে। তারপরেও এটা কেন করতে দেওয়া হল?”

কেন্দ্রীয় সরকারকে ন্যায্য বিচার করতে হবে, ব্রয়লার ফার্মারদের বাঁচাতে হবে

“আমার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছেও আবেদন- আসামকে বলা হোক, এই ভুল পথ থেকে সরে এসে বর্ডারটা খুলে দিতে। এতে পশ্চিমবঙ্গের ফার্মাররা বাঁচুক এবং আমাদের দেশের সংবিধান রক্ষিত হোক। এই যদি চলতে থাকে তাহলে আমাদের দেশের সিস্টেম ভেঙে যাবে। আমি এটাও বলতে চাই- আমাদের ফার্মাররা খুবই ক্ষিপ্ত হয়ে আছে, তবে কি হবে আমরা কিছুই জানি না। আমরা এবার আসামের সমস্ত পন্য পাঠানো বন্ধ করে দেব। তখন তারা মিলিটারি পাঠায় না কি পাঠায় আমরা সেটা দেখব। এসব চলতে পারে না। আমি সংবাদ মাধ্যমের কাছে বলব, এই ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি কে দেবে? কেন্দ্রীয় সরকারকে ন্যায্য বিচার করতে হবে। আসাম দিক পশ্চিমবঙ্গের ফার্মারদের ক্ষতির টাকা।কেন এই অন্যায় হবে? এই টাকা দিতেই হবে। আমরা ন্যায্য বিচার চাই। আমাদের একটাই কথা- ব্রয়লার ফার্মারদের বাঁচাতে হবে। তা না হলে তারা যদি আত্মহননের পথ বেছে নেয় সেটা ভাল হবে?”প্রশ্ন তুলেছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল পোলট্রি ফেডারেশন-এর সভাপতি মদন মোহন মাইতি।

Published on: এপ্রি ১৩, ২০২৩ @ ২৩:৪৯


শেয়ার করুন