বাংলার পর্যটন ও সরাসরি উড়ান চালু নিয়ে বড়সড় উদ্যোগ রাজ্যের, টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত

Main এসপিটি এক্সক্লুসিভ দেশ বিমান ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: মে ২১, ২০২২ @ ২৩:১২
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ২১ মে: বাংলার পর্যটনকে তুলে ধরার পাশাপাশি কলকাতা থেকে সরাসরি উড়ান চালুর বিষয়েও বড়সড় উদ্যোগ নিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। আজ নবান্নে কলকাতা এয়ারপোর্ট অথোরিটির প্রতিনিধি, দেশের প্রায় সমস্ত এয়ারলাইন কোম্পানি, ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসসিয়েশনের কর্তাব্যক্তিদের নিয়ে এক বৈঠক করেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের অর্থসচিব মনোজ পন্থ। অত্যন্ত ফলপ্রসু হয়েছে এদিনের বৈঠক।মনে করা হচ্ছে পর্যটনে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে নতুন দিশা দেখাতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ।

বৈঠকে যারা উপস্থিত ছিলেন

এদিনের বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা বিমানবন্দরের ডাইরেক্টর ও ম্যানেজার। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রায় সমস্ত এয়ারলাইন কোম্পানি, যেমন- এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগো, স্পাইসজেট, গো-এয়ার সহ আরও অনেকে। এদের পাশাপাশি বৈঠকে আমন্ত্রিত ছিলেন দেশের দুই বড় ট্রাভেল এজেন্টদের সংগঠন ট্রাভেল এজেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া বা টাফি’র পূর্ব ভারতের চেয়ারম্যান অনিল পাঞ্জাবি এবং ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া বা টাই-এর পূর্ব ভারতের চেয়ারম্যান মানব সোনি।

এদিনের আলোচনার মূল বিষয় ছিল মূলতঃ দুটি- ১) সরাসরি উড়ান পরিষেবা চালু করা এবং ২) বাংলার পর্যটনের প্রসার ঘটানো।এই আলোচনাকে ফলপ্রসূ করে তুলতে রাজ্যের মুখ্য সচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী এদিন আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন পর্যটন ও ভ্রমণের সঙ্গে যুক্ত অংশীদারদের। প্রতি ক্ষেত্রের কর্তাব্যক্তিরা এদিনের আলোচনায় রাজ্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন। রাজ্য সরকার তাদের সহযোগিতা চায়।তারা যাতে রাজ্যের এই উদ্যোগকে সফল করতে এগিয়ে আসে তাহলে বাংলা এক্ষেত্রেও এগিয়ে যাবে।

সরাসরি উড়ান পরিষেবা

কলকাতা থেকে সরাসরি উড়ান পরিষেবা চালু করার বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের মুখ্য সচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী এদিন কলকাতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সহ বিভিন্ন এয়ারলাইন কোম্পানির কর্তা ব্যক্তিদের জানিয়ে দেন তারা যেন এবার কলকাতা থেকে সরাসরি বিমান পরিষেবা চালু করার বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা নেন। আগে কলকাতা থেকে একাধিক দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য সরাসরি বিমান পরিষেবা চালু ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেইসব বিমান পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। তবে সেগুলি যাতে ধীরে ধীরে পুনরায় চালু করা হয় সেবিষয়ে এয়ারলাইন কোম্পানির কর্তাব্যক্তদের কাছে অনুরোধ জানান মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী।

টাফি’র পূর্বভারতের চেয়ারম্যান অনিল পাঞ্জাবি জানিয়েছেন- এদিনের বৈঠকে এই নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যাতে কলকাতা থেকে আগের মতো সরাসরি বিমান পরিষেবা চালু করা হয়। পুজোর আগেই যাতে ইউরোপ যাওয়ার উড়ান চালু করা হয় সেজন্য এয়ার ইন্ডিয়ার সঙ্গে কথা হয়েছে। তারাও জানিয়েছে যে এ বিষয়ে তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। তবে এই উড়ান সকালের দিকে থাকায় পূর্ব ভারতের একাধিক রাজ্যের মানুষের পক্ষে তা ধরার ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়। তাই এই উড়ান পরিষেবা যদি রাতের দিকে করা হয় সেক্ষেত্রে গুয়াহাটি কিংবা অন্য রাজ্যের মানুষের পক্ষে কলকাতায় এসে উড়ান ধরতে অসুবিধা হবে না। সেটাও যাতে করা যায় সেবিষয়েও কথা দিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ।

বাংলার পর্যটনের প্রসার ঘটানো

বাংলার পর্যটন সারা দেশের মধ্যে সেরা। শুধুমাত্র পরি্কল্পনার অভাবে এখানে পর্যটনের প্রসার হয়নি এতদিন। সেটা যাতে এখন হয়ে সেবিষয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে তৎপর হয়েছেন। তিনি চান পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন সারা বিশ্বের সামনে উন্মুক্ত হোক। আর তাই রাজ্যের মুখ্যসচিব এদিন পর্যটনের সঙ্গে উক্ত সমস্ত অংশীদারদের আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন। এ রাজ্যে একদিকে যেমন পাহাড় আছে, ঠিক তেমনই আছে সমুদ্র। আছে জঙ্গল। আছে সুন্দরবনের মতো বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ব-দ্বীপ।আছে ধর্মীয় স্থান। এসমস্ত স্থানকে তুলে ধরার পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সরকার। এজন্য সমস্ত ট্রাভেল এজেন্টদের সংঠনগুলিকে পাশে ডেকেছে।

টাফি’র অনিল পাঞ্জাবি জানান- “ এদিইন অত্যন্ত ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। রাজ্য সরকার খুব ভালো প্রয়াস নিয়েছে। তারা চাইছে বাংলার পর্যটন সেরা হয়ে উঠুক। আমাদের এখানে অনেক সুযোগ আছে। পর্যটনের অনেক সম্ভাবনা আছে। নতুন নতুন বহু জায়গা আছে। দেশের শুধু নয় বিদেশেও আমাদের বাংলার প্রতি আকর্ষণ আছে। তাই এশিয়ার নানা দেশে বাংলার পর্যটন নিয়ে রোড-শো-এর আয়োজন করার কথা বলেন মুখ্যসচিব। যাতে করে বাংলার পর্যটনের প্রসার ঘটানো সম্ভব হবে।

পর্যটনকে সুন্দর আর সুবিধাজনক করে তুলতে টাস্কফোর্স

এদিনের বৈঠকে সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত হল- বাংলার পর্যটনের প্রসারে টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত। অনিল পাঞ্জাবি বলেন- এদিন পর্যটন বিষয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠনেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী সাহেব এই বিষয়ে ট্রাভেল এজেন্টদের সংগঠনগুলিকে এগিয়ে আসতে বলেছেন। চার থেকে পাঁচ জনকে নিয়ে এই টাস্কফোর্স গঠন করার কথা বলা হয়েছে। তাদের কাজই হবে বাংলার পর্যটনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। পর্যটন বিষয়ে যাবতীয় সমস্ত কিছুই দেখবে এই টাস্কফোর্স। পর্যটনের পাশাপাশি এই টাস্কফোর্সের দায়িত্ব থাকবে রাজ্যের বিমানবন্দরগুলিতে উড়ান পরিষেবার বিষয়েও নজর দেওয়া। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে যাতে আগামিদিনে আরও বেশি করে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সরাসরি বিমান পরিষেবা চালু হয়ে সেদিকে সচেষ্ট হওয়া।সব মিলিয়ে এক পরিপূর্ণ পর্যটন ব্যবস্থা আনতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।

Published on: মে ২১, ২০২২ @ ২৩:১২


শেয়ার করুন