
Published on: ডিসে ১২, ২০২২ @ ২০:১১
Reporter: Aniruddha Pal
এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ১২ ডিসেম্বর: শ্রীসারদা মঠ ও রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের চতুর্থ অধ্যক্ষা প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণা মাতাজি রবিবার রাতে ১০২ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় প্রয়াত হয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন এবং রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্টানে চিকিৎসাধীন ছিলেন যেখানে তিনি ৫ ডিসেম্বর প্রবল জ্বর নিয়ে ভর্তি হন বলে একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।তাঁর প্রয়াণে গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে শনিবার থেকে, তাঁর অবস্থার অবনতি হয়েছিল যার পরে তাঁকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছিল।রবিবার রাত ১১টা ২৪ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ট্যুইট
সারদা মঠের অধ্যক্ষা প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণা মাতাজি-র প্রয়াণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।এক ট্যুইটে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন –“প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণা মাতাজি-র প্রতি আমি আমার শ্রদ্ধা জানাই। সারদা মঠ এবং রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের মাধ্যমে সমাজ সেবায় তাঁর অমূল্য অবদানের জন্য তিনি সর্বদা স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। মিশনের সকল পদাধিকারী এবং ভক্তবৃন্দের সাথে আমিও সমব্যথী। ওঁ শান্তি!”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ট্যুইট
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক ট্যুইট বার্তায় লিখেছেন-“শ্রী সারদা মঠ ও রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের চতুর্থ অধ্যক্ষা শ্রদ্ধেয় প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণা মাতাজির মৃত্যুর খবর শুনে আমি ভারী হৃদয় সহ্য করছি৷ আদেশের সমস্ত অনুসারী এবং ভক্তদের জন্য একটি অতুলনীয় ক্ষতি৷ তিনি যেন চির শান্তিতে বিশ্রাম পান।“
দক্ষিণেশ্বরে অবস্থিত শ্রীসারদা মঠ ও রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের চতুর্থ অধ্যক্ষা ছিলেন প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণা মাতাজি। ২০০৯ সালের ২ এপ্রিল তিনি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষা হন।
জীবনী
১৯২০ সালের অক্টোবর মাসে ব্রিটিশ ভারতের কলকাতা শহরে প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণার জন্ম হয়েছিল। গৌরীমার সারদেশ্বরী আশ্রমে হয়েছিল বিদ্যালয়ের শিক্ষা। ছোটবেলা থেকেই আধ্যাত্মিক বিষয়ের প্রতি আকৃষ্ট হতেন। যোগাযোগ ছিল রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সন্ন্যাসীদের সঙ্গে। প্রথম দিকে তিনি নার্সের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৫০ সালে তিনি টালিগঞ্জে রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের মাতৃভবনে নার্স হিসাবে যোগদান করেন।
১৯৫৩ সালে প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণা রামকৃষ্ণ পরমহংসের শিষ্য তথা রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের চতুর্থ অধ্যক্ষ স্বামী বিরজানন্দের কাছে দীক্ষা ও ব্রহ্মচর্য গ্রহণ করেন।১৯৫৯ সালে তিনি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের তৎকালীন অধ্যক্ষ স্বামী শঙ্করানন্দের কাছ থেকে সন্ন্যাস দীক্ষা গ্রহণ করেন। সেই বছরই তিনি শ্রসারদা মঠের ট্রাস্টি হন। সেই বছর শ্রীসারদা মঠ পৃথক প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি লাভ করেন। ১৯৬০ সালে তিনি রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের গভর্নিং বডির সদস্যপদ লাভক করেন। সেই সময় মাতৃভবন হাসপাতালটি ছিল ১০ শয্যাবিশিষ্ট একটি প্রসূতি কেন্দ্র। তিনি সেখানে নার্স হিসেবে কাজ করেন। পরে তিনি সেখানকার সেক্রেটারি হন। তার নেতৃত্বে হাসপাতালটি একটি ১০০ শয্যাবিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতালের রূপ নেয়।
১৯৯৮ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি শ্রীসারদা মঠ ও রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের সহ সংঘাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন। ২০০৩ সালের ১৩ এপ্রিল তিনি পানগোটের বেদান্ত সেন্টারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হন। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রব্রাজিকা শুদ্ধাপ্রাণার প্রয়াণের পর এপ্রিল মাসে তিনি মিশনের অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি বলেছিলেন, “সারা জীবন আমি সকলের সঙ্গে থাকতে চেষ্টা করেছি। সেটাই মা সারদা দেবী আমার থেকে চেয়েছিলেন… মায়ের আশীর্বাদ ছাড়া আমরা কিছুই নেই।”