Published on: জুন ১৪, ২০১৮ @ ১০:২৪
এসপিটি স্পোর্টস ডেস্কঃ ২০১৬ সালে ডুঙ্গাকে যখন বরখাস্ত করা হয় তখন ব্রাজিল ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপের যোগ্যতা নির্ণায়ক খেলায় কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। সেইসময় তারা কোপা আমেরিকা অভিযানে হতাশজনক পারফম্যান্স করে। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে হেরে তাদের অবস্থা তখন খুব খারাপ জায়গায়। এর মধ্যে দলের দায়িত্বে নিয়ে আসা হয় তিতেকে। দলেও পরিবর্তন করা হয়েছে। নিজের প্রত্যাশা পুরণ করতে তিতে ব্রাজিল দলকে তিলে তিলে তৈরি করেছে রাশিয়া বিশ্বকাপের জন্য। পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এবার তাই মাঠে নামবে ছয়বার বিশ্ব জয়ের লক্ষ্যে, অতীতের কালো দিনকে ভুলে তিতে রবিবার তাদের বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করতে চলেছে।খেলায় তিনি অন্য মাত্রা যোগ করেছেন যেখানে হয়তো ব্রাজিলিয়ান ফূটবলের সেই জাদু দেখা যাবে না, কিন্তু দলে দেখা যাবে এক সমন্বয়। এর পিছনে আছে পাঁচটি কারণ-
১. একটি সৎ সম্পর্ক
ব্রাজিলের খেলোয়াড়রা সবসময় যোগাযোগের দক্ষতা এবং সহজ-সরল আলাপ-আলোচনার জন্য তিতের প্রশংসা করার একটি দিক তৈরি করেছেন। সংলাপ ও নির্বিচারে একটি ধারণার উপর ভিত্তি করে তাঁর কর্তৃত্ব প্রকাশ পেয়েছে দলে।
তিতের দলে কেউই অন্যের সমালোচনার করেন না। এখানে সকলেই সমান। এর ফলে দল এক সুসঙ্ঘবদ্ধভাবে দলের মধ্যে এক ঐক্য তৈরি হয়েছে, যা ভাগ্যের চাপে এবং চাপের মুখে দলের সম্মান অর্জনে সাহায্য করেছে। অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সাথে তিনি এটি পূরণ করেছেন।যা কেবল সৎ সম্পর্ক-এর ফলেই সম্ভব।
২. মুক্ত পরিবেশ
একজন প্রশিক্ষক হিসেবে তিতের সবচেয়ে বড় গুন হল-তিনি দলে এক মুক্ত পরিবেশ ছড়িয়ে দিয়েছেন। নিজের ভাবনা-চিন্তাকেই শুধু গুরুত্ব দেননি তিনি খেলোয়াড় থেকে শুরু সাপোর্টিং স্টাফ সকলের মতামতকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। সাপোর্টিং স্টাফদের নিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন। সেখানকার প্রশিক্ষন দেখেছেন। দেখেছেন একাধিক ফুটবল ম্যাচ। যেখান থেকে তিনি এক স্বচ্ছ ধারণা নিয়েছেন। সেখানে দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলাদা আলাদ ভাবে কথা বলেছেন। তাদের মতামত নিয়েছেন। জানতে চেয়েছেন, কোন পজিশনে তারা নিজেদের স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন। এমনকী তিনি তাঁর দলের খেলোয়াড়দের ক্লাবের কোচেদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। অনবরত অনলাইন চ্যাটে খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন।
৩. উন্নত তৈলাক্ত ইউনিট
কথা বলা এক জিনিস; এটি করা আর এক জিনিস। বিশেষ করে যখন হাতে সময় কম এবং একটি সম্ভাব্য সঙ্কট চারপাশে প্রায় প্রতিটি কোণে লুকিয়ে আছে। তিতে তাঁর অনুশীলনে সিলিকাও পদ্ধতি নিয়ে এসেছেন। এতে তারকা খেলোয়াড়দের সামর্থ্যের দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। এখানে ব্যক্তিগত নৈপুন্যের চেয়ে দলগত ইউনিটের কার্যকারিতাকে জোরালো হয়ে উঠেছে। যেখানে নেইমারকে ছাড়াই ব্রাজিল ৩-০ গোলে রাশিয়াকে ১-০ গোলে জার্মানিকে হারিয়েছে বিশ্বকাপের আগে।যখন বলটি তাদের দখলে থাকে না তখন ব্রাজিল সামনে থেকে একজঙ্কে রেখে প্রতিপক্ষের ডিফেন্সে হানা দেয় এবং তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে যা প্রতিপক্ষের রক্ষনভাগকে দুর্বল করে দেয় আর তখন তারা তাদের আসল কাজ করে আসে। এভাবেই বর্তমান ব্রাজিল দল এক তৈলাক্ত মেশিনের ন্যায় কাজ করছে।
৪. সঠিক সিদ্ধান্ত
কুইটোতে ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে তাঁর প্র্যথম ম্যাচে জোরদার শুরু করেন। ২০১৬ সালে ফাইনালে অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন ১৯বছর বয়সী গ্যাব্রিয়েল জেসাস। যিনি ঐ ম্যাচে দুই গোল জকরেছিলেন। ব্রাজিল জিতেছিল ৩-০ গোলে। এখানেই শেষ নয়, তিতে তার দলের মিডফিল্ডে ক্যাসিমিরোকে রেখে ফল পান। যুবকদের সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি, তিতে কিছু বিখ্যাত নাম উল্লেখ করেছেন, তাদের মধ্যে মার্সেলো এবং থিয়াগো সিলভা উল্লেখযোগ্য।যাঁরা দুঙ্গার সময় দলে সেভাবে দাগ কাটতে পারেননি। পাসিং, ড্রিব্লিং ও জায়গা তৈরি করে নেওয়ার জন্য তিতের প্রশিক্ষণ পদ্ধতি এখন বেশ আলোড়ন ফেলেছে। খেলার সময় তাঁর সঠিক সিদ্ধান্ত ব্রাজিল দলকে একটা জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে।
৫. শক্ত ভিত
তিনি ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপের চূড়ান্ত ২৩ জনকে তালিকাভুক্ত করেন।যেখানে তিতে দেখিয়েছেন এই দলে এমন একজনও নেই যিনি নিজেকে বেছে নিয়েছেন। কোচ মূলত তার অভিযানের শুরুতে খেলোয়াড়দের শক্ত ভিতের উপর আটকে রেখেছেন। এটি এমন এক নীতি যা অনেকটা অনুভূতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে যে তিনি মাত্র কয়েক বছর ধরে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে একটি সিলিকাও পদ্ধতি তৈরি করেছেন। ব্রাজিলের ২৩ জনের স্কোয়াডের মধ্যে ১৫জন তিতের স্কোয়াডে স্থান পেয়েছেন।
Published on: জুন ১৪, ২০১৮ @ ১০:২৪