
মুরারী গুপ্ত দাস
Published on: সেপ্টে ১৭, ২০১৮ @ ১১:৪৭
এসপিটি প্রতিবেদন, মায়াপুরঃ জগৎশক্তি তিন প্রকার- পদ্মিনী, শ্বাশ্ত ও হ্লাদিনী। শ্রীকৃষ্ণ পদ্মিনী শক্তির মাধ্যমে জগৎ সৃষ্টি করেন। শ্বাশত শক্তির মাধ্যমে তিনি নিজেকে জানতে পারেন এবং জীবেরা শ্রীকৃষ্ণকে জা্নতে পারেন। হ্লাদিনী শক্তির মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণ আনন্দ উপভোগ করেন এবং জীবেরা কৃষ্ণপ্রেম আস্বাদন করেন। এই হ্লাদিনী শক্তির প্রতিমূর্তি হলেন শ্রীমতি রাধারানী।
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে বলা হয়েছে- ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গোলোক বৃন্দাবনে মাধবী লতার কুঞ্জে রত্নসিংহাসনে উপবেশন করে লীলাবিলাসের ইচ্ছা প্রকাশ করা মাত্রই তাঁর বাম অঙ্গ থেকে অপূর্ব রূপ মাধুরী সম্পন্না শ্রীমতি রাধারানী প্রকাশিত হলেন। তাঁর অঙ্গকান্তি ছিল তপ্তকাঞ্চন বর্ণ এবং তিনি সমস্ত দিব্য অলংকারে ভূষিতা ছিলেন। তখন শ্রীমতি রাধারানী নিজের কায়ব্যুহ থেকে অসংখ্য গোপী রূপে নিজেকে বিস্তার করে সর্বতোভাবে শ্রীকৃষ্ণের আনন্দ বিধান করলেন। এভাবেই শ্রীকৃষ্ণ হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতি রাধারানী ও গোপীকা গণের সঙ্গে মাধুর্য্যরসে নিত্য লীলাবিলাস করেন।
পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে, দেবকার্য সাধনে পৃথিবীর ভার অপহরণের জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ব্রহ্মার দিবসের মধ্যে একবার এই পৃথিবীতে অবতরণ করলে পরপুরুষের মুখ দর্শন করতে হবে। এই ভয়ের কথা শ্রীমতি রাধারানী জ্ঞাপন করলে, শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে অভয়প্রদান করেন।
যথা সময়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গোকুলে নন্দ-যশোদার পুত্ররূপে জন্মগ্রহণ করলেন এবং ভাদ্রমাসের শুক্লাষ্টমী তিথিতে মধ্যাহ্নে বিশাখা নক্ষত্রে সর্বশুভোদয় মুহূর্তে রাজা বৃষভানু-কীর্তিদার কন্যারূপে শ্রীমতি রাধারানী গোকুলের অন্তর্গত রাভেলে জন্মগ্রহণ করেন। রাধারানীর তপ্তকাঞ্চন বর্ণেরছটায় গৃহটি আলোকিত হল। পরপুরুষ দর্শনের ভয়ে যেহেতু তিনি চোখ বুজেছিলেন, তাই কন্যা সন্তানটিকে জন্মান্ধ মনে করে সকলে বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তখন নারদ মুনি এসে তাঁদের সন্দেহ দূর করে আশ্বাস প্রদান করেন যে, যথাসময়ে কন্যা চক্ষু ফিরে পাবেন।
রাধারানীর জন্মোৎসবে আমন্ত্রিত হয়ে শিশু-কৃষ্ণকে সঙ্গে নিয়ে নন্দ-যশোদা বৃষভানু রাজার গৃহে উপস্থিত হলেন। নন্দ মহারাজকে রাজা বৃষভানু আর যশোদামাকে কীর্তিদা যখন আলিঙ্গন করছিলেন, তখন কৃষ্ণ হামাগুড়ি দিয়ে রাধারানীর পালঙ্কের কাছে এসে তার চোখে হাত দিতেই রাধারানী কৃষ্ণের দিকে তাকান। এভাবেই উভয় উভয়কে দর্শন করে প্রেমানন্দে অভিভূত হয়ে পড়েন।
এদিকে সকলে শিশুদুটির কাছে এসে দেখেন রাধারানী চক্ষু উন্মীলন করে কৃষ্ণের দিকে তাকিয়ে আছেন। তখন আনন্দে রাজা বৃষভানু কৃষ্ণকে কোলে তুলে নিলেন এবং বললেন কৃষ্ণই রাধারানীর চক্ষু প্রদান করেছেন। তারপর মহানন্দে রাধারানীর জন্মোৎসব পালিত হয়।
Published on: সেপ্টে ১৭, ২০১৮ @ ১১:৪৭