সংবাদদাতা-বাপ্পা মণ্ডল ছবি-রামপ্রসাদ সাউ
Published on: ফেব্রু ২৫, ২০১৮ @ ০০:০৪
এসপিটি নিউজ, ঝাড়গ্রাম, ২৪ফেব্রুয়ারিঃ আর পাঁচজন শিশুর মতোই ওদের বেঁচে থাকার অধিকার আছে।কিন্তু ওরা সেইভাবে বেড়ে উঠছে। কিন্তু ওদের অনেকেই আজ অনাথ। কারও বাবা নেই, কারও বা মা। কারওবা বাবা-মা কেউই নেই। অডের ঠিকানা তাই অনাথ আশ্রম। ওরা চায় একটু ভালোবাসা, একটু আদর আর আন্তরিকতা। আজ যেটার বড়ই অভাব। আর সেই অভাব পূরণে এগিয়ে এলেন ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার রাঠোর অমিত কুমার ভরত। চিরাচরিত প্রথা থেকে বেরিয়ে এসে নিজের এক বছরের মেয়ের জন্মদিন পালন করলেন সেই ছোট্ট শিশুদের সঙ্গে।জৌলুষহীন এই ব্যতিক্রমী এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এক সচেতনতার বার্তা উঠে এল-আমাদের সমাজের অনাথ শিশুদের সঙ্গে যদি পরিবারের সন্তানের আনন্দের মুহূর্তটুকু ভাগ করে নিতে পারি তা হলে সেটা হবে এই শিশুগুলির কাছে এক প্রেরণা, তারা জানবে যে তাদের জন্যও অনেকে ভাবে।
ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার রাঠোর অমিত কুমার ভরত l তাঁর এক বছরের মেয়ে আশির জন্মদিন ছিল। আর সেই জন্মদিন পালন করলেন তিনি ঝাড়গ্রাম শহরের একটি অনাথ আশ্রমে। আর সেটা করলেন প্রচারের আড়ালে থেকেই। তাঁর নিজের কথায়, ভাল কাজ গোপনে করতে হয়।আর সেটাই তিনি করে দেখালেন। তবে শেষ পর্যন্ত আর সেটা গোপন থাকেনি। প্রচার মাধ্যমের হাতে সে অনুষ্ঠানের ছবি এসে পৌঁছয়। সেদিন সংবাদ মাধ্যম সেখানে পৌঁছতে না পারলেও সংবাদমাধ্যম পুলিশ সুপারের এই ভূমিকাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরেছে।
পুলিশ সুপার রাঠোর অমিত কুমার ভরত একেবারে সাদামাটা ভাবে অনাথ আশ্রমের ৩০ জন শিশু ও কিশেরদের নিয়ে মেয়ের জন্মদিনে আনন্দে মেতে ওঠেন। মাত্র মাস দুয়েক আগে ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার পদে দায়িত্বভার নিয়েছেন এই আইপিএস অফিসার।
অমিত কুমার পরিবারকে নিয়ে ঝাড়গ্রামে বসবাস করছেন সরকারি বাংলোয়। তার এক বছরের মেয়ে আশির জন্মদিন ছিল গত বৃহস্পতিবার ২২ ফেব্রুয়ারি। এই দিনটিতে মেয়ের জন্মদিন অনাথ আশ্রমে পালন করার সিদ্ধান্ত নেন পুলিশ সুপার।
ঝাড়গ্রাম শহরের বলরাম ডিহি এলাকায় মানব সেবা প্রতিষ্ঠান বলে একটি অনাথ আশ্রম রয়েছে। সেই অনাথ আশ্রম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। আশ্রম কতৃপক্ষ পুলিশ সুপারের অনুরোধে রাজি হয়ে যায়।পুলিশ সুপারের পরিবারের তরফ থেকে সেই অনাথ আশ্রমে বেলুন সাজিয়ে জন্মদিনের আয়োজন করা হয়।সেখানে শুধুমাত্র আমন্ত্রিত ছিল অনাথ আশ্রমের ৩০জন ছেলে জন্মেজয় রিয়াংবাসু চাকমা, নেত্র চাকমারা।
এই সমস্ত কিশোরগুলি উত্তর পূর্ব ভারতের মেঘালয়, মণিপুর, আসাম, মিজোরাম এইসব এলাকার দুঃস্থ পরিবারের ছেলেl পুলিশ সুপার একদম ব্যতিক্রমী পথে হেঁটে মেয়ের জন্মদিনে এই সমস্ত শিশু কিশোর হাতে উপহার তুলে দেন। বার্থ-ডে গান গেয়ে কেক কাটা হয়।পুলিশ সুপারের উদ্যোগে একটি ছোটখাট পার্টিরও আয়োজন করা হয়। এই সমস্ত বাচ্চাদের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী ও পরিবারের লোকেরা খাওয়া-দাওয়া করেন।
মেয়ের জন্মদিনে পুলিশ সুপার এই অনাথ আশ্রমকে সাহায্য করার আশ্বাস দেন। পাশাপাশি তিনি অনাথ আশ্রমের শিশুদের হাতে তুলে দেন নানা উপহার।অনাথ আশ্রমের কতৃপক্ষের হাতে তুলে দেন শিশুদের খাওয়া-দাওয়ার জন্য বেশ কিছু বাসনপত্রও।
অনাথ আশ্রমের সম্পাদক অমলেন্দু দাস বলেন, পুলিশ সুপারের এই মহানুভবতায় আমরা মুগ্ধ আমরা ভাবতেই পারিনি কোনদিন এরকম হবে। অনাথ শিশুগুলির বক্তব্য আমরা কোনদিন এরকম করে আনন্দ করিনি ভীষন ভাল লাগছে।
পুলিশ সুপারের এই অনুষ্ঠানে কিন্তু কোনও বড় মাপের প্রশাসনিক আধিকারিক, কোন ব্যবসায়ী , কোন রাজনৈতিক নেতৃত্ব কেউই আমন্ত্রিত ছিলেন না। শুধুমাত্র আমন্ত্রিত তালিকায় ছিলেন হাতে গোনা তিনজন পুলিশ অফিসার ঝাড়গ্রামের আই সি তানাজী দাস, ঝাড়গ্রামের এসডিপিও দীপক সরকার ও ঝাড়গ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিশ্বজিত মাহাত।
Published on: ফেব্রু ২৫, ২০১৮ @ ০০:০৪