
৮ অক্টোবর ক্যান্সার থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের একটি অনুপ্রেরণামূলক বেঁচে থাকাদের সম্মেলনের আয়োজন করে মণিপাল হাসপাতাল, ইএমবাইপাস
“এই বছর, আমাদের প্রচেষ্টা হল রোগীদের সাধারণত যে ভয় এবং অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যেতে হয় তা দূর করা, বয়স নির্বিশেষে স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা দেওয়া যে কারও জন্য দ্রুত, সহজ পরীক্ষা করা।- ডাঃ অরুণাভ রায়
Published on: অক্টো ৯, ২০২৫ at ১৫:৫১
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ৯ অক্টোবর : বিষয়টি কয়েক বছর আগেও কল্পনা করা যেত না। আর আজ তা শুধু বাস্তবই হয়ে ওঠেনি , বহু মহিলা যারা স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত নানা ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েও বেঁচে ওঠার রসদ পাচ্ছেন। ভরসা পাচ্ছেন। আর তাদের এই ভরসা বেঁচে ওঠার নয়া দিশা দেখাচ্ছে কলকাতায় ইএম বাইপাসে অবস্থিত মণিপাল হাসপাতাল। আর এই অসম্ভব কাজকে সম্ভব করে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হওয়া মহিলাদের স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকার মনোবল যুগিয়ে নতুন দিশা দেখিয়ে চলেছেন ইএম বাইপাসের মণিপাল হাসপাতালের গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি অ্যান্ড উইমেন ক্যান্সার ইনিশিয়েটিভ বিভাগের ইউনিট প্রধান এবং রোবোটিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ এবং প্রশিক্ষক ডাঃ অরুণাভ রায় ও তাঁর গোটা টিম। সারা দেশ সেপ্টেম্বর মাসে গাইনোকোলজিক্যাল ক্যান্সার সচেতনতা মাস পালন করেছে। তারই প্রেক্ষাপটে, ইএম বাইপাসের মণিপাল হাসপাতাল, বুধবার, ৮ অক্টোবর ক্যান্সার থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের একটি অনুপ্রেরণামূলক বেঁচে থাকাদের সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানে প্রায় ২৫ জন ক্যান্সার সারভাইভার তাদের অনুপ্রেরণামূলক অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে এগিয়ে এসেছিলেন।
স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত ক্যান্সার সচেতনতায় এ বছরের থিম ‘কলঙ্কের বিরুদ্ধে সরব হন’
এই বছরের থিম ছিল #GOAganistStigma অর্থাৎ ‘কলঙ্কের বিরুদ্ধে যান’ গাইনোকোলজিক্যাল ক্যান্সার মোকাবেলায় বৃহত্তর প্রচেষ্টার উপর আলোকপাত করেছে। এদিনের অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইএম বাইপাস মণিপাল হাসপাতালের কনসালটেন্ট, গাইনোকোলজিক্যাল অনকো-সার্জারি কনসালটেন্ট ডাঃ নেহা আগরওয়াল এবং গাইনোকোলজিক্যাল অনকো-সার্জারি কনসালটেন্ট ডাঃ অরুণাশিস মল্লিক। তাঁরা সাধারণ মিথগুলি খন্ডন করেছেন, প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করেছেন এবং গাইনোকোলজিক্যাল ক্যান্সারের প্রাথমিক সতর্কতা লক্ষণগুলি ভাগ করে নিয়েছেন। একজন ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষকে সমাজে কত্রকমের অসুবিধার মুখোমুখি হতে হয় , কিভাবে তাদের তা সামাল দিতে হয়, কিভাবে নানা প্রতিবন্ধকরাত সামনে পড়তে হয় এদিনের সভায় সেটাই উঠে এসেছে। বেঁচে ওঠা মানুষগুলি তাদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন।
একই সঙ্গে মণিপাল হাসপাতালের গাইনোকোলজিক্যাল ক্যান্সার বিভাগের সমস্ত ডাক্তার ও স্টাফদের সহযোগিতার কথা তুলে ধরেছেন। তাদের সহযোগিতা না হলে আজ তারা যে এভাবে সুস্থ হয়ে ঊঠতে পারতেন না সেটাও তারা জানিয়েছেন অকপটে। এই অনুষ্ঠান এবং ইন্টারেক্টিভ সেশনে অংশগ্রহণকারীদের ক্লিনিক্যালি ভিত্তিক বিষয়গুলি সম্পর্কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে ছিল ক্যান্সারের লক্ষণগুলি সংজ্ঞায়িত করা থেকে শুরু করে সামগ্রিক সুস্থতার জন্য তাদের ব্যবস্থাপনার প্রযুক্তিগত দিকগুলি বোঝা।
ক্যান্সারে আক্রান্ত মহিলাদের চিকিৎসার জন্য রোবোটিক এবং ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতির উপর জোর দিয়েছে মণিপাল হাসপাতাল
এই বষয়ে উপ্সথাপন করার সময়, ডাঃ অরুণাভ রায় প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়ের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, “এই বছর, আমাদের প্রচেষ্টা হল রোগীদের সাধারণত যে ভয় এবং অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যেতে হয় তা দূর করা, বয়স নির্বিশেষে স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা দেওয়া যে কারও জন্য দ্রুত, সহজ পরীক্ষা করা। মণিপাল হাসপাতাল কলকাতায়, আমরা এখন ক্যান্সারে আক্রান্ত মহিলাদের চিকিৎসার জন্য রোবোটিক এবং ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতির উপর আরও বেশি মনোযোগ দিচ্ছি, যার লক্ষ্য কেবল কার্যকর চিকিৎসা নয় বরং দ্রুত আরোগ্য এবং তাদের প্রিয় জীবনে ফিরে আসা। আমাদের দল এই মিথকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে যে ক্যান্সার নির্ণয় মৃত্যুদণ্ড। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে, নিয়মিত স্ক্রিনিং, সময়োপযোগী হস্তক্ষেপ এবং সহানুভূতিশীল যত্নের মাধ্যমে ক্যান্সার নিরাময় করা সম্ভব। আমাদের নিবেদিতপ্রাণ পেশাদারদের দল 24×7 যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে, রোগীদের এবং তাদের পরিবারকে যাত্রার প্রতিটি ধাপে নিয়ে যেতে 24×7 উপস্থিত রয়েছে।”
স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা আমাদের সকলেরই উচিত-ডাঃ অরুণাভ রায়
সম্মিলিত সচেতনতার গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে ডা. রায় আরও বলেন, “স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা আমাদের সকলেরই উচিত। ঘন ঘন চেক-আপ এবং স্ক্রিনিংয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে আমাদের নিজেদের এবং আমাদের প্রিয়জনদের সংবেদনশীল করতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় কেবল বেঁচে থাকার হারকেই উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে না বরং রোগীদের জীবনযাত্রার মানও উন্নত করে, তাদের আশা, শক্তি এবং পূর্ণ জীবনযাপনের সুযোগ প্রদান করে। প্রতিরোধ, যত্ন এবং চিকিৎসা উন্নত করার জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে, যাতে কাউকে একা ক্যান্সারে ভুগতে না হয়।”
মণিপাল হাসপাতালকে দ্বিতীয় বাড়ির মতো মনে হয়েছিল- মিঠু রায়
মিসেস ইন্ডিয়ার প্রাক্তন অংশগ্রহণকারী, ৪৭ বছর বয়সী মহিলা রোগী, একজন গৃহিণী, মিঠু রায়, শেয়ার করেছেন তার নিজের অভিজ্ঞতার কথা। তিনি বলেন, “ক্যান্সার এমন একটি শব্দ যা আপনাকে হৃদয়ে নাড়া দিতে পারে। যখন আমার রোগ নির্ণয় করা হয়েছিল, তখন আমি সবচেয়ে খারাপ ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু সেরা চিকিৎসা, সঠিক নির্দেশনা এবং আমার স্বামী, ডাক্তার, হাসপাতাল কর্মী এবং পরিবারের সহায়তায়, আমি আশা খুঁজে পেয়েছিলাম। আমার যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৭ ঘন্টার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে, এবং এর পরে ঘুম থেকে উঠে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমার কাছে এমন শক্তি আছে যা আমি কখনও জানতাম না। তাদের যত্ন হাসপাতালকে দ্বিতীয় বাড়ির মতো মনে হয়েছিল। আমি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আমার শেষ কেমোথেরাপি সম্পন্ন করেছি। আমার পরিবারের উৎসাহ আমাকে রোগীর চেয়ার ছেড়ে মঞ্চে ওঠার সাহস দিয়েছে। এখনও সুস্থ হওয়ার সময়, আমাকে মিসেস ইন্ডিয়ার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছিল “
একি সঙ্গে তিনি জনপ্রিয় বিশিষ্ট নাট্যকার চন্দন সেনের পরিচালিত একটি নাটক, ‘রঙ্গব্যাঙ্গ’ তে অভিনয় করার সৌভাগ্য সকলের সাথে শেয়ার করেন। সেই প্রসঙ্গ সামনে এনে তিনি বলেন- “এই যাত্রা আমাকে শিখিয়েছে যে সত্যিকারের সাহস ভেতর থেকে আসে, নিজেকে ভালোবাসা, নিজের উপর বিশ্বাস রাখা এবং জীবনকে পুরোপুরি আলিঙ্গন করা। ক্যান্সার আপনাকে পরীক্ষা করতে পারে, কিন্তু এটি কখনই আপনাকে সংজ্ঞায়িত করতে পারে না।”
এই যাত্রা আমাকে শক্তি, ধৈর্য এবং বিশ্বাসের প্রকৃত অর্থ শিখিয়েছে- শিল্পী মুখার্জি
৪৮ বছর বয়সী এক মহিলা রোগী শিল্পী মুখার্জি তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, “একজন শিক্ষিকা হিসেবে আমি সবসময় বিশ্বাস করি যে প্রতিটি চ্যালেঞ্জই একটি শিক্ষা বহন করে। যখন আমার প্রথম ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে, তখন আমার মেয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে এবং আমি ডাক্তারদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে আমি কি তাকে বেড়ে উঠতে দেখার জন্য যথেষ্ট দিন বাঁচব? আজ, সে দশম শ্রেণীতে পড়ে, এবং আমি এখনও এখানে আছি, আমার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। এই যাত্রা আমাকে শক্তি, ধৈর্য এবং বিশ্বাসের প্রকৃত অর্থ শিখিয়েছে। আমি যে ব্যতিক্রমী যত্ন পেয়েছি তার জন্য ধন্যবাদ, আমি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছি এবং ইতিবাচকতা এবং উদ্দেশ্য নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে উঠেছি। প্রতিবার যখন আমি সুস্থ হই, আমি নিজেকে মনে করিয়ে দিই: আমি লড়াই করছিলাম, এখনও লড়াই করছি এবং লড়াই চালিয়ে যাব।”
Published on: অক্টো ৯, ২০২৫ at ১৫:৫১