বামাক্ষ্যাপা বাবার আবির্ভাব দিবস উদযাপন তারাপীঠে

Main দেশ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: মার্চ ৯, ২০২৪ at ১৫:০৭
প্রতিবেদনঃ প্রবোধ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

এসপিটি নিউজ, তারাপীঠ, ৯ মার্চ: আজ তারাপীঠে তারামায়ের সাধক বামাক্ষ্যাপা বাবার ১৮৬তম শুভ আবির্ভাবের দিবস মহাসমারোহে পালিত হচ্ছে। শিব চতুর্দশীতে বামক্ষ্যাপা বাবার এই শুভ আবির্ভাব দিবস ঘিরে গোটা তারাপীঠ এক উৎসবের চেহারা নিয়েছে। ইতিমধ্যেই বহু মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

এই আত্মভোলা সাধক তারাপীঠের ২ কিলোমিটার দূরে আটলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম সর্বানন্দ চট্টোপাধ্যায়। মায়ের নাম রাজকুমারী দেবী। দুই ভাই ও চার বোন ছিলেন। বাবা ছিলেন আধ্যাত্মিক ভাব সম্পন্ন একজন সাত্বিক ব্রাহ্মণ। তিনি তাঁর দুই সন্তান বামাচরণ ও রামচরণকে কাঁধে করে তারাপীঠ মহাশ্মশানে ও মন্দিরে নিয়ে আসতেন। পথে আসার সময় বাবা সর্বানন্দ বেহালায় সুর চড়াতেন। দুই ভাই বাবার বেহালার সুরে গান ধরতেন। সে এক মনোরম দৃশ্য ছিল।  যা দেখে ও শুনে সকলে মুগ্ধ হয়ে পড়তেন। সেই সময় থেকে বামাচরণের মন তারামা অন্ত হয়ে পড়ে । তারপর থেকে বামাচরণের যাতায়াত শুরু হয় তারাপীঠে।

বাবার মৃত্যুর পর তিনি মহাশ্মশানে চলে আসেন। মায়ের অনুমোদনে ব্রজবাসী সাধক কৈলাশপতিবাবার কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেন। দীক্ষা মন্ত্র ‘হুম’ তিন লক্ষ বার জপ করে তিনি সিদ্ধ হন। সিদ্ধ হওয়ার সময় তাঁর বয়স ছিল ৩০ বছর। তখন থেকে বামাচরণ হন বামদেব। তখন থেকেই তাকে বামাক্ষাপা বলতে শুরু করেন সকলে। তিনি অলৌকিক শক্তির অধিকারী ছিলেন। শোনা যায়, মা রাজকুমারী গত হওয়ার পর মায়ের শাদ্ধানুষ্ঠানে বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিলে তিনি জয় মা তারা নাম নিয়ে গণ্ডি টেনে বৃষ্টি রোধ করেছিলেন। বহু আর্ত ও পীড়িত মানুষ তাঁর কাছে এলে আশীর্বাদ দিয়ে তাদের সুস্থ করে তুলতেন। সদ্য বিবাহিত অল্প বয়স্কা মেয়েকে স্বামী-পুত্র লাভে বর দিয়ে পুনরায় বিবাহ দিয়ে সমাজ সংস্কারের ভূমিকা পালন করেন।

শ্মশানে থাকা বামাক্ষ্যাপার ছায়াসঙ্গী কুষ্ঠ রোগী নন্দ দায়ের হাতে জল খেয়ে অস্পৃশ্যতা দূরীকরণের মনোভাব দূর করেন। জাতি-ধর্ম-বর্ন নির্বিশেষে সকল মানুষকে আশীর্বাদ প্রদান করতেন। মানুষ ছাড়া ইতর প্রাণীদেরও ভালোবাসতেন। সেজন্য একপাতে তিনি কুকুর ও বিড়ালের সাথে আহার করতেও দ্বিধা করতেন না। সমসাময়িক সাধক রামকৃষ্ণের শিব জ্ঞানে জীব সেবার প্রতিধ্বনি তাঁর মধ্যেও লক্ষ্য করা যায়। সমসাময়িক সাধকদের মধ্যে মোক্ষদানন্দ বাবা, কৈলাশপতি  বাবা, নিগমানন্দ বাবা, অঘোরী বাবা, পাহাড়ি বাবা, তারা ক্ষাপা তাদের সাথে থেকেছেন এবং এদের অনেকেই তাঁর আশীর্বাদ পেয়ে ধন্য হয়েছেন।

সাধক রামকৃষ্ণের মতো তিনিও ভাব ত্মনয়তায় বিভোর থাকতেন।

রামকৃষ্ণ দেব ও বামাক্ষ্যাপা একই অভিন্ন আত্মা। বর্তমানে প্রচারের জগতে বামাক্ষ্যাপা বাবা এসেছেন তাঁড় মোহীমা এবং মানুষের কল্যাণকারী ভূমিকা সর্বজনবিদিত। বামদেবকে কেন্দ্র করে বহু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তারাপীঠে। তারাপীঠ মন্দিরে বামাক্ষ্যাপার মন্দির আছে। নিত্য সেখানে বাবার পুও ও ভোগ হয়। এছাড়া বামদেব সঙ্ঘ, বামা নিকেতন, বামা নিশন প্রতিষ্ঠা হয়ে তাঁর মাহাত্মকে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। আটলা গেম জন্মভিতেতে জন্ম সমারোহ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ এইদিনে প্রসাদ গ্রহণ করবেন। মন্দিরগুলি রাতে দীপালোকে সেজে উঠবে। জয় তারা জয় বাম ধ্বনির মধ্য দিয়ে মানুষ বামদেবের জন্ম উৎসব পালন করে চলেছে।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাঁর সহজ-সরল জীবন ও মানুষকে জীবনের উত্তোরনের পথ দেখিয়ে এক সুন্দর জীবনবোধের নিদর্শন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন, যার প্রাসঙ্গিকতা আজও সমানভাবে প্রয়োজন। আমরা যদি বামাক্ষ্যাপা বাবার সহজ-সরল জীবনকে অনুসরণ করতে পারি তাহলে জাতি সুখসমৃদ্ধ হয়ে উঠবে। সাধক রামকৃষ্ণের মতো বামদেব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং শুভবোধের চিন্তাধারাগুলি প্রচার ও প্রসার হয় তাহলে বামদেবের জন্মদিনের প্রাসঙ্গিকতা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। লেখক পরিচিতিঃ ‘তীর্থভূমি তারাপীঠ’ গ্রন্থের লেখক

Published on: মার্চ ৯, ২০২৪ at ১৫:০৭


শেয়ার করুন