মৃতপ্রায় গ্রাম আজ পুতুলের উপত্যকা: জাপানের এই গ্রামে ঢুকলে ভয় লাগবেই

বিদেশ
শেয়ার করুন

Published on: এপ্রি ১৭, ২০১৯ @ ২০:৫০

এসপিটি নিউজ ডেস্কঃ এ যেন সত্যি হলিউডের এক হরর ফিল্ম!রীতিমতো গা ছমছম ভাব। যে গ্রামে মানুষ কম পুতুল বেশি। স্কুলে পুতুল, রাস্তায় পুতু, দোকানে পুতুল। পুতুলই যেন সেখানে কথা বলছে, হাসছে, চলে-ফিরে বেড়াচ্ছে।পশ্চিম জাপানের পাহাড়ের গা ঘেঁষে থাকা নাগোরো নামে এক ক্ষুদ্র গ্রাম। যেখানে বাতাস নির্জন রাস্তায় বয়ে চলে, জীবিত আত্মাকে দেখতে পাওয়া যায় না।পথ চলতে গিয়ে কাউকে দেখলে চমকে না উঠে পারবেন না। কারণ, আপনি যে এসে পড়েছেন পুতুলের উপত্যকায়।

আইয়ানোর প্রয়াস

1) যেখানে পুতুলের সংখ্যা অনেক। আর সেই পুতুল জীবন্ত।জাপানের এমন অনেক গ্রাম আছে যেখানে জনমানবহীন। জনসংখ্যা খুবই কম।ধ্বংসাবশেষের মধ্যেই পড়ে আছে। প্রাণহীন সেইসব গ্রামগুলি যেন আজও ভয়ের স্মৃতি তাড়া করে নিয়ে চলেছে। টোকিওর দক্ষিণ-পশ্চিমে 550 কিলোমিটার (400 মাইল) দূরে অবস্থিত নাগোরো গ্রামটি। এই গ্রামের বাসিন্দা সুকিমি আইয়ানো রাস্তায় নিজের চেষ্টায় মৃত গ্রামটিকে জীবন্ত করে তুলতে পুতুলের উপত্যকা হিসাবে গড়ে তুলেছেন।

মাত্র ২৭জনের বাস

2) 69 বছর বয়সী পুতুল নির্মাতা তার বাড়িতে একটি সাক্ষাত্কারে সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেন, “এই গ্রামে কেবল 27 জনই বসবাস করে কিন্তু ভয়ঙ্কর সংখ্যা দশগুণ হয়।”

কিভাবে তিনি এই কাজ শুরু করেন, সেকথা বলতে গিয়ে আইয়ানো জানান-16 বছর আগে তার বাগানে বীজ বপনকারী পাখিদের খেতে বাধা দেওয়ার জন্য এক কৌশল অবলম্বন করেন। তিনি তার বাবার পোশাক পরা একটি পুতুল তৈরি করেছিলেন।আইয়ানো বলেন-“বাগানে সেটি দেখে একজন কর্মী মনে করতেন যে ওটি  আমার বাবা ছিল … সে হ্যালো বলেছিল কিন্তু সেটা তার কাছে এক ভীতিকর পরিস্থিতি ছিল। আমার কাছে তা মজার ছিল।”

এরপর তিনি ধীরে ধীরে লাইফ সাইজ পুতুল, কাঠের লাঠি দিয়ে তৈরি, সংবাদপত্রগুলি চামড়া পূরণের জন্য, চামড়া জন্য ইলাস্টিক কাপড় এবং চুলের জন্য উল বোনা শুরু করেন। এভাবে একের পর এক পুতুল তৈরি করতে থাকেন।

কিন্তু পুতুলের মধ্যে জীবনের স্পন্দন আনা তা কি কখনও সম্ভব? এজন্য তিনি একটি মেক আপ ব্রাশ দিয়ে ঠোঁট এবং সেই ঠোঁটের গোলাপী রঙ করেন। যা দেখে অনেকেরই মনে হবে এ যেন সত্যিই এক জীবন্ত কেউ।

স্কুলে চলছে পুতুল শিশুদের পড়াশুনো

3) মৃত গ্রামটিতে প্রাণের স্পন্দন ফিয়ে আনতে এরপর আইয়ানো স্থানীয় এক স্কুলে ১২টি ছোট শিশু আকারের পুতুল গড়ে ক্লাস রুমের ভিতর ডেস্কে বসিয়ে দেন। আচমকা সেখানে দেখলে মনে হবে যেন স্কুল চলছে। কিন্তু এইক স্কুল সাত বছর আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। নির্জন স্থানে এই স্কুলটিতে যেন পুতুলবেশি কোনও অশরীরি চলে-ফিরে বেড়ায়। আইয়ানো বলছিলেন- “আরে, কে স্কুলে পড়বে বলুন তো! এখানে আজ তো কোনও শিশুই নেই। এখানে সবচেয়ে কম বয়সী ব্যক্তি হলেন 55 বছর বয়সী।”

আপনি কোথায় যাবেন? রাস্তা দিয়ে হাঁটবেন! মুদির দোকানে যাবেন! যেতেই পারেন। কিন্তু ভুলেও কিছু চাইবেন না। তাহলে কিন্তু নিরাশ হতে হবে। আবার চমকও অপেক্ষা করে থাকতে পারে আপনার জন্য। যা ভয়ের সঞ্চার ঘটাতে পারে আপনার ভিতর। কারণ, মুদির দোকানে বসে থাকা মানুষটি আসলে এক পুতুল।

৩০০ মানুষের বাস ছিল

4) “এই নাগোরো গ্রামটি এমন ছিল না। এখানে আগে ৩০০ মানুষের বাস ছিল। গ্রামে বনজ নির্মাণ শিল্প এবং বাঁধ নির্মাণের কাজে মানুষ নিজেদের ব্যস্ত রাখতেন। গ্রামে সেইসসময় এক অফুরন্ত প্রাণ ছিল। আজ সেই গ্রাম হয়ে উঠছে একেবারে ভুতূড়ে।” বলছিলেন আইয়ানো।

তিনি বলেন- “এই গ্রাম থেকে মানুষ ধীরে ধীরে চলে গেছে … এই গ্রাম এখন একাকী-নির্জন।” আজ আমি এখানে থেকে পুতুল গড়ে চলি।এটাই আমার নেশা।”তিনি বলতে থাকেন- “নাগোরো জাপানের এক দুর্ভোগের নাম। কারণ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে কম জনসংখ্যা, কম, জন্মের হার এবং উচ্চ জীবনের প্রত্যাশার সাথে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।”

জাপান বিশ্বের প্রথম “অতি বয়স্ক” দেশ

 5) জাপান বিশ্বের প্রথম “অতি বয়স্ক” দেশ হয়ে উঠছে, যার অর্থ 28 শতাংশ মানুষ 65 বছর বা তার বেশি বয়সের।সর্বশেষ সরকারি রিপোর্ট দেখায় যে 127 মিলিয়ন জনসংখ্যার 27.7 শতাংশ – চারজনের মধ্যে একজন – 65 বছর বা তার বেশি বয়সী এবং ২050 সালে এই সংখ্যা 37.7 শতাংশে উন্নীত হওয়ার আশা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জাপানের প্রায় 1,700 পুরসভার 40 শতাংশকে “অব্যবহৃত” হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, যখন বন ও কৃষি প্রধান অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ছিল, তখন অনেক জাপানী গ্রামগুলিতে বসবাস করতেন। কিন্তু জাপান রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অর্থনীতিবিদ তাকুমি ফুজিনমি বলেন, 1960 এর দশকে তরুণরা টোকিওর উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন।তিনি বলেন, “টোকিওতেও অর্থনীতির ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ঘটেছিল। সেটি একমাত্র জায়গা যেখানে লোকেরা অর্থ উপার্জন করতে পারে, তাই অনেক তরুণ সেখানে চলে যায়”।”জনসংখ্যা মোকাবেলা করার জন্য, আমাদের জনবহুল এলাকার মানুষদের সেইসব গ্রামগুলিতে যেতে হবে। কিন্তু জনসংখ্যা পুনরুদ্ধার করা অত্যন্ত কঠিন”, বলেন ফুজিনমি।

আবার জেগে উঠবে নাগোরো-আশাবাদী আইয়ানো

6) “পরিবর্তে, গ্রামীণ এলাকায় তরুণদের জন্য আয় বাড়ানো বা কাজের পরিবেশ উন্নত করা গুরুত্বপূর্ণ।””আমাদের এমন সম্প্রদায়গুলি তৈরি করতে হবে যেখানে অল্পবয়সীরা দীর্ঘমেয়াদী জীবনযাপন করতে পারে”, ফুজিনামি বলেন, সরানোর জন্য তাদের অর্থ প্রদান যথেষ্ট নয়।

“আমি আশা করি নাগোরো আবার জীবন্ত হয়ে উঠবে এবং অনেক লোক এখানে দর্শনের জন্য আসবেন।” বলেন আইয়ানো।

তিনি বলেন- “আমি জানি না নাগোরো 10 বা ২0 বছরে কেমন দেখতে হবে … কিন্তু আমি পুতুল তৈরি করে যাবো।”

Published on: এপ্রি ১৭, ২০১৯ @ ২০:৫০

 

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

9 + 1 =